চলচ্চিত্রকার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন-এর আজ ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের ২০ সেপ্টেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। প্রয়াত এই চিত্রপরিচালক-এর প্রতি জানাই বিন্ম্র শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে, সিরাজগঞ্জ জেলার, উল্লাপাড়া উপজেলার পঞ্চকোরাইশী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর বাবা জয়নাল আবেদীন, স্কুল ইন্সেপ্টকর ছিলেন। মা রহমতেন্নেছা। তাঁরা তিন ভাই, দুই বোন। বড় দুইভাই, রফিউদ্দিন ও শফিউদ্দিন দুজনেই উকিল। বোন দুজন, জোহরা ও আনোয়ারা। মহিউদ্দিন সাহেবের এক ভাতিজা, এ কিউ খোকন চলচ্চিত্র পরিচালক ।
মহিউদ্দিন সাহেব, পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। বিএ পাস করেন কলকাতা থেকে।
তিনি ‘ইত্তেহাদ’ পত্রিকায় সাংবাদিকতার মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন । পরে তিনি রেডিওতে যোগ দেন ।
রেডিওতে চাকুরী করাকালীন, তখনকার সময়ের মঞ্চ ও চলচ্চিত্রের লোকজনদের সাথে পরিচয় হয়। তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে চলে আসেন।
মহিউদ্দিন পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘মাটির পাহাড়’, মুক্তিপায় ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে। এই ছবিতে নায়ক-নায়িকা ছিলেন, সুলতানা জামান, রওশন আরা-কাফি খান।
মহিউদ্দিন পরিচালিত অন্যান্য
চলচ্চিত্রসমূহ- তোমার আমার, রাজা এলো শহরে, শীত বিকেল, গোধূলীর প্রেম, গাজী কালু চম্পাবতী, দুরন্ত দুর্বার, ঈসা খাঁ, বড় ভালো লোক ছিল।
১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে, ‘বড় ভালো লোক ছিল’ চলচ্চিত্রটি নির্মান করে তিনি, শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ অর্জন করেন।
ব্যক্তিজীবনে মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বিয়ে করেন রাজিয়া খাতুনকে। তাদের তিন মেয়ে দুই ছেলে। ইতি, রুবাই, মান্না, পান্না, আর উর্মি। ছোট মেয়ে উর্মি মারা গেছে অনেক আগে।
চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিবেশনা প্রতিষ্ঠান ‘শাওন সাগর লিঃ’-এর চেয়ারম্যান ছিলেন মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ।
এদেশের চলচ্চিত্রশিল্পের প্রায় সূচনালগ্ন থেকেই তিনি এর সাথে জড়িত হন।
আমাদের দেশের চলচ্চিত্রের ঊষালগ্নে যারা, এই শিল্পের উন্নয়নের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছেন, তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম একজন।
দেশীয় চলচ্চিত্রের খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। চলচ্চিত্র সম্পর্কে তাঁর ছিল অসামন্য প্রতিভা, জ্ঞান ও পান্ডিত্ব। চলচ্চিত্রটা তিনি খুব ভালো বুঝতেন। চলচ্চিত্রের লোকদের কাছে তিনি ছিলেন, শ্রদ্ধেয়-সম্মানীয় ব্যক্তিত্ব। অনেক নামি-দামি ব্যক্তিরা তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে ‘স্যার’ বলে ডাকতেন। চলচ্চিত্রের লোকদের কাছ থেকে তিনি পেয়েছেন অপরিসীম ভালোবাসা।
শুদ্ধ চলচ্চিত্র চর্চার নিবেদিত প্রাণ, খাঁটি ভালো মানুষ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে চিরঅম্লান হয়ে থাকবেন। শত বছর পেরিয়েও, চলচ্চিত্রের কেউ হয়তো বলবে- সত্যিই ‘বড় ভালো লোক ছিল’।
ছবি– ফিরোজ এম হাসান।
The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/tqpw
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন