English

30 C
Dhaka
শনিবার, মে ৪, ২০২৪
- Advertisement -

আব্বাসউদ্দীন: বাংলা সঙ্গীতের অমর কন্ঠশিল্পী

- Advertisements -
Advertisements
Advertisements

বাংলা সঙ্গীতের অমর কন্ঠশিল্পী, ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাসউদ্দীন-এর আজ ৬১তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর, ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৮ বছর। কিংবদন্তী সঙ্গীতজ্ঞ আব্বাসউদ্দীন-এর প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
আব্বাসউদ্দীন ( আব্বাসউদ্দীন আহমদ) ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ অক্টোবর, পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলার, তুফানগঞ্জ মহকুমার বলরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা জাফর আলী আহমদ ছিলেন তুফানগঞ্জ মহকুমা আদালতের উকিল। বলরামপুর স্কুলে আব্বাসউদ্দীনের শিক্ষা জীবন শুরু হয়। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে তুফানগঞ্জ স্কুল থেকে তিনি প্রবেশিকা এবং ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে কুচবিহার কলেজ থেকে আই.এ পাস করেন। এখান থেকে বি.এ পরীক্ষায় অণুত্তীর্ণ হয়ে, তিনি সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করেন। তাঁর বড় ছেলে ড. মোস্তফা কামাল বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের একজন বিচারপতি ছিলেন। মেজো ছেলে মুস্তাফা জামান আব্বাসী ও একমাত্র মেয়ে ফেরদৌসী রহমান খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী।
আব্বাসউদ্দীন কোনো ওস্তাদের কাছে, গান না শিখেই বা তালিম না নিয়েই, গান গাওয়া শুরু করেন । যাত্রা, থিয়েটার ও স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান শুনে শুনে, নিজ চেষ্টায় গান গাওয়া রপ্ত করেন। এই অসাধরণ প্রতিভাসম্পন্ন শিল্পী, তাঁর আপন প্রতিভা গুণে, নিজেকে একজন উঁচুমানের কণ্ঠশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি প্রথমে ছিলেন পল্লীগায়ের একজন গায়ক। কিছু সময়ের জন্য তিনি ওস্তাদ জমিরউদ্দীন খাঁর নিকট উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিখেছিলেন।
পন্ডিত শাকিল রাসেলের পরামর্শ অনুযায়ী, রংপুর ও কোচবিহার অঞ্চলের ভাওয়াইয়া, ভাভাগো ভাভা, ক্ষীরোল, চটকা গেয়ে আব্বাস উদ্দীন প্রথমে সুনাম অর্জন করেন। পরবর্তিতে জারি, সারি, ভাটিয়ালি , মুর্শিদি, বিচ্ছেদি, দেহতত্ত্ব, মর্সিয়া, পালা গান ইত্যাদি গেয়ে জনপ্রিয় হন। তাঁর দরদভরা সুরেলা কণ্ঠে পল্লি গানের সুর যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন, তা আজও অবিস্মরণীয় ।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম, জসীম উদ্‌দীন, গোলাম মোস্তফা প্রমুখের ইসলামি ভাবধারায় রচিত গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন। আব্বাসউদ্দীন ছিলেন প্রথম মুসলমান গায়ক, যিনি আসল নাম ব্যবহার করে এইচ.এম.ভি থেকে গানের রেকর্ড বের করেছেন।
আব্বাসউদ্দীন ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কলকাতায় বসবাস করেন। প্রথমে তিনি রাইটার্স বিল্ডিংয়ে ডিপিআই অফিসে অস্থায়ী পদে এবং পরে কৃষি দপ্তরে স্থায়ী পদে কেরানির চাকরি করেন। পরবর্তি সময়ে তিনি রেকর্ডিং এক্সপার্ট হিসেবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করেন।
চল্লিশের দশকে আব্বাসউদ্দীনের গান, পাকিস্তান আন্দোলনের পক্ষে মুসলিম জনতার সমর্থন আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৪৭-এ দেশ বিভাগের পর ঢাকায় এসে তিনি সরকারের প্রচার দপ্তরে এডিশনাল সং অর্গানাইজার হিসেবে চাকরি করেন।
পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ম্যানিলায় দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সঙ্গীত সম্মেলন, ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে জার্মানিতে আন্তর্জাতিক লোকসংগীত সম্মেলন এবং ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে রেঙ্গুনে প্রবাসী বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন।
আব্বাসউদ্দীনের গাওয়া কিছু বিখ্যাত গান- ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’…, ‘তোরষা নদী উথাল পাতাল, কারবা চলে নাও’…,’ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ’…,
‘প্রেম জানে না রসিক কালাচান…’, ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে…’ আমার হাড় কালা করলিরে আমার দেহ কালার লাইগা রে…, প্রভৃতি। কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত “ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ’’ গানটি আব্বাসউদ্দীনের কণ্ঠে তখন তুমুল জনপ্রিয়তা পায় এবং আজও এ গান অবিস্মরণীয় হয়ে আছে।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের খুব স্নেহভাজন ছিলেন, আব্বাসউদ্দীন। কবি সকলের কাছে আব্বাসউদ্দীনকে পরিচয় দিতেন, ‘আমার ছোট ভাই’ বলে। প্রায় বিশ বছর তিনি কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাহচর্যে ছিলেন। নজরুলের অনেক গান করেছেন। গজলও খুব ভালো গাইতেন আব্বাসউদ্দীন । ‘ত্রিভূবনের প্রিয় মুহাম্মদ’, ‘তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে’, ইত্যাদি গেয়ে তিনি সমগ্র বাংলার মানুষকে মাতোয়ারা করেছিলেন তখন।
রাজনৈতিক সভায় গান গেয়ে গেয়ে বাঙালিদের উদ্বুদ্ধ করতেন। গাইতেন ‘ওঠরে চাষী জগতবাসী, ধর কষে লাঙল’।
আব্বাস উদ্দিন চলচ্চিত্রেও গান করেছিলেন এবং অভিনয়ও করেছেন। তিনি যেসব চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তাঁরমধ্যে- বিষ্ণুমায়া (১৯৩২), মহানিশা (১৯৩৬), একটি কথা, ঠিকাদার (১৯৪০) অন্যতম। এসব চলচ্চিত্রে তিনি গানও গপয়েছেন।
‘ঠিকাদার’ চলচ্চিত্রে আব্বাস উদ্দিন একজন কুলি/ গায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। তখনকার দিনে মুসলমান ব্যক্তির সিনেমা করা ছিল একটা ব্যতিক্রম ঘটনা। তাই হয়ত ‘বিষ্ণুমায়া’ ছবিতে অভিনয়ের পরও এর ভূমিকা লিপিতে আব্বাস উদ্দিনের নাম ছিল না, যার তথ্য সংগৃহীত হয়েছিল কানন দেবীর কাছ থেকে।
ঢাকায় ‘এফডিসি’র প্রথম চলচ্চিত্র, ফতেহ লোহানী পরিচালিত ‘আসিয়া’তে আব্বাসউদ্দীন সুর ও সংগীত পরিচালনার দায়ীত্ব পেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আকস্মিক মৃত্যুর কারনে, পরবর্তিতে সে দায়ীত্ব পান, আবদুল আহাদ ও সমর দাশ।
আব্বাসউদ্দীন রচিত ‘আমার শিল্পীজীবনের কথা’ (১৯৬০) নামে একটি গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে।
সঙ্গীতে অবদানের জন্য তিনি (মরণোত্তর) অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। যারমধ্যে- প্রাইড অফ পারফরম্যান্স-১৯৬০, শিল্পকলা একাডেমী পুরস্কার-১৯৭৯, স্বাধীনতা পুরস্কার-১৯৮১, আরটিভি স্টার অ্যাওয়ার্ডস-২০১৩ অন্যতম।
বাংলাদেশের ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, তোরষা’সহ বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের নদী-অববাহিকার মানুষদের প্রাণের গান, ভাওয়াইয়া। আর এই ভাওয়াইয়া অঞ্চলের সংস্কৃতির কর্ণধার হয়ে উঠেছিলেন শিল্পী আব্বাসউদ্দীন, ঐ অঞ্চলের সংস্কৃতিকে করেছেন বেগবান ।
তিনি সব ধরণের গানেই ছিলেন সমান পারদর্শী। আধুনিক গান, স্বদেশী গান, ইসলামি গান, পল্লীগীতি, উর্দুগান সবই তিনি গেয়েছেন। পল্লীগীতিতেও ছিল তাঁর অসামান্য সাফল্য, ছিল সবচেয়ে বেশি মৌলিকতা ।
এই মহান কন্ঠশিল্পী বাংলাদেশের সঙ্গীত ইতিহাসে, চির অমর হয়ে আছেন।
(তথ্যসূত্র ও ছবি- ইন্টারনেট থেকে নেয়া)

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন