English

26 C
Dhaka
বুধবার, নভেম্বর ৫, ২০২৫
- Advertisement -

কালজয়ী গানের সুরস্রষ্টা সুবল দাস এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ

- Advertisements -

এ কে আজাদ: সুবল দাস। সুরকার-সঙ্গীত পরিচালক। একজন কিংবদন্তী সঙ্গীতজ্ঞ। বাংলাদেশের সঙ্গীতজগতের যাদুকরি এক প্রতিভা তিনি। অসংখ্য চলচ্চিত্রের সুপারহিট, জনপ্রিয়, কালজয়ী গানের সুরস্রষ্টা । মেলোডিয়াস বাংলা গানের যাদুকর- সুবল দাস। বিখ্যাতসব চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করে তিনি জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি অর্জন করেন। সুবল দাস ছিলেন প্রচণ্ড রকমের অন্তর্মুখী-প্রচারবিমুখ এক মানুষ।

যার কারণে বাংলা সঙ্গীতে তাঁর অনেক অনেক অবদান থাকা সত্বেও, তিনি অনেকটাই অপ্রকাশিত থেকে গেছেন। বাংলা আধুনিক গানের বিকাশে অপরিসীম অবদান রাখা এই মানুষটির মৃত্যুবার্ষিকী আজ । তিনি ২০০৫ সালের ১৬ আগস্ট, চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভারতে, মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। প্রয়াত এই গুণি সঙ্গীতজ্ঞ’র স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। তাঁর আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।

সুরকার-সঙ্গীত পরিচালক সুবল দাস ( সুকুমার চন্দ্র দাস) ১৯২৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়, জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম রশিকলাল দাস, মা কামিনী দাস। ছোটবেলা থেকেই তাঁর সঙ্গীত ও ফুটবল খেলার প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল। তিনি একসময় প্রথমবিভাগে ফুটবল খেলেছেন। ঢাকার আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের গোলকিপার ছিলেন সুবল দাস।

সঙ্গীত ও বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আগ্রহ থাকায় পরিবারের সম্মতিতে সুবল দাস, সেতার শিখেন ওস্তাদ খাদেম হোসেন খান এবং ওস্তাদ আয়াত আলী খান এর কাছ থেকে।
সঙ্গীতে পারদর্শিতা ঝালাই করতে তিনি, বন্ধুদের করা মঞ্চনাটকে সঙ্গীত পরিচালনা শুরু করেন। সঙ্গীতের প্রতি বড় বেশি আগ্রহ থাকায় একসময় ফুটবল খেলা ছেড়ে দিয়ে আত্মনিয়োগ করেন শুধু সঙ্গীতেই।

১৯৬৩ সালে ঢাকা রেডিওতে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন, আর ১৯৬৭ সালে টেলিভিশনে সুরকার হিসেবে যোগ দেন সুবল দাস ।

সুবল দাস ১৯৫৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ফতেহ লোহানী পরিচালিত ‘আকাশ আর মাটি’ ছবির সঙ্গীত পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্র অঙ্গনে আসেন । সুবল দাস সুরারোপিত ও সঙ্গীত পরিচালিত অন্যান্য উল্লােখযোগ্য ছবিসমূহের মধ্যে- কাজল, ইন্দন, সাতরং, আলিবাবা, জুলেখা, পিয়াসা, প্রীত না জানে রীত, কংগন, স্বর্ণকমল, ভানুমতি, স্বরলিপি, তানসেন, দর্পচূর্ণ, এখানে আকাশ নীল, দুরন্ত দুর্বার, অনির্বাণ, চাবুক, মামা ভাগ্নে, অনেক দিন আগে, উৎস্বর্গ, অনেক প্রেম অনেক জ্বালা, ডাক পিয়ন, আলো তুমি আলেয়া, নকল মানুষ, উপহার, হাসি কান্না, যোগ বিয়োগ, গৃহলক্ষ্মী, হারানো মানিক, লালুভুলু, ঝুমুর, শীষনাগ, অচেনা অতিথি, এরাও মানুষ, রক্তশপথ, উজ্জল সূর্যের নীচে, রাজমহল, বুলবুল-এ বাগদাদ, শীষনাগ, মধুমতি, শহর থেকে দূরে, ওয়াদা, আলিফ লায়লা, রাজকন্যা, রাজনন্দিনী, আখেরী নিশান, কলংকিনী, গাঁয়ের ছেলে, দোস্তী, অনুরাগ, ভালো মানুষ, পুত্রবধূ, ভাঙ্গাগড়া, পদ্মাবতী, সওদাগর, চিৎকার, নরম গরম, রাজসিংহাসন, আবেহায়াত, গলি থেকে রাজপথ, শাহীচোর, তিন বাহাদুর, হাসান তারেক, জোস, জালিম, সম্রাট, আন্দাজ, মা ও ছেলে, মায়ের দাবী, বাহাদুর মেয়ে, তালাচাবি, শিরি ফরহাদ, তালুকদার, খামোশ, বিষকন্যার প্রেম, সোনার সংসার, সুলতানা ডাকু, অগ্নিকন্যা, রঙ্গীন অরুণ বরুণ কিরণমালা, পয়সা পয়সা, গোলমাল, রাঙাভাবী, ববি, প্রায়শ্চিত, অন্ধ বিশ্বাস, গরীবের বউ, জিজ্ঞাসা, লটারী, টাকার অহংকার, অবুঝ সন্তান, আঞ্জুমান, বাজীগর, লাটসাহেব, অন্যতম।

সুবল দাস তিনটি বিখ্যাত ছবির শুধু ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক করেছেন। ছবি তিনটি হলো- অবুঝ মন, প্রতিশোধ এবং অশ্রু দিয়ে লেখা। তিনি ফেরারী নামে একটি ছবিও প্রযোজনা করেছেন।

সুবল দাস-এর সুর করা কালজয়ী জনপ্রিয় কিছু গান- তুমি যে আমার কবিতা…, ও মেয়ের নাম দিব কী ভাবি শুধু তাই..,
এই পৃথিবীর পান্থশালায় গাইতে এসে গান.., আমি সাতসাগর পাড়ি দিয়ে.., আমি মানুষের মতো বাঁচতে চেয়েছি…,
যদি বউ সাজো গো আরো সুন্দর লাগবে গো.., সামাল সামাল সামাল সাথী ধীরে ধীরে চলরে…, সন্ধ্যারও ছায়া নামে এলোমেলো হাওয়ায়…, জীবনও আধারে, পেয়েছি তোমারে…, এই বৃষ্টি ভেজা রাতে চলে যেও না…, গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে, কি হবে…, শিল্পী আমি শিল্পী, তোমাদেরই গান শোনাবো…, যখন থামবে কোলাহল নিঝুম চারিদিক…, পান খাইয়া ঠোঁট লাল করিলাম বন্ধুর দেখা পাইলাম না.., চলে যায় যদি কেউ বাঁধন ছিড়েঁ কাঁদিস কেন মন.., বন্ধু তুমি শত্রু তুমি, তুমি আমার সাধনা…,
ওরে ও বাঁশিওয়ালা…, ভালোবাসার স্বপ্নে ঘেরা এইতো আমার ঘর…, আমার নাম সুমন, এমন একটা মন…, সজনী গো ভালোবেসে এতো জ্বালা কেনো বলো না…,
তোমাদের সুখের এই নীড়ে…, দিন দুপুরে মনের ঘরে…, কোথায় যাব বন্ধু বলো, কোথায় আমার ঘর…,
দোহাই লাগে সুজন ক্ষমা করে দাও আমায়…, তুমি জন্মভূমি জননী…, খাঁচা ভেঙে পাখি হবে অচেনা…,
রূপনগরের রাজা, তুমি আজ পাবে সাজা..,
পদ্মাবতী বেদেনী আমার প্রাণ সজনী…, সজনী রজনী বৃথা চলে যায়…, ঘূর্ণি চাকায় ঘুরছে জীবন এই শহরে…, একি বাঁধনে বলো জড়ালে আমায়…,আজকের এই চাঁদের আলো লাগে কত ভালো…, অনেক প্রেমে রাঙানো এ মন…, চন্দ্র তারায় মিছে খুঁজেছি তোমায়…, কত যে ভালো বাসি তোমারে…, লাইলী আয় আয় আয় আমি তোর মজনু দেওয়ানা.., গুরু উপায় বলো না, জনম দুখি কপাল পোড়া গুরু আমি একজনা…, ইত্যাদি।

বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতের যাদুকরি এক প্রতিভা তিনি। অসংখ্য চলচ্চিত্রের সুপারহিট, জনপ্রিয়, কালজয়ী গানের সুরস্রষ্টা তিনি। মেলোডিয়াস বাংলা গানের যাদুকর, কিংবদন্তী সঙ্গীতজ্ঞ- সুবল দাস।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে হৃদয় ছোঁয়া শ্রুতিমধুর গান সৃষ্টির করে, এক অন্যরকম সুরের ঝংকার তুলেছেন দর্শক-শ্রোতাদের হৃদয়ে। বিখ্যাতসব চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করে তিনি জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি অর্জন করেন। বাংলা আধুনিক গানের বিকাশে তার অবদান অপরিসীম।

সুবল দাস ছিলেন প্রচণ্ড রকমের অন্তর্মুখী-প্রচারবিমুখ এক মানুষ। যার কারণে বাংলা সঙ্গীতে তাঁর অনেক অনেক অবদান থাকা সত্বেও, তিনি অনেকটাই অপ্রকাশিত থেকে গেছেন। এতো এতো জনপ্রিয়-কালজয়ী, ভালো গানের সুরস্রষ্টা হয়েও ছিলেন, নিরংহকারী সরল-সহজ, উদার মনের মানুষ।
এমন একজন সৃজনশীল সঙ্গীতজ্ঞ একবারও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পর্যন্ত পাননি। কোনো রাষ্ট্রীয় পুরস্কারেও ভূষিত করা হয়নি তাঁকে। কতটা আশ্চার্যের বিষয় যে, এদেশের সঙ্গীতের জন্য সারাজীবন নিরলসভাবে কাজ করে গেলেও তাঁর মৃত্যুতে সে সময়ে রাস্ট্রের পক্ষ্য থেকে, কেউ শোক প্রকাশও করেননি । সঙ্গীতজগতের এই মহিরূহ ব্যক্তিত্বর প্রতি আমাদের কি উদাসিনতার চুরান্ত প্রদর্শন।

হে সুরের মহান কারিগর আপনার সুরের মূর্ছনায় আজও আমাদের হৃদয় বিমোহিত হয়, উদ্বেলিত হয়। আপনার সুরের মায়াজালে আজও আমরা হই বন্দি, ভালো লাগায়-ভালোবাসায় আজও ভরে ওঠে মন-প্রাণ আপনার গান শুনে শুনে। আমাদের অভিবাদন-ভালোবাসা-শ্রদ্ধাঞ্জলিই হোক আপনার প্রাপ্ত সম্মান-পুরস্কার।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/7rgv
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন