English

28 C
Dhaka
শনিবার, নভেম্বর ২২, ২০২৫
- Advertisement -

সেই শাবানা এই শাবানা

- Advertisements -

নাসিম রুমি: ৯ বছর বয়সি ছোট্ট মেয়ে রত্না এলেন চলচ্চিত্রে। সেই রত্না একসময় অভিনয় দক্ষতা আর মোহনীয় রূপ দিয়ে হয়ে গেলেন ঢালিউডের বিউটিকুইন শাবানা। তিন দশকের চলচ্চিত্রজীবনে ১১ বার জাতীয় পুরস্কারসহ অফুরন্ত সাফল্যের পালক সফলতার মুকুটে পরিধান করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী হওয়া।

সেই শাবানা…

‘চলার পথে ক্ষণিক দেখা এ কি শুধু অভিনয় …’ শাবানার ঠোঁটে কাজী জহিরের বিখ্যাত ‘অবুঝ মন’ ছবির গান এটি। তবে শাবানার চলচ্চিত্রজীবন ক্ষণিকের ছিল না, আর জনপ্রিয়তাও ছিল আকাশছোঁয়া।

মাত্র ৯ বছর বয়সে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক আজিজুর রহমানের হাত ধরে চিত্রজগতে অভিষেক শাবানার। তখন তাঁর নাম শাবানা নয়, ছিল আফরোজা সুলতানা রত্না। আজিজুর রহমান তাঁকে নিয়ে যান তাঁর গুরু বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা এহতেশামের কাছে। ১৯৬১ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে নাম লেখান এহতেশামের ছবি ‘নতুন সুর’-এ।

এরপর ১৯৬৬ সালে ইবনে মিজানের ‘আবার বনবাসে রূপবান’ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে এবং মুস্তাফিজের ‘ডাকবাবু’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে কাজ করেন তিনি। এহতেশামই পরে তাঁর ‘চকোরী’ ছবিতে নাম দেন শাবানা। ১৯৬৭ সাল, বাংলা চলচ্চিত্রে আবির্ভাব ঘটল এক নতুন অভিনেত্রীর। উর্দু ছবি ‘চকোরী’তে প্রধান নারী চরিত্রে নায়ক নাদিমের বিপরীতে লাস্যময়ী তরুণীর সাবলীল অভিনয় দিয়ে শাবানা নজর কাড়লেন দর্শকদের।৮১ সপ্তাহ ধরে চলা এ ছবিতে চকোরী চরিত্রে শাবানাকে ভালো লেগে যায় দর্শক-নির্মাতার। উর্দু ভাষায় নির্মিত ‘চকোরী’ ছবিটি শাবানার খ্যাতি পৌঁছে দিয়েছিল সুদূর করাচি, পিন্ডি, পেশোয়ার, কোয়েটা, মারী পর্যন্ত। তিন দশকেরও বেশি সময় অভিনয়ের ক্ষেত্রে জুটি বেঁধেছেন নাদিম, আলমগীর, রাজ্জাক, ফারুক, জসিম, জাভেদ, সোহেল রানা, বলিউডের রাজেশ খান্না প্রমুখের সঙ্গে। ঢাকার চলচ্চিত্রে ৩৬ বছর ধরে শাবানা রাজত্ব করেন। একাধারে এত দীর্ঘ সময় রাজত্ব আর কোনো তারকা করতে পারেননি।১৯৬৬ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত শুধু তাঁর নামেই ছবি চলত। কোনো ছবিতে শাবানা আছেন শুনলেই এখনো টিভির সামনে ভিড় হয় দর্শকের। নব্বইয়ের দশকের প্রথমদিকে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করলেও শেষের দিকে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় শুরু করেন। তিনি তাঁর ৩৬ বছরের কর্মজীবনে ২৯৯টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ষাট থেকে নব্বইয়ের দশকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলেন এই অভিনেত্রী। ১৯৯৭ সালে আজিজুর রহমান পরিচালিত ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’ ছবিই তাঁর অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র।

১৯৭৯ সালে গড়ে তোলেন চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা ‘এস এস প্রোডাকশন’। এ সংস্থা থেকে আজিজুর রহমানকে পরিচালক করে শাবানা প্রথম প্রযোজনা করেন ‘মাটির ঘর’ ছবিটি। প্রায় ২৫টির মতো ছবি প্রযোজনা করেছেন তিনি। এর মধ্যে যৌথ প্রযোজনার ছবিও রয়েছে। চট্টগ্রামের মেয়ে শাবানা। চাকরিজীবী বাবা ফয়েজ চৌধুরী এবং গৃহিণী মা ফজিলাতুন্নেসার ঘর আলো করে ১৯৫২ সালের ১৫ জুন জন্ম হয় আফরোজা সুলতানা রত্নার। চট্টগ্রাম জেলার রাউজানের ডাবুয়া গ্রামে তাঁর জন্ম। অভিনয় ও চলচ্চিত্র নির্মাণের সম্মাননায় সমৃদ্ধ ছিল চলচ্চিত্রকার শাবানার কর্মজীবন। বলা যায়, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের সঙ্গে বেশ সখ্যই ছিল শাবানার। বাংলাদেশের কোনো অভিনেত্রী হিসেবে তিনিই লাভ করেছেন সর্বোচ্চ জাতীয় পুরস্কার। দীর্ঘ অভিনয়জীবনে মোট ১১ বার জয় করে নেন এ সম্মাননা। প্রথমবার ১৯৭৭ সালে প্রত্যাখ্যান করেন ‘জননী’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রের জন্য পাওয়া এ পুরস্কারটি। এর মাঝে ১৯৯০ সালে সেরা প্রযোজক হিসেবেও জয় করেন এ সম্মাননা। শাবানা ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত টানা তিনবার যথাক্রমে দুই পয়সার আলতা (১৯৮২), নাজমা (১৯৮৩) ও ভাত দে (১৯৮৪) চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। আবার ১৯৮৯ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত পুনরায় টানা তিনবার যথাক্রমে রাঙা ভাবী (১৯৮৯), মরণের পরে (১৯৯০) ও অচেনা (১৯৯১) চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৯০ সালে ‘গরীবের বউ’ চলচ্চিত্র প্রযোজনার জন্য শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র প্রযোজক পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৭ সালে জাতীয় পুরস্কারে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন। এ ছাড়াও শাবানা পেয়েছেন বাচসাস পুরস্কার (১৯৮২ ও ১৯৮৭), আর্টফোরাম পুরস্কার (১৯৮৪, ১৯৮৮), সায়েন্স ক্লাব পুরস্কার (১৯৮৪), কথক একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৯), নাট্যসভা পুরস্কার (১৯৮৮), প্রযোজক সমিতি পুরস্কার (১৯৯১), কামরুল হাসান পুরস্কার (১৯৮৭), নাট্য নিকেতন পুরস্কার (১৯৮৫), ললিতকলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৫)। শাবানার ঝুলিতে মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, রুমানিয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালসহ আরও বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দেওয়ার অভিজ্ঞতাও আছে।

এই শাবানা…

শাবানা ১৯৭৪ সালে এক সুতায় জীবন বাঁধেন সরকারি কর্মকর্তা ওয়াহিদ সাদিকের সঙ্গে। ১৯৯৭ সালে অভিনয় ও প্রযোজনা ছেড়ে চলচ্চিত্রকে বিদায় জানান। এরপর ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে সপরিবারে থিতু হন। একসময়কার ঢালিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবানা এখন ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসারী। হিজাব ছাড়া কোথাও বের হন না তিনি। একেবারে বদলে গেছেন। বড়পর্দার শাবানার সঙ্গে বাস্তবের শাবানার এখন কোনো মিল নেই। তাঁর পরিবারে স্বামী ছাড়াও আছেন বড় কন্যা সুমি ইকবাল, ছোট মেয়ে ঊর্মি সাদিক ও পুত্র নাহিন সাদিক। সন্তানরা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বর্তমানে সংসারি ও শিক্ষকতা এবং পুত্র একটি নামি প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করছেন। স্বামী ওয়াহিদ সাদিক হাউজিং ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। শাবানার সময় কাটে রান্নাবান্না, নামাজ-রোজা করে এবং টিভি দেখে ও বই পড়ে। সময় করে ঘুরে বেড়াতেও পছন্দ করেন তিনি। মাঝেমধ্যে দেশেও আসেন। সর্বশেষ ২০১৯ সালের নভেম্বরে ঢাকায় এসে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আবার ফিরে যান যুক্তরাষ্ট্রে। শাবানা বলেন, ‘সব মিলিয়ে সৃষ্টিকর্তা আমাকে বেশ ভালো রেখেছেন। চলচ্চিত্রজগৎকে ভীষণ মিস করি এখন। বিশেষ করে দেশীয় চলচ্চিত্রের দুরবস্থা আমাকে খুব কাঁদায়। ’

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/0ve0
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন