English

28 C
Dhaka
শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
- Advertisement -

কিংবদন্তী অভিনেতা ইনাম আহমেদ-এর ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

- Advertisements -

কিংবদন্তী অভিনেতা ইনাম আহমেদ-এর ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০০৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর, সিলেটে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। প্রয়াত এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের প্রতি জানাই বিন্ম্র শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

ইনাম আহমেদ ১৯২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার কোচাই গ্রামে, জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তাঁর অভিনয়ের প্রতি প্রচন্ড ঝোঁক ছিল, মাত্র ৮ বছর বয়সে তিনি মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন৷
১৯৪১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরে আসাম সিভিল পুলিশের চাকুরীতে যোগ দেন ৷ আসামের ডিব্রুগড়ে থাকাকালে বিভিন্ন নাটকে নিয়মিত অভিনয় করতেন তিনি ৷

৩ বছর পুলিশে চাকরি করার পর ইনাম আহমেদ, চাকরি ছেড়ে কলকাতায় চলে যান ৷ সেখানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন, পাশাপাশি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ খুজঁতে থাকেন। ১৯৪৩ সালে প্রেমেন্দ্র মিত্র’র পরিচালনায় ‘সমাধান’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে যান। এই ছবিতে তিনি ‘অরুন চৌধুরী’ ছদ্মনামে অভিনয় করেন।

Advertisements

১৯৫০ সালে ঢাকায় চলে আসেন ইনাম আহমেদ । এখানে এসে চাকরির পাশাপশি মঞ্চনাটকে অভিনয় করতে থাকেন।
ঢাকায় প্রথম অভিনয় করেন, এদেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এ। ১৯৫৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবির পরিচালক আব্দুল জব্বার খান । প্রথম ছবিতেই তিনি কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান এবং এই সুযোগে তিনি তাঁর অভিনয় দক্ষতার প্রমান দেন, বেশ ভালোভাবেই।
তাঁর অভিনীত আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন স্বল্পদৈর্ঘ কাহিনীচিত্র (ইরিধান চাষাবাদ নিয়ে নির্মিত) ‘ওয়ান একর অব ল্যান্ড’ (ছবিতে আরো ছিলেন গোলাম মোস্তফা ও শবনম) ছবিটি ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার লাভ করে ১৯৫৮ সালে।

ইনাম আহমেদ অভিনীত অন্যান্য ছবির মধ্যে- আখেরি নিশান (পাকিস্তানের ছবি), যে নদী মরু পথে, হারানো দিন, সূর্যস্নান, সোনার কাজল, চান্দা, জোঁয়ার এলো, নতুন সুর, কাঁচের দেয়াল, দুই দিগন্ত, সুতরাং, মেঘ ভাঙ্গা রোদ, কাজল, রূপবান, ভাওয়াল সন্ন্যাসী, নাচঘর, প্রীত না জানে রীত, বন্ধন, ইন্ধন, ইস ধরতি পার, পাতাল পুরীর রাজকন্যা, কার বউ, আনোয়ারা, মহুয়া, ময়ুরপঙ্খী, রাখাল বন্ধু, আলী বাবা, শীত বসন্ত, ময়নামতি, নীল আকাশের নিচে, আলোমতি, টাকা আনা পাই, আপন পর, একই অঙ্গে এত রূপ, আপন দুলাল, শীত বসন্ত, জোঁয়ারভাটা, স্বরলিপি, জীবন সঙ্গীত, জয় বাংলা, মানুষের মন, মন নিয়ে খেলা, অবাক পৃথিবী, আলোর মিছিল, সাগর ভাসা, অবসান, সুজন সখি, জয়পরাজয়, নিশান, যাদুর বাঁশী, গুনাহগার, আসামী হাজির, বধূ বিদায়, তুফান, মধুমিতা, পদ্মাবতী, নসীব, রাই বিনোদিনী, সোনাই বন্ধু, শিরি ফরহাদ, চন্দ্রনাথ, শুভদা, রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত, সাধনা, গৃহ বিবাদ, সমস্যা, জেলের মেয়ে রোশনী, উল্লেখযোগ্য।

শক্তিমান অভিনেতা ইনাম আহমেদ টেলিভিশনেও অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন। ছোট পর্দায়ও ছিল তাঁর জনপ্রিয়তা।

ব্যক্তিজীবনে ইনাম আহমেদ ১৯৪৭ সালে, রাজিয়া খানমের সংগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের চার ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। তাঁর এক ছেলে মারুফ আহমেদ (অভিনেতা ও বিটিভির সংবাদ পাঠক) এবং মেয়ে আসমা আহমেদ (বিটিভির সংবাদ পাঠিকা)।

Advertisements

আমাদের চলচ্চিত্রের প্রথম ভিলেন। বলতে গেলে জাঁদরেল ভিলেন। অসাধারণ প্রতিভাবান ও শক্তিমান অভিনেতা, ইনাম আহমেদ। আজন্ম ভালবাসা তাঁর অভিনয়ের প্রতি, শিল্প-সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্রের প্রতি। তাই, শিক্ষিত এই মানুষটি নিরাপদ ও ভালোমানের চাকরি ছেড়ে দিয়ে, শিল্প-সংস্কৃতি তথা অভিনয় চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন আজীবন। তুখোর অভিনেতা হিসেবে সর্বজন পরিচিত ও সম্মানিত ছিলেন তিনি।
ঢাকাই চলচ্চিত্রের ঐতিহাসিক সূচনা লগ্নের সংগে জড়িয়ে আছে তাঁর নাম। আমাদের দেশের মাটিতে নির্মিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এ, ভয়ংকর সমশের ডাকাতের চরিত্রে অভিনয় করে কিংবদন্তী হয়ে আছেন তিনি ।

এদেশের শিল্প-সংস্কৃতি চর্চায় নিরলস ভূমিকা রেখে গেছেন ইনাম আহমেদ। আমাদের দেশের চলচ্চিত্রশিল্পের গোরাপত্তনে যারা ভূমিকা রেখেছেন, তিনি তাদের অন্যতম একজন। শুরুর দিকে চলচ্চিত্রশিল্পকে বাণিজ্যিকভাবে সুদৃঢ় ভিতের উপর দাঁড় করাতে, তাঁরও রয়েছে বিশেষ অবদান।
আমাদের দেশের প্রথম চলচ্চিত্র থেকে শুরু করে, ৫০ বছরেরও অধিক সময় নিবেদিত থেকেছেন অভিনয়ে। চলচ্চিত্রশিল্পের তথা শিল্প-সংস্কৃতির সমৃদ্ধিতে, বছরের পর বছর ভূমিকা রেখে গেছেন তিনি, তারপরও না পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, না পেয়েছেন রাস্ট্রীয় কোন পদক। এ ক্ষেত্রে তাঁর প্রাপ্তির ঝুলি শুন্য!

জীবদ্দশায় তাঁকে আমরা যথাযথ সম্মান দিতে পারিনি হয়তো। সরকারিভাবে মরণোত্তর কোন পদক কি পেতে পারেন না- তিনি। এখনও কি উপেক্ষিত থাকবেন,
কালের সাক্ষী মহান এই অভিনেতা।

কোনো পুরস্কার, কোনো পদক এখন আর হয়তো তাঁকে স্পর্শ করবে না। তাঁকে ভালবাসায় ছুঁয়ে থাকবে লক্ষ সিনেমাপ্রেমী দর্শক। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে, ইনাম আহমেদ-এর নাম লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন