মানবাধিকারের পক্ষে সোচ্চার কণ্ঠস্বর সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান। যেখানে অন্যায়-অবিচার, সেখানেই আওয়াজ তোলেন তিনি। গত জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থান চলাকালে ছাত্র-জনতার পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। গান-কবিতার পাশাপাশি রাজপথেও ছিলেন সামনের সারিতে। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়েও অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে নিজের প্রতিবাদী কণ্ঠ জারি রেখে চলেছেন।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারের দাবিতে বহু আগে থেকেই সোচ্চার সায়ান। এবার এই ইস্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। আজ বুধবার সামাজিকমাধ্যমে এক পোস্টে একহাত নিয়েছেন নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিকেও (এনসিপি)। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এনসিপি, জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দিবেন না তিনি।
সায়ান বলেন, ‘জামায়াতের (বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী) সাথে হাত মিলিয়ে কোলাকুলি করে “ভোটের রাজনীতি” করতে গিয়ে এই দেশে কিছুদিন আগেই একটা বড় দলের ত্রাহি মধুসূদন দশা হয়েছিল। আওয়ামী এমন নতুন ধারাবাহিক গুরুতর পাপকর্ম করেছে দেশের মানুষের বিপক্ষে, যে সেই দলের গুরুপাপকে ভুলিয়ে দিয়েছে প্রায়। নতুন দল এনসিপি’র সার্জিসরা, হাসনাতরা প্রথম থেকেই তাদের রাজনীতি পরিস্কার করে দিয়েছে। ধন্যবাদ। সেই হিসেবে দেশের মানুষের, আমাদের মতো সাধারণ মানুষের অনেক সুবিধা হলো। দিনের শেষে ভোটেই তো দাঁড়াতে হবে আপনাদের। জামায়াতকে বুকের সাথে আগলে রেখে, রাজাকারের “বেকসুর খালাসকে” সেলিব্রেট করে আপনারা আমাদের ভোট চান? বিবেকবান স্বাভাবিক সাধারণ মানুষের? একাত্তরের পরে জন্মেছি বলে কি জামায়াত চিনি না? আল-বদর চিনি না? বীরাঙ্গনার ব্যথা বুঝি না? এই দেশের ছোট ছোট বাচ্চারা, ইতিহাসবিদদের মতোন দিন-তারিখের রেফারেন্স দিয়ে জামায়াতের জন্ম ইতিহাস বলতে পারবে না হয়তো। কিন্তু জামায়াত কী, তাদের আদর্শ কী, তারা এই দেশের মানুষকে নিয়ে কী করতে চায়, তা আজকে সকালে জন্ম নেওয়া বাচ্চাটাও কালকে বিকেলের মধ্যে শিখে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এনসিপি যে এই জায়গাটা ধরতে পারে নাই, তা তাদের বুদ্ধিমত্তার নির্দেশক। তারা নতুন দেশ গড়ার কথা বলে নিজেদের ভোটের জন্য জামায়াতকে বুকে টেনেছে বলে মনে হয়। আবার তাদের আরেকটি সঞ্চয় হলো “আওয়ামী-ঘৃণা”। আজকে দেশে অনেক অন্যায় ঘটছে। তাদের সেসবে হেলদোল নাই। কিন্তু জামায়াত আর আল-বদরকে ভালোবাসায় তারা আগুয়ান। ধন্যবাদ এই স্বচ্ছতার জন্য।’
যোগ করে এই সংগীতশিল্পী বলেন, ‘আমি প্রতি মুহূর্তে নিজের রাজনীতিকে পরিবর্তন করার পক্ষে। আজকে যাকে ভালো লাগছে, কালকে তাকে ছুড়ে ফেলে দিতে দ্বিধা করি না, মাটির প্রশ্নে। সেই হিসাবে আমার রাজনৈতিক-ঈমান খুব তরল এবং সেটাই আমি চাই। নাহিদরা যখন বুক পেতে দিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল গত জুলাইতে, ওদের জন্য ভালোবাসা ছিল, সমর্থন ছিল। সেদিন সেটাই ছিল আমার রাজনীতি। ওদের সেই মৃত্যুর মুখে দাঁড়ানো, সেটাকে সেই সময়ের সত্যিকারের দেশপ্রেম, আর মানুষ প্রেম, মাটি-প্রেম মনে হয়েছিল। তার জন্য আমি একটুও দুঃখিত হবো না কোনোদিন। আমার সেইদিনের সমর্থনের জন্য আমি কোনোদিন অনুতপ্ত হবো না। নেভার!’
সবশেষে সায়ান বলেন, ‘গত কয়েক মাসের তাদের (এনসিপি) অনেক আচরণ, অনেক কিছু দেখতে দেখতে দেখছি, আজকে সেই একই দলের ছেলে-মেয়েরা যে আজহারের বেকসুর খালাসকে উদযাপন করল, আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সমর্থন করল (এমনকি লজ্জায় বা কৌশলে চুপ করে থাকল না, প্রকাশ্যে সমর্থন করল), আর নাদিরা ইয়াসমিনের অন্যায়ভাবে বদলির বিরুদ্ধে একটা কথাও বলল না, এই দেশের একজন মানুষ হিসেবে এটাই আমার আপাতত রাজনীতি যে, এরপর এই নতুন দলটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আজকে থেকে বর্জন করলাম। এটুকু করার কথা ভেবেই নিজের অশান্ত মনকে আমি খানিকটা শান্তি দিতে পারছি। আগামী নির্বাচনে আমি এনসিপি, জামায়াত- এই সমমনা দলগুলোকে ভোট নিজে তো দেবই না, বরং মানুষকে অনুরোধ করব যেন তারা এই দলগুলো থেকে দূরে থাকেন। একজন একক ব্যক্তি হিসেবে এটাই আমার সাধ্য। আই উইল নেভার সাপোর্ট এনসিপি (কখনোই এনসিপিকে সমর্থন করব না)!’
উল্লেখ্য, গতকাল মঙ্গলবার একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে বেখসুর খালাস দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলা থেকে তার এই খালাস পাওয়ার ঘটনায় সামাজিকমাধ্যমে নেটিজেনেদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।