English

26.2 C
Dhaka
সোমবার, জুলাই ৭, ২০২৫
- Advertisement -

আপত্তিকর প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় অনেক ছবির সুযোগ হাতছাড়া!

- Advertisements -

কোনো গডফাদার ছিল না তার। তিনি স্টারকিডও নন। কেবল একটা স্বপ্ন ছিল তার কাছে। বলিউডের অভিনেত্রী হবেন। সুপারস্টার বা নায়িকা না, অভিনয় করাটাই তার একমাত্র ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে গিয়ে কোটি কোটি বাধা পেরতে হয়েছে অভিনেত্রী রিচা চাড্ডাকে।
অভিনয়ে তার দক্ষতা আগে থেকেই ছিল। ১৯৮৬ সালে পাঞ্জাবে জন্ম তার। দিল্লিতে বড় হয়েছেন। ছোট থেকেই অভিনয়ের দিকে মন ছিল। খুদে রিচা নিজের বাবাকে নকল করতেন। বাবার ভুঁড়ি ছিল বলে জামার ভেতরে বালিশ নিয়ে বাবার নকল করতেন।
দিল্লি থেকে ইতিহাস নিয়ে স্নাতক। পাশ করেই তিনি মডেলিং শুরু করেন। ফের মঞ্চে পা রাখেন। বিখ্যাত ব্রিটিশ পরিচালক বেরি জনের তত্ত্বাবধানে মঞ্চাভিনয় শেখেন।
সাংবাদিকতা নিয়ে ডিপ্লোমা কোর্স করেছেন রিচা চাড্ডা। মুম্বাই যাওয়ার পর রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন প্রথম প্রথম। এমনকি ‘আহিস্তা আহিস্তা’-র ছবির জন্য অভিনেতা অভয় দেওলের সাক্ষাৎকারও নিয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি অডিশন দিতেন।
দুঃখের বিষয়, অভিনেত্রী হিসেবে বলিউডে স্ট্রাগল করার সময়ে তার অভিনয় দক্ষতা নিয়ে কেউ কথাই বলতেন না। সকলেই তার চেহারা দেখে তাকে নাকচ করে দিতেন। কখনো তার ঠোঁট নিয়ে সমস্যা। কখনো তার নাক নিয়ে। কখনো বা গোটা শরীরের আকৃতি নিয়েও কুমন্তব্যের সম্মুখীন হতে হয় রিচাকে।
পরিচালক দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ওয়ে লাকি লাকি ওয়ে ছবি’-তে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। খুব বড় চরিত্র না হলেও নজর কেড়েছিলেন তিনি। কিন্তু পর্দায় তার অভিনয় দেখার পরেও তার শরীর নিয়ে মন্তব্য করতে থাকে অনেকেই। কিন্তু দু-একজন সমালোচক তার অভিনয় ক্ষমতার প্রশংসা না করে পারেননি।
‘ওয়ে লাকি লাকি ওয়ে’ ছবিটির স্ক্রিনিং চলছিল গোয়াতে। সে সময়ে খবর আসে মুম্বাই হামলার। ২৬/১১-র সেই ভয়াবহ জঙ্গী হামলায় প্রাণহানি তো হলই। মানসিক রোগও বেড়ে গেল বাণিজ্যনগরীর মানুষের মধ্যে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হল সিনেমা জগতও। সেই সময়ে মুক্তি পেয়েছিল এই ছবিটি। কিন্তু দর্শক ছবি দেখতে হলে গেলেন না।
এরপর দুই বছর ধরে কোনো কাজ পাননি তিনি। পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপের ‘ডেভ ডি’ ছবির মুখ্য চরিত্রের জন্য অডিশন দিয়েছিলেন রিচা। কিন্তু শেষ মেশ কলকি কেকলা এই ছবিতে অভিনয় করেন।
‘গ্যাংস অব ওয়াসেপুর’ ছবির জন্য ‌অনুরাগ কাশ্যপের এমন এক অভিনেত্রীর প্রয়োজন ছিল, যিনি তরুণী ও মধ্য বয়সি-দুই চরিত্রেই মানিয়ে যাবেন। সেখানেই ‘নাগমা খাতুন’ চরিত্রের জন্য বেছে নেওয়া হয় রিচা চাড্ডাকে। মনোজ বাজপেয়ীর স্ত্রী ও নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করে সকলকে চমকে দেন।
দু’বছর তার কাছে কোনো সুযোগ ছিল না। কিন্তু নাগমা খাতুনের চরিত্রের কারণে তার কাছে ফিল্মফেয়ার থেকে শুরু করে সমস্ত নামিদামি পুরস্কার তার ঝুলিতে আসতে থাকে। তারপর ১১টি ছবির সুযোগ আসে তার কাছে।
কিন্তু হায়! যতই ভাল অভিনয় করুন না কেন, বলিউডে টাইপ-কাস্ট হওয়ার থেকে কে বাঁচাতে পারে। ‘অগ্নিপথ’ ছবিতে তাকে হৃতিক রোশনের মায়ের ভূমিকাও অফার করা হয়। কিন্তু রিচা জানতেন তিনি কী করতে চান, আর কী করতে চান না। তিনি এই ধরনের ছবির জন্য সোজাসুজি ‘না’ করে দেন। ধর্মা প্রোডাকশনের কাস্টিং ডিরেক্টরের সঙ্গে সেই থেকেই তার কুসম্পর্ক।
২০১৩ সালে ‘ফুকরে’ ছবি থেকে ফের তার জীবনের মোড় ঘোরে। সেই ছবিতে তার অভিনয় দেখার পর তার ফ্যানবেসও তৈরি হয়। শুধু তাই না, এই ছবির শুটিং তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মানুষের স‌ঙ্গে প্রথম আলাপ হয় তার। অভিনেতা আলি ফজল। আগামী বছরের শুরুতে তাদের বিয়ে হবে বলেও শোনা যাচ্ছে।
সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর ছবি ‘রামলীলা’-তে রিচা চাড্ডা দীপিকা পাড়ুকোনের বৌদির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ‘সর্বজিৎ’ ছবিতেও তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু চিত্রনাট্যে তার চরিত্রের যতটা গুরুত্ব ছিল, এডিটিংয়ের পরে সেই গুরুত্ব আর নজরেই পড়ে না। তিনি জানিয়েছিলেন, এই ছবি দুটিতে কাজ না করলেই ভাল হত।
২০১৫ সালে ‘মসান’ ছবিতে কাজ করাটা তার জীবনের মাইলস্টোন বলা হয়। ছবিটি যে এই পরিমাণ প্রশংসা পাবে, তা হয়তো খোদ অভিনেত্রী রিচা ও স্বেতা ত্রিপাঠী, অভিনেতা ভিকি কৌশাল ও সঞ্জয় মিশ্র, এমনকি পরিচালক নীরজ ঘাইওয়ানও ভাবতে পারেননি। কান ফিল্ম ফেস্টিভালে দর্শকেরা ৫ মিনিট ধরে উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়েছিলেন।
আন্তর্জাতিক সম্মান পাওয়ার পর থেকে সংবাদমাধ্যমে তার অভিনয় নিয়ে লেখালেখি শুরু হয়। এখন তার ছবি কেবল দেশের গণ্ডির মধ্যে আটকে নেই। বিশ্বব্যাপী প্রশংসা পেয়েছে তার ছবি। রিচার অভিনয় নিয়ে সারা দুনিয়ায় কথা বলছে মানুষ।
প্রথম বার বাণিজ্যিক ছবি ‘ম্যায় অর চার্লস’-এ কাজ করেন তিনি। যদিও বক্স অফিসে এই ছবি খুব একটা নাম করতে পারেনি। একে একে ‘চক অ্যান্ড ডাস্টার’, ‘সেকশন ৩৭৫’, ‘পঙ্গা’ ইত্যাদি ছবিতে অভিনয় করতে থাকেন তিনি।
তার আগামী ছবিতে তিনি মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করছেন। ‘শকীলা’ ছবিটিতে তিনি দক্ষিণী অ্যাডাল্ট সুপারস্টারের ভূমিকায় অভিনয় করছেন। পুরুষতান্ত্রিক ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের একটি আলাদা পরিচয় তৈরি করেছেন তিনি। কেবল মাত্র প্রতিভার জোরে।
কিন্তু এই পর্যন্ত আসতে তাকে অনেক কসরৎ করতে হয়েছে। এমনকি ‘কাস্টিং কাউচ’-এর মতো ভয়াবহ অভিজ্ঞতাও তার হয়েছে। একটি পার্টিতে গিয়েছিলেন রিচা। এক প্রযোজক এসে তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘ডিনার করবে’? রিচা সঙ্গে সঙ্গেই জানান যে ডিনার করে নিয়েছেন এবং কী কী খেয়েছেন তার বিস্তারিত তথ্যও দেন।
তারপর রিচার গায়ে হাত দিয়ে সেই প্রযোজক তাকে বলেন, ‘এই ডিনার না, ওই রকম ডিনারের কথা বলছি।’ মুখের উপর ‘না’ বলে দিয়েছিলেন বলে তার হাত থেকে একাধিক ছবির কাজও চলে যায়।
একটি ছবির মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করার সুযোগ আসে তার। ছবির জন্য নির্দিষ্ট একটি ভাষা শিখতে হয়, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বদলে ফেলতে হয়, এমনকি পোশাকও তৈরি করা হয় তার মাপের। প্রথম দিনের শুটের আগে তিনি জানতে পারেন, ছবির সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তির প্রেমিকা তার জায়গা নিয়ে নিয়েছেন।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/k9tr
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আল কোরআন ও আল হাদিস

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন