বলিউডের ইতিহাসে রেখা এমন এক নাম, যার সৌন্দর্য আর অভিনয়ের মুগ্ধতা এখনও মানুষের মন থেকে মুছে যায়নি। সত্তরের গণ্ডি পার হয়ে গেলেও রেখার সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ায় আগের মতোই। অভিনয়ের পাশাপাশি নৃত্যে পারদর্শী এই অভিনেত্রী একসময় শুধু অভিনয় নয়, এককভাবে পর্দায় রোমান্সের সংজ্ঞা বদলে দিয়েছিলেন।
শিশু বয়সে ১৯৫৮ সালে দক্ষিণী সিনেমায় হাতে খড়ি রেখার।
তবে বলিউডে তাঁর রাজত্ব শুরু সত্তরের দশক থেকে। বিশেষ করে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে জুটি— যেটি একসময় গুজব আর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। রেখার ক্যারিয়ারকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। তাঁর অভিনয়ের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল— ক্যামেরার সামনে থাকলে তিনি পুরোপুরি চরিত্রে মিশে যেতেন।
রোমান্টিক দৃশ্যে তিনি এতটাই স্বাভাবিক ছিলেন যে, দর্শক বিভ্রমে পড়ে যেত, পর্দার প্রেম যেন বাস্তবেই ঘটছে।
কিন্তু এই বিশ্বাসযোগ্য অভিনয়ই রেখাকে মাঝেমধ্যে বিতর্কের মুখে ফেলেছে। ১৯৯৭ সালে বাসু ভট্টাচার্যের পরিচালনায় ‘আস্থা: ইন দ্য প্রিজন অফ কিং’ সিনেমা মুক্তি পায়। ছবিতে রেখার বিপরীতে ছিলেন শক্তিমান অভিনেতা ওম পুরী।
সেখানে মানসী নামে এক গৃহিণীর চরিত্রে দেখা যায় রেখাকে, যিনি সংসারের টানাপড়েন আর সামাজিক চাপে গৃহিণী থেকে যৌনকর্মীর জীবনে পা রাখতে বাধ্য হন। ছবিতে রেখা আর ওমের একাধিক ঘনিষ্ঠ দৃশ্য আজও বলিউডের অন্দরমহলে গল্প হয়ে বেঁচে আছে। শুটিং সেটে একটি দৃশ্যের শুটিং চলাকালীন এমনই বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। কানাঘুষো আছে, একটি দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে রেখা ও ওম এতটাই বাস্তবিক হয়ে গিয়েছিলেন যে, চেয়ারের ওপরের ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে দুজনের ওজনের চাপে চেয়ার ভেঙে যায়! অনেকে বলেন, দুজনেই নাকি চরিত্রে এতটাই ডুবে গিয়েছিলেন যে, নিয়ন্ত্রণ হারান। ছবিটি মুক্তির পর এই দৃশ্য নিয়েই সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয় রেখাকে ঘিরে।
অথচ রেখা কখনো এ নিয়ে মুখ খোলেননি। বরং এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট বলেছিলেন— ‘ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে আমি যেকোনো চরিত্রে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারি। মা, যৌনকর্মী, খলনায়িকা— কোনো চরিত্রই আমার কাছে অসম্ভব নয়।’
একই সঙ্গে রেখা জানান, ‘এক সন্তানের মা হয়ে কীভাবে একজন নারী যৌনকর্মী হতে পারে— এ নিয়ে যে সমালোচনা হচ্ছে, তাতে আমার কিছু আসে যায় না।’
তবে ঘনিষ্ঠ দৃশ্য নিয়ে রেখা সবসময়ই পেশাদার থাকলেও ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে একবার অভিনেতার আচরণে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন তিনি। লেখক ইয়াসের উসমানের বই ‘রেখা: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ থেকে জানা যায়, ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে এক অভিনেতা নাকি রেখার অনুমতি ছাড়াই শুটিং সেটে সরাসরি ঠোঁটে চুমু খেয়ে ফেলেন। রেখা সঙ্গে সঙ্গে আপত্তি তুলেছিলেন, যদিও অভিনেতা বলেছিলেন চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে তিনি তা করেছেন। পরিচালক অবশ্য বলেছিলেন, দৃশ্যের প্রয়োজনীয়তা রেখাকে আগেই জানানো হয়েছিল।