English

29.2 C
Dhaka
শুক্রবার, জুলাই ৪, ২০২৫
- Advertisement -

‘তোমারে লেগেছে এতো যে ভালো চাঁদ বুঝি তা জানে..’ গুডবাই–‘ কেজি ভাই

- Advertisements -

সালেম সুলেরী: কথা ছিলো আসছে পয়লা জুলাই হবে ৮৫ তম জন্মোৎসব। ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে তা আয়োজনের প্রস্তুতিও চলছিলো। নিউইয়র্ক থেকে অংশ নেবো বলে কথাও দিয়েছিলাম। কিন্তু ৫২ দিন আগেই পাখি গেলো চিরদিনের জন্যে উড়ে। গান-কবিতার মধ্যমণি কেজি ভাই– জানালেন গুডবাই..।

চিরগানের অমর স্রষ্টা কেজি মোস্তফা। বয়েসে কবি আল মাহমুদের এক বছরের কনিষ্ঠ। জন্ম ১৯৩৭-এর পয়লা জুলাই, নোয়াখালির বেগমগঞ্জে। কিংবদন্তী কবি আল মাহমুদ গান লেখেন নি। বলতেন, কেজি যা লিখে গেছে সেটিই কাফি।

‘তোমারে লেগেছে এতো যে ভালো,
চাঁদ বুঝি তা জানে’– ক’জন পারে এভাবে গড়তে!

জ্বি, এহতেশাম পরিচালিত ‘রাজধানীর বুকে’ ছবির গান। সাদাকালো যুগটিকে মহারঙিন করে রেখেছে। সুর করেছিলেন আরেক কিংবদন্তী রবীন ঘোষ। যাঁর খ্যাতিমান স্ত্রী শবমম ছিলেন নায়িকা। আর ঠোঁট মিলিয়েছিলেন বলিষ্ঠ নায়ক রহমান। গানটি গাইতে ভারত থেকে ঢাকা আসেন তালাত মাহমুদ। উপমহাদেশখ্যাত শিল্পীর সঙ্গী ছিলেন বশীর আহমেদ। ভারতবাংলার সেই কন্ঠপ্রতিভা ঢাকাতেই থেকে যান। গেয়েছিলেন– অনেক সাধের ময়না আমার বাঁধন কেটে যায়…।

মায়ার শেকল পরানো ছিলো কেজি ভাই-এর পায়েও। উত্তরপ্রজন্ম তাঁকে অবিরাম ভালোবাসা দিয়ে গেছে। ২০১৮-তে শেষ পেয়েছিলাম ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে। আমি এসেছি শুনে ভালোবাসার ডালি নিয়ে ছুটে এলেন। আশির দশক থেকে সেই যে ভালোবাসার বন্ধন।বয়েস হলেও দেখলাম স্মৃতিবন্ধনকে ভোলেন নি। চকচক করে উঠলো সার্কিট হাউজ রোডের দিনগুলো। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর তথা ‘ডিএফপি’। সচিত্র বাংলাদেশ, নবারুণ, কোয়ার্টার্লি– তিনটি প্রকাশনা। ‘সচিত্র বাংলাদেশ’-এ পর পর তিনজন কবি-সুহৃদ সম্পাদক। আব্দুস সাত্তার, কেজি মোস্তফা, খালেদা এদিব চৌধুরী। কেজি ভাই-এর সময়কালেই আমার সর্বাধিক লেখা প্রকাশ পায়। সরকারি প্রতিষ্ঠান, চেকও পেতাম সময় মতোই।

কেজি ভাই-এর সাংবাদিকতার শুরু ১৯৫৮-তে। ভাষাসৈনিক অলি আহাদে’র ‘ইত্তেহাদে’ শিক্ষানবীশ সাংবাদিকরূপে। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যে অধ্যয়নরত। ১৯৬০-এ মাস্টার্স শেষে সংবাদপত্র ও চলচ্চিত্রে জড়িয়ে ছিলেন। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসারও একটি পার্শ্বপেশা চালিয়েছেন আজীবন। ১৯৭৬-এ তথ্য ক্যাডারে বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরিতে ঢোকেন। ডিএফপি’তে যুগ্ম সচিব পদমর্যাদায় সিনিয়ার সম্পাদক হয়েছিলেন। ১৯৯৪-৯৫-এ অবসরকালীন ছুটি বা ‘রিটায়ার্ডমেন্টে’ যান। তোপখানা রোডের ‘প্রেসক্লাব ভবন’ই ছিলো ওনার ‘সেকেন্ড হোম’।

কবিতা ও ছড়ার ১০টি বই লিখেছেন কেজি ভাই। উড়ন্ত রুমাল, কাছে থাকো ছুঁয়ে থাকো, চক্ষুহীন প্রজাপতি উল্লেখযোগ্য। অনুপ্রাস বা এলিটারেশন রাখতেন ছড়াগ্রন্থের নামসমূহে। যেমন >> ‘শিশু তুমি যিশু’, কন্যা তুমি অনন্যা। অথবা ‘ মজার ছড়া শিশুর পড়া’। পদক-পুরস্কারের ঝুলিতেও অর্জন অনেক। একুশে পদক, ডাকসু কবি সম্মাননা ১৯৫৯, প্রেসক্লাব লেখক সম্মাননা। স্বামী-স্ত্রীর সংসারে বিরাজমান উজ্জ্বল দুটি পুত্রসন্তান।

কেজি মোস্তফার প্রধান পরিচয় কিংবদন্তী গীতিকার। টিভি-রেডিও মিলিয়ে হাজার গান রচেছেন তিনি। অর্ধডজন গান চিরগীতির মর্যাদা পেয়েছে। রবীন ঘোষের সুরে আরেকটি গান বিশেষ উল্লেখযোগ্য। অশোক ঘোষ পরিচালিত ‘নাচের পুতুল’ ছবিতে সংযোজিত। নায়িকা সেই শবনম যাঁর মূল নাম ঝর্ণা বসাক। মাহমুদুন্নবীর কন্ঠে ঠোঁট মিলিয়েছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক।

“আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন
কপোলের কালো টিপ পড়বে চোখে,
ফুটবে যখন ফুল বকুল শাখে
ভ্রমর যে এসেছিলো জানবে লোকে।”

ঢাকায় তিনজন কেজি মোস্তফার নাম জানা যেতো। খ্যাতিমান সাংবাদিক কেজি মুস্তাফা, বানানে একটু তারতম্য। তিনি ‘অল পাকিস্তান জার্ণালিস্ট ইউনিয়নে’র সম্পাদক ছিলেন। বৃহত্তর পাবনার সিরাজগঞ্জে জন্ম, পৈতৃকবাসও। দৈনিক পূর্বকোণ, মুক্তকন্ঠে’র সম্পাদক ছিলেন। ঢাকায় প্রয়াত হন ২০১০-এর ১৩ মার্চ। আরেকজন কেজি মোস্তফা টাকার ডিজাইন করতেন, প্রয়াত। সবশেষ সাংবাদিক-কবি-গীতিকার কেজি মোস্তাফাও বিদায় নিলেন। তবে শারীরিকভাবে গেলেও চিরজীবী থাকবেন চিরসঙ্গীতেই– “ফুলের কানে ভ্রমর এসে চুপি চুপি বলে যায়– তোমার আমার সারাটি হৃদয় নীরবে জড়াতে চায়”।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/9k5l
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আল কোরআন ও আল হাদিস

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন