তবে অনেক নারী গেমটিকে অপমানজনক বলে অভিহিত করেছেন। সিউ ইকুন নামের একজন খেলোয়াড় বলেন, ‘এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিতর্ক সৃষ্টি করে বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা।’ তার মতে, ‘গোল্ড ডিগার’ শব্দটিই নারীদের হেয় করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘একজন নারী যদি ধনী প্রেমিক খুঁজে পান, বা নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলেন—তাতেই তাকে ‘গোল্ড ডিগার’ বলা হয়। এ শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে আছে বিদ্বেষ।’
অন্যদিকে কিছু গেমার মনে করেন, সমালোচনার মাত্রা বাড়াবাড়ি। ৩১ বছর বয়সী ঝুয়াং মেংশেং বলেন, ‘গেমটি তো বলেনি সব নারীই এমন। অর্থলোভ তো নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই থাকতে পারে।’
সমালোচকেরা এই যুক্তি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, গেমটিতে কেবল নারীদেরই প্রতারক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমেও রয়েছে মতবিরোধ—হুবেইয়ের একটি সংবাদপত্র যেখানে গেমটিকে নারীবিদ্বেষী বলেছে, সেখানে বেইজিং ইয়ুথ ডেইলি গেমটির ‘সৃজনশীলতা’ এবং প্রতারণাবিরোধী বার্তার প্রশংসা করেছে।
চীনের জাতীয় প্রতারণা প্রতিরোধ কেন্দ্রের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রায় ২ বিলিয়ন ইউয়ান আত্মসাৎ করা হয়েছে।
সব বিতর্ক সত্ত্বেও গেমটির জনপ্রিয়তা কমেনি। এটি এখন চীনের উইন্ডোজ ডেস্কটপ গেমগুলোর মধ্যে শীর্ষ দশে অবস্থান করছে। এমনকি জনপ্রিয় গেম ‘ব্ল্যাক মিথ: য়ুকোং’-কেও বিক্রিতে ছাড়িয়ে গেছে।
অনেকে ধারণা করছেন, গেমটির পেছনে অনুপ্রেরণা রয়েছে ‘ফ্যাট ক্যাট’ নামে পরিচিত এক ব্যক্তির জীবনের ঘটনা থেকে। তিনি প্রেমে প্রতারণার অভিযোগ তুলে আত্মহত্যা করেছিলেন। যদিও তদন্তে তাঁর প্রাক্তন সঙ্গীর বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের প্রমাণ মেলেনি।
নারী অধিকারকর্মীদের মতে, এই গেম চীনে প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও পুষ্টি দিচ্ছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতারাও নারীদের ‘ভালো স্ত্রী ও মা’ হওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এমনকি নারীবাদী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর দমন-পীড়নের নজিরও রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বিবিসি-কে বলেন, ‘এই গেম শুধু লিঙ্গভিত্তিক বিদ্বেষ বাড়াবে। আবারও নারীদের দুর্বল ও নির্ভরশীল হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে।’