English

28 C
Dhaka
শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪
- Advertisement -

একজন খান আতা: বহুমাত্রিক প্রতিভায় সমৃদ্ধ কিংবদন্তী চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব

- Advertisements -

আজাদ আবুল কাশেম: খান আতা। খান আতাউর রহমান। অভিনেতা, গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, গায়ক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, কাহিনীকার, প্রযোজক-পরিবেশক । বহুমাত্রিক প্রতিভায় সমৃদ্ধ একজন প্রতিভাবান, সৃজনশীল মেধাবী এই মানুষটি, চলচ্চিত্রশিল্পের নানা শাখায় বিচরণ করেছেন সফলতার সাথে। চলচ্চিত্রের বিভিন্ন শাখায়, অতিব কৃতিত্বপূর্ণ কাজ করে গেছেন।

প্রযোজক-পরিচালক হিসেবে আমাদেরকে উপহার দিয়েছেন জনপ্রিয় ও খ্যাতিমান সব চলচ্চিত্র।
গীতিকার ও সুরকার হিসেবে আমাদের জন্য রেখে গেছেন অসংখ্য জনপ্রিয় ও কালজয়ী সব গান। একজন উচুমানের অভিনেতা হিসেবেও তিনি ছিলেন, প্রসংশিত, প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয়।

অসাধারণ প্রতিভাবাসম্পন্ন প্রগতিশীল, আধুনিক চিন্তা-চেতনার এক মহিরূহ চলচ্চিত্রব্যক্তিত্ব খান আতা’র ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৯৭ সালের ১ ডিসেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। প্রয়াত এই কিংবদন্তী চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

খান আতা (খান আতাউর রহমান) ১৯২৮ সালের ১১ ডিসেম্বর, মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার, রামকান্তপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম জিয়ারত হোসেন খান, মায়ের নাম জোহরা খাতুন। শৈশব থেকেই গানের প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহী হয়ে উঠেন খান আতা। তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে ঢাকা জেলা সঙ্গীত প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে, প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি।

১৯৪৩ সালে, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশান পাস করেন খান আতা। ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষা দেন ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৪৫ সালে। ১৯৪৬ সালে, তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন, কিন্তু অল্প কিছুদিন পরেই মেডিকেল ছেড়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

১৯৪৯ সালে, তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের উদ্দেশ্যে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে মুম্বাই চলে যান। মুম্বাই গিয়ে তিনি চলচ্চিত্র জগতের নানা বিষয়ে অভিজ্ঞতা লাভ করেন। ১৯৫০ সালে চলে আসেন করাচি। করাচী এসে তিনি যোগ দেন রেডিও পাকিস্তান-এ, সংবাদপত্র পাঠক হিসেবে। এখানেই আরেকজন প্রতিভাবান বাঙ্গালী ফতেহ্ লোহানীর সাথে তাঁর সখ্যতা গড়ে উঠে। তখনো চলচ্চিত্রের ব্যাপারে তাঁর উৎসাহ কমেনি, যার কারণে তিনি প্রায়ই লাহোর যেতেন। এসময় তিনি সারঙ্গী বাদক জওহারি খানের কাছ থেকে তালিম নেয়া শুরু করেন। ফতেহ্‌ লোহানী কিছুদিন পরে লন্ডন চলে গেলে, ১৯৫২ সালে খান আতা একটি পোল্যান্ডীয় জাহাজে করে লন্ডন পাড়ি জমান। সেখানে অনেক বাঙ্গালী অনুষ্ঠানে গায়ক এবং অভিনেতা হিসেবে তিনি অংশগ্রহণ করেন। এখানে এস এম সুলতানের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। এস এম সুলতানের চিত্রকর্মের উপকরণ যোগানে সাহায্য করেন। খান আতা এবং তাঁর সাথীরা এস এম সুলতান-এর চিত্রকর্মের প্রদর্শনী এবং বিক্রয়ের ব্যবস্থাও করেন। এক সময় লন্ডনের সিটি লিটারেরি ইন্সটিটিউটে থিয়েটার ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হন। লন্ডনে থিয়েটার রয়াল, ইউনিটি থিয়েটার, আরভিং থিয়েটারে সকল স্থানীয় গ্রুপের সাথে কাজ করতে থাকেন খান আতা। এসময় কিছুদিন বিবিসি’র সাথেও কাজ করেছেন তিনি।

১৯৫৭-তে ফিরে আসেন ঢাকায়, এসেই তিনি পাকিস্তান অবজারভার-এ যোগ দেন। এরপর রেডিওতে গীতিকার, সঙ্গীত পরিচালক, আবৃত্তিকার এবং অভিনেতা হিসেবে যোগ দেন। খান আতা ১৯৫৯ সালে, পাকিস্তানি পরিচালক এ জে কারদার পরিচালিত উর্দু ভাষার চলচ্চিত্র ‘জাগো হুয়া সাভেরা’তে অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁর চলচ্চিত্রজীবন শুরু করেন। এতে তাঁর বিপরীতে নায়িকা ছিলেন ভারতীয় অভিনেত্রী তৃপ্তি মিত্র। চলচ্চিত্রে অভিনেতা হিসেবে তিনি ‘আনিস’ নামটি ব্যবহার করতেন (আনিস তাঁর প্রয়াত এক ভাইয়ের নাম)। ১৯৬১ সালে মুক্তি পায় তাঁর অভিনীত প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র এহতেশাম পরিচালিত ‘এ দেশ তোমার আমার’, এ ছবিতে তাঁর নায়িকা ছিলেন সুমিতা দেবী। পরের বছরগুলোতে তাঁর জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়তে থাকে। অভিনয় এছাড়াও তিনি চলচ্চিত্রের বিভিন্ন শাখায় কাজ করেছেন। খান আতার চলচ্চিত্রকর্মসমূহের মধ্যে:- এ দেশ তোমার আমার (নায়ক-গীতিকার-সুরকার), যে নদী মরু পথে (নায়ক-সহযোগী সঙ্গীত পরিচালক-গীতিকার), কখনো আসেনি (নায়ক-গায়ক-সঙ্গীত পরিচালক), সূর্যস্নান (সঙ্গীত পরিচালক), সোনার কাজল (সঙ্গীত পরিচালক-গীতিকার), কাঁচের দেয়াল (অভিনয়-সঙ্গীত পরিচালক-গীতিকার), সংগম (সঙ্গীত পরিচালক), দুই দিগন্ত (সঙ্গীত পরিচালক), অনেক দিনের চেনা (পরিচালনা, সঙ্গীত পরিচালক, গীতিকার), মিলন (সঙ্গীত পরিচালক), বাহানা (সঙ্গীত পরিচালক), সাগর (সঙ্গীত পরিচালক), মালা (সঙ্গীত পরিচালক), রাজা সন্ন্যাসী (পরিচালনা-প্রযোজনা-চিত্রনাট্য- গীতিকার -সঙ্গীত পরিচালনা), নবাব সিরাজউদ্দৌলা (পরিচালনা-প্রযোজনা-গীতিকার-সঙ্গীত পরিচালনা), সোয়ে নদীয়া জাগে পানি (পরিচালনা-প্রযোজনা-সঙ্গীত পরিচালনা), সাত ভাই চম্পা (প্রযোজনা-অভিনয়-গীতিকার), অরুন বরুন কিরনমালা (পরিচালনা-প্রযোজনা-গীতিকার), মনের মতো বউ (অভিনয়-গীতিকার-সঙ্গীত পরিচালক), জোঁয়ার ভাটা (পরিচালনা-প্রযোজনা-গীতিকার-সঙ্গীত পরিচালক), জীবন থেকে নেয়া (অভিনয়-সঙ্গীত পরিচালক), আপন পর (অভিনয়-গীতিকার-সঙ্গীত পরিচালক-চিত্রনাট্য), ভাই বোন (গীতিকার-সঙ্গীত পরিচালক), সুখ দুঃখ (পরিচালনা-প্রযোজনা-গীতিকার-সঙ্গীত পরিচালক), আবার তোরা মানুষ হ (পরিচালনা-প্রযোজনা- গীতিকার-সঙ্গীত পরিচালক-অভিনয়), ঝড়ের পাখি (প্রযোজনা-গীতিকার-সঙ্গীত পরিচালক-অভিনয়), আরশীনগর (প্রযোজনা- গীতিকার-সঙ্গীত পরিচালক- পরিচালক), পরশপাথর (পরিচালনা-প্রযোজনা-গীতিকার -সঙ্গীত পরিচালক), সুজন সখী (পরিচালনা-প্রযোজনা- গীতিকার-সঙ্গীত পরিচালক-অভিনয়), ত্রিরত্ন (পরিচালনা-প্রযোজনা-গীতিকার-সঙ্গীত পরিচালক-অভিনয়), উত্তরণ (সঙ্গীত পরিচালক-যৌথ) দিন যায় কথা থাকে (পরিচালনা- প্রযোজনা-গীতিকার-সঙ্গীত পরিচালক), হিসাব নিকাশ (পরিচালনা-প্রযোজনা- গীতিকার-সঙ্গীত পরিচালক), এখনো অনেক রাত (পরিচালনা-প্রযোজনা-গীতিকার-সঙ্গীত পরিচালক) অন্যতম।

খান আতা পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র সমূহ- ডানপিটে ছেলে (স্বল্পদৈর্ঘ্য শিশুতোষ চলচ্চিত্র), দুটি পাতা একটি কুঁড়ি (প্রামাণ্যচিত্র), গঙ্গা অামার গঙ্গা (প্রামাণ্যচিত্র), বাংলা কবি জসিম উদ্দিন (প্রামাণ্যচিত্র), চা বাগানের রোজ নামচা (প্রামাণ্যচিত্র), গানের পাখি আব্বাস উদ্দিন (প্রামাণ্যচিত্র) প্রভৃতি।
এছাড়া প্রমোদকার নামে সিবি জামান ও তাহের চৌধুরীর সাথে যৌথভাবে কয়েকটি চলচ্চিত্র বানিয়ে ছিলেন। আর মাটির মায়া, চোখের মনি প্রভৃতি চলচ্চিত্রে বহুমুখি ভুমিকা রেখেছিলেন।

খান আতার লেখা-সুর করা কালজয়ী ও জনপ্রিয় কিছু গান- তোমরা তাঁকে দেখেছ….., পথে পথে দিলাম ছড়াইয়ারে…,সোয়ে নদীয়া জাগে পানি…., একি সোনার আলোয় ভরিয়ে দিলে…., মন যদি ভেঙে যায় যাক কিছু বলবো না….,যারে যাবি যদি যা, পিঞ্জর খুলে দিয়েছি…., এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে…., এক নদী রক্ত পেরিয়ে বাংলার আকাশে রক্তিম সূর্য আনলে যারা…., তুমি চেয়েছিলে ওগো জানতে…., সব সখীরে পার করিতে নেব আনা আনা…., আগুন জ্বলেরে নিভানোর মানুষ নাই…,রঙধনু চোখে চোখে…., দিন যায় কথা থাকে…, মায়ের মতো আপন কেহ নাই…., এসো সবাই মিলে…., পাখিরে তুই দূরে থাকলে কিছুই আমার ভালো লাগে না…, জীবন সে তো পদ্ম পাতায় শিশির বিন্দু…, ইত্যাদি।

তিনি যেসব চলচ্চিত্রের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন- ‘সূর্যস্নান’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে এবং ‘কাঁচের দেয়াল’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে ১৯৬৫ সালে, পাকিস্তান চলচ্চিত্র উৎসব-এ তিনি পুরস্কার লাভ করেন। মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ১৯৬৯ সালে, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে ‘নবাব সিরাজউদ্দৌল্লা’ গোল্ডেন প্রাইজ মনোনীত। তাঁর পাওয়া জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার: শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার- সুজন সখী, শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার- ডানপিটে ছেলে, শ্রেষ্ঠ গীতিকার, শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক- এখনো অনেক রাত। এসব এছাড়াও তিনি অারো অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।

ব্যক্তিজীবনে খান আতাউর রহমান তিনবার বিয়ে করেছেন। তাঁর প্রথম স্ত্রী শার্লি। লন্ডন থাকাকালীন ১৯৫৮ সালে তিনি তাঁকে বিয়ে করেন। পরে বাংলাদেশে আসার পর ১৯৬০ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। শার্লি তাঁর সন্তানকে নিয়ে লন্ডন চলে যান। এরপরে তিনি কণ্ঠশিল্পী মাহবুবা রহমানকে বিয়ে করেন। তাঁর তৃতীয় স্ত্রী নীলুফার ইয়াসমীন, ১৯৬৮ সালে তিনি তাঁকে বিয়ে করেন। খান আতা ও মাহবুবা রহমানের ঘরে জন্ম নেন কণ্ঠশিল্পী রুমানা ইসলাম, রাহেলা ও ইমান। অপরদিকে খান আতা ও নিলুফার ইয়াসমীনের ঘরে জন্ম নেন বর্তমান প্রজন্মের জনপ্রিয় গায়ক ও অভিনেতা খান আসিফ আগুন।

বহুমাত্রিক প্রতিভায় সমৃদ্ধ খান আতা ছিলেন একাধারে- অভিনেতা, গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, গায়ক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, কাহিনীকার, প্রযোজক-পরিবেশক । একজন প্রতিভাবান, সৃজনশীল মেধাবী মানুষ হিসেবে, চলচ্চিত্রশিল্পের নানা শাখায় বিচরণ করেছেন তিনি। অভিনয়ের পাশা-পাশি তিনি প্রযোজনা-পরিচালনা ছাড়াও চলচ্চিত্রের বিভিন্ন শাখায়, অতিব কৃতিত্বপূর্ণ কাজ করে গেছেন।

কিংবদন্তী চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব খান আতা, প্রযোজক-পরিচালক হিসেবে আমাদেরকে উপহার দিয়েছেন জনপ্রিয় ও খ্যাতিমান সব চলচ্চিত্র। আবার প্রতিভাবান গীতিকার ও সুরকার হিসেবে আমাদের জন্য রেখে গেছেন অসংখ্য জনপ্রিয় ও কালজয়ী সব গান। একজন উচুমানের অভিনেতা হিসেবেও তিনি ছিলেন, প্রসংশিত, প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয়। একজন জাত অভিনেতার স্বাক্ষর রেখেছেন, অনবদ্য সৃজনশীল অভিনয়ের মাধ্যমে।
চলচ্চিত্র নির্মাণ করেও ব্যাপক আলোচিত ও প্রসংশিত হয়েছেন খান আতা । চলচ্চিত্র পরিচালনাতেও তিনি, তাঁর মেধা মননশক্তি দিয়ে সৃজনশীল কাজ করে গেছেন। তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহ, সে সময়ে চলচ্চিত্রদর্শক ও সমালোচক কর্তৃক সমাদৃত ও প্রসংশিত হয়েছে।

চলচ্চিত্র সম্পর্কে বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ ছিলেন তিনি। চলচ্চিত্র সম্পর্কে তাঁর, বিদেশে অর্জিত জ্ঞান ও শিক্ষা দিয়ে, নিজের দেশের চলচ্চিত্রশিল্পকে করে গেছেন সমৃদ্ধ। এফডিসি প্রতিষ্ঠার পর, এ শিল্পের ভিত রচনায় ও চলচ্চিত্রশিল্পকে গড়ে তোলার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে যে ক’জন নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন, খান আতা ছিলেন তাঁদের অন্যতম একজন।

অসাধারণ প্রতিভাবাসম্পন্ন একজন প্রগতিশীল, আধুনিক চিন্তা-চেতনার এক মহিরূহ চলচ্চিত্রব্যক্তিত্ব খান আতা। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পে তথা শিল্প-সংস্কৃতিতে তাঁর অবদান, ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন