নাসিম রুমি: নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী সিনেমা ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’খ্যাত অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন ভালো নেই। বর্তমানে লন্ডনে হার্লি স্ট্রিট ক্লিনিকে ব্রেন টিউমারে চিকিৎসাধীন। তার বর্তমান শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন তার জামাতা আরিফুল ইসলাম।
এদিকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পাওয়া এই গুণী অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন ঢালিউড সিনেমা জগতের চলচ্চিত্র শিল্পীর অনেকে। এবার ইলিয়াস কাঞ্চন সম্পর্কে কথাা বরলেন অভিনেতা নাঈম ও আমিন খান।
নব্বই দশকের সাড়াজাগানো অভিনেতা নাঈম সিনেমা থেকে দূরে আছেন। কিন্তু সিনেমার মানুষের প্রতি রয়েছে তার অগাধ ভালোবাসা। প্রবীণ অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনের অসুস্থতার খবরে তিনি চুপ থাকেননি। তার খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
নাঈম বলেন, হঠাৎ করে ইলিয়াস কাঞ্চন ভাইয়ের অসুস্থতার খবর শুনে কষ্ট পেয়েছি, খুব খারাপ লেগেছে। একটাই চাওয়া—তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের মাধ্যমে মানুষের মনে তিনি বড় জায়গা করে নিয়েছেন। এই কাজটি যেন চলমান থাকে।
এ অভিনেতা বলেন, আমি প্রথমবার ইলিয়াস কাঞ্চনকে টাঙাইল জেলার করটিয়া জমিদাবাড়িতে দেখেছি। তখন আমি খুব ছোট ছিলাম। করটিয়া জমিদারবাড়ি আমার নানাবাড়ি। সেই ছোটবেলায় নালিশ সিনেমার শুটিং দেখার সময় তাকে প্রথম দেখি।
তিনি বলেন, একসময় আমিও চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করি এবং তখনই তার সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয়ের শুরু থেকেই বোঝা যায়, তিনি একজন ভালো মানুষ—সহজ, সরল ও নীতিবান। সিনেমায় তার অবদানও অনেক। রেকর্ডসংখ্যক সিনেমা যেমন করেছেন, তেমনই মানুষের মনে গেঁথে আছেন সুঅভিনয় দিয়ে।
ইলিয়াস কাঞ্চনের অসুস্থতায় অভিনেতা আমিন খান বলেন, কাঞ্চন ভাইয়ের সঙ্গে অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছি। তিনি বলেন, খবরটি শোনার পর প্রচণ্ড খারাপ লেগেছে। কাঞ্চন ভাই আমাদের চলচ্চিত্রের একজন অভিভাবক। সবচেয়ে বড় কথা— তিনি একজন ভালো মানুষ।
আমিন খান বলেন, ঢালিউড সিনেমা ও সমাজের রত্নও ইলিয়াস কাঞ্চন ভাই। তার সঙ্গে আমার শত শত স্মৃতি রয়েছে। সিনেমা করতে গিয়েই আমাদের পরিচয়। সবসময় মনে হয়েছে, তিনি একজন বড় ভাই। তাই তার এত বড় অসুস্থতার খবর আমাকে সত্যিই কষ্ট দিয়েছে। এখনো মন খারাপ আছে। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছি— কাঞ্চন ভাই যেন সুস্থ হয়ে উঠেন।
উল্লেখ্য, গত সাত মাস ধরে অসুস্থ ইলিয়াস কাঞ্চন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। কর্মব্যস্ত জীবন ছেড়ে লন্ডনের ঘরবন্দি জীবন তাকে বিচলিত করে তোলে। থেরাপির কারণে তার শরীরে ক্লান্তি এসেছে এবং কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে। তাই চিকিৎসকরা তাকে ফোনে কথা বলতে নিষেধ করেছেন।
ইলিয়াস কাঞ্চন লন্ডনে তার মেয়ে ইসরাত জাহানের বাসায় থাকছেন। জামাতা আরিফুল ইসলাম জানান, ইলিয়াস কাঞ্চন গত ২৬ এপ্রিল থেকে লন্ডনে আছেন। সেখানে হার্লি স্ট্রিট ক্লিনিকের অনকোলজিস্ট ভিনায়ার তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছে।
তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট লন্ডনের উইলিংটন হাসপাতালের অধ্যাপক ডিমিট্রিয়াসের নেতৃত্বে তার মস্তিষ্কে একটি সফল অস্ত্রোপচার করা হয়। টিউমারের কিছু অংশ ইতোমধ্যে অপসারণ করা হয়। পুরো টিউমার অপসারণ করা হলে জীবনহানিসহ প্যারালাইজড হয়ে চলনশক্তি ও কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার ঝুঁকি ছিল বলেও চিকিৎসকরা জানান। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শে টিউমারের কিছু অংশ অপসারণ করা হয়।