English

31 C
Dhaka
শনিবার, মে ৪, ২০২৪
- Advertisement -

চলচ্চিত্রের মেধাবী মানুষ আশীষ কুমার লোহ’র মৃত্যুবার্ষিকী আজ

- Advertisements -

আজাদ আবুল কাশেম: আশীষ কুমার লোহ অভিনেতা, নাট্যকার, চলচ্চিত্রের কাহিনী-চিত্রনাট্যকার, সংলাপ লেখক। একজন প্রতিভাবান ও মেধাবী অভিনেতা ছিলেন। যে কোনো ছবিতে, যে কোনো চরিত্রে তাঁর অনবদ্য অভিনয় দর্শকদের বিমোহিত করত। তাঁর অভিনীত প্রতিটি চরিত্র ছিল প্রাণবন্ত। কয়েকটি ছবিতে নায়ক চরিত্রেও অভিনয় করেছেন। অভিনয় করেছেন ভিলেন হিসেবেও। চরিত্রের প্রয়োজনে তিনি যে কোনো ধরণের চরিত্রে অভিনয় করার ক্ষমতা রাখতেন। তবে আশীষ কুমার লোহ কৌতুক অভিনেতা হিসেবেই সর্বাধিক পরিচিতি পেয়েছেন। জনপ্রিয়তার পেয়েছেন।

নামি-দামি অনেক পরিচালকদের চলচ্চিত্রের কাহিনী-চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন আশীষ কুমার লোহ। সেসব চলচ্চিত্র হয়েছে ব্যবসাসফল ও জনপ্রিয়।

আমাদের চলচ্চিত্রের এই মেধাবী মানুষটির মৃত্যুবার্ষিকী আজ । তিনি ১৯৯৪ সালের ৩ নভেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৭ বছর। প্রয়াত এই গুণি অভিনেতার স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।

Advertisements

আশীষ কুমার লোহ ১৯৩৭ সালের ১০ অক্টোবর, ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার, উচাখিলা ইউনিয়নের, গোল্লা জয়পুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষে তিনি ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে ম্যাট্রিক পাস করে তিনি ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। আনন্দমোহন কলেজ থেকে ১৯৫৫ সালে আইএসসি পাস করেন তিনি।

কলেজে পড়াকালীন সময়ই আশীষ কুমার লোহ নাটকে অভিনয়ের দিকে ঝুঁকে পরেন। কলেজের বার্ষিক নাটকে অভিনয় করতেন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কৌতুক প্রদর্শন করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। স্থানীয় টাউন হল মঞ্চে নিয়মিত নাটকে অভিনয় করে সেই সময়ে বেশ সুনাম অর্জন করেন তিনি ।

এক সময় তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং ঢাকার বিভিন্ন মঞ্চনাটকে অভিনয় করে বেশ পরিচিতি পান ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। এই সময় তিনি বেতার ও টেলিভিশনে অভিনয় শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
আশীষ কুমার লোহ বেতার ও টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করার পাশাপাশি, নাটক লেখাও শুরু করেন। কালক্রমে তিনি একজন খ্যাতিমান নাট্যকার এবং অভিনেতা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশন ঢাকা কেন্দ্রের ধারাবাহিক হাসির নাটক- ‘হীরা চুনি পান্না’তে তিনি ‘হীরা’র ভূমিকায় অভিনয় করে তখনকার সময়ে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

১৯৬১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত, মুস্তাফিজ পরিচালিত ‘হারানো দিন’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত হন আশীষ কুমার লোহ । তিনি আরো যেসব ছবিতে অভিনয় করেন তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য- কারওয়া, বেগানা, ভাওয়াল সন্যাসী, সুতরাং, নদী ও নারী, ক্যায়সে কাহু, কার বউ, ফির মিলেঙ্গে হাম দোনো, তালাশ, আপন দুলাল, আলী বাবা, নয়ন তারা, ভাগ্যচক্র, মোমের আলো, অপরিচিতা, রূপবানের রূপকথা, পিয়াসা, অবাঞ্চিত, আলোর পিপাসা, মায়ার সংসার, স্বর্ণ কমল, আদর্শ ছাপাখানা, নতুন প্রভাত, স্বরলিপি, স্মৃতিটুকু থাক, অনির্বাণ, দুই পর্ব, অনেক দিন আগে, মামা ভাগ্নে, আলো ছায়া, হাসি কান্না, লুকোচুরি, আদালত, ইয়ে করে বিয়ে, অধিকার, অঙ্গার, পাগলা রাজা, অচেনা অতিথি, কাপুরুষ, অশান্ত ঢেউ, মেহেরবানু, রূপালী সৈকতে, সখি তুমি কার, জোকার, আমির ফকির, লাভ ইন শিমলা, বন্দিনী, লালুভুলু, লাইলী মজনু, অভিযোগ, বাদল, রাজার রাজা, মৌ চোর, ঝুমকা, ভাঙ্গাগড়া, সোহাগ মিলন, দুই পয়সার আলতা, মধু মালতি, জন্ম থেকে জ্বলছি, রজনীগান্ধা, রাজনন্দিনী, খোকন সোনা, নাতবৌ, শাস্তি, ভাগ্যলিপি, মনা পাগলা, ঘরে বাইরে, ফয়সালা, কাবিন, গুনাই বিবি, যোগাযোগ, সাধনা, বিচারপতি, পরিণীতা, সতী কমলা, সন্ধান, দায়ী কে, যাদুমহল, অগ্নিকন্যা, স্বাক্ষর, আলী বাবা ৪০ চোর, দাঙ্গা, ত্রাস, ক্ষুধা, লাভ স্টোরি, প্রভৃতি।

আশীষ কুমার লোহ ১৯৮৬ সালে, আলমগীর কবির পরিচালিত ‘পরিণীতা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে পার্শ্বচরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

তিনি একাধারে অভিনেতা, নাট্যকার, চলচ্চিত্রের কাহিনী-চিত্রনাট্যকার, সংলাপ লেখক। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের নামি-দামি পরিচালকদের, পরিচালিত অনেক ব্যবসাসফল জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের কাহিনী-চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন আশীষ কুমার লোহ। ছোট গল্পকার হিসাবেও তিনি সুনাম অর্জন করেছিলেন। তাঁর প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ‘অনেক তারার আকাশ’।

Advertisements

একজন প্রতিভাবান ও মেধাবী অভিনেতা ছিলেন আশীষ কুমার লোহ। যে কোনো ছবিতে, যে কোনো চরিত্রে তাঁর অনবদ্য অভিনয় দর্শকদের বিমোহিত করত। প্রতিটি চরিত্রকে তিনি বাস্তবসম্মত অভিনয়ের মাধ্যমে যথাযথভাবে ফুটিয়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করতেন। যারজন্য তাঁর অভিনীত প্রতিটি চরিত্র প্রাণবন্ত ও দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠতো।

তিনি বহু ছবিতে নানা চরিত্রে অভিনয় করেছেন। অভিনয় করেছেন ভিলেন হিসেবেও। চরিত্রের প্রয়োজনে তিনি যে কোনো ধরণের চরিত্রে অভিনয় করার ইচ্ছা বা ক্ষমতা রাখতেন। চরিত্রাভিনেতা হিসেবেও তিনি তাঁর অভিনয় দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। তবে আশীষ কুমার লোহ কৌতুক অভিনেতা হিসেবেই সর্বাধিক পরিচিতি পেয়েছেন। পেয়েছেন সিনেমাদর্শকদের অকুন্ঠ ভালোবাসা। ছুঁয়েছেন জনপ্রিয়তার উচ্চ আসন।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের প্রথিতযশা অভিনয়শিল্পী আশীষ কুমার লোহ, অনেক টেলিভিশন নাটকেও অভিনয় করেছেন। টেলিভিশনেও তাঁর জনপ্রিয়তার কমতি ছিল না।

বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতি তথা চলচ্চিত্র অঙ্গনে তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতি তথা চলচ্চিত্র ইতিহাসে চির অম্লান- আশীষ কুমার লোহ।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন