English

24 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ৪, ২০২৫
- Advertisement -

জীবনমুখী গানের জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব এর ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

- Advertisements -

এ কে আজাদ: শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব। কন্ঠশিল্পী, অভিনেতা, গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক। আবহমান বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অন্যতম অলঙ্কার লোকসঙ্গীত। যা অঞ্চল ভেদে নানা বৈচিত্র্যময় লোক সংস্কৃতিকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করেছে। আমাদের লোক তথা আঞ্চলিক সঙ্গীতের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় হচ্ছে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী অঞ্চলের আঞ্চলিক গান। আর এই অঞ্চলের কথ্য ভাষায় রচিত গানের দিকপাল হচ্ছেন সঙ্গীতশিল্পী শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব। তাঁর জাদুকরী কণ্ঠ ও নান্দনিক গায়কী চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানে এক অভূতপূর্ব জাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তাঁর গাওয়া সব গানই এক সময় মানুষের মুখে মুখে শুনা যেত। চট্টগ্রামের কথ্য ভাষায় রচিত আঞ্চলিক গানের প্রসঙ্গ উঠলেই এখনও তাঁর নামটি উচ্চারিত হয় সবার আগে, সসম্মানে।

জীবনমুখী গানের জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব এর ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ । তিনি ২০০০ সালের ৪ ডিসেম্বর, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে, চট্টগ্রামে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। প্রয়াত এই গুণি সঙ্গীতশিল্পীর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।

শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব ১৯২৭ সালে, চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার, ফতেয়াবাদ গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। বাবা জয়দাস বৈষ্ণব ছিলেন একজন লোকশিল্পী। বাবার কাছে শ্যামসুন্দর বৈষ্ণবের সঙ্গীতের হাতে খড়ি শৈশবে। পরে ওস্তাদ সুধীর শীলের সান্নিধ্যে শুরু করেন সঙ্গীত সাধনা। খুব অল্প বয়সে তার বাবা পরলোক গমন করায়, শিক্ষাজীবনে তিনি বেশিদূর যেতে পারেননি। মাত্র ১১ বছর বয়সেই মঞ্চে গান গাওয়ার পাশাপাশি নাটকে অভিনয়ও করতেন। সেই বয়সেই গান আর কৌতুক অভিনয় দিয়ে এলাকায় সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে এই অভিনয়শৈলীকে তিনি গানে উপস্থাপন করে লোকগানের এক নতুনধারা সৃষ্টি করেন।

শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব পেশাগত জীবনে চট্রগ্রামের আর্ট প্রেসে ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। পরে ১৯৬৩ সালে চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রে কন্ঠশিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। বেতারে তাঁর গাওয়া প্রথম আঞ্চলিক গান হলো ‘গুরা বউ বউরে সন্ধ্যাকালে চেরাগ দিতে গেল’ এবং ‘চল অপুত বিলত যাই’।

১৯৬৪ সাল থেকে শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব ও শেফালী ঘোষ জুটিবদ্ধ হয়ে চট্রগ্রাম ও নোয়াখালীর আঞ্চলিক গান গাওয়া শুরু করেন। তাদের প্রথম দ্বৈত কন্ঠের আঞ্চলিক গান ‘নাইয়র গেলে বাপের বাড়ী আইসু তারাতাড়ি’, গানটির কথা ও সুর করেছিলেন মলয় ঘোষ দস্তিদার।

এক সময় এই জুটির গান তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।
চট্রগ্রাম ও নোয়াখালী আঞ্চলিক গান ছাড়াও তিনি একক ও দ্বৈত কন্ঠে শিল্পী শেফালী ঘোষের সাথে লোকসংগীতের নানা স্বাদের গান গেয়ে প্রভূত জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
শ্যাম-শেফালী জুটির জনপ্রিয়তা দেশে পেরিয়ে বিদেশেও পৌঁছে যায়। মিয়ানমার, জাপান, আমেরিকা, লন্ডন, দুবাই, মালয়েশিয়া, কাতার, ওমান, আবুধাবীসহ এই জুটি গান নিয়ে ২৯টি দেশে ঘুরেছেন। বিভিন্ন দেশে গান গেয়ে, নিজস্ব গায়নশৈলীর প্রতিভায় মুগ্ধ করেছেন গানপিয়াসি শ্রতা-দর্শকদের।

১৯৭৫ সালে, বাংলাদেশ টেলিভিশনের কণ্ঠশিল্পী হিসেবে তালিকাভূক্ত হন শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব । তাঁর ১২০টির মত গানের এ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে ।

শ্যামসুন্দর বৈষ্ণবের কিছু জনপ্রিয় গান- ও জেডা ফইরার বাপ…., বানুরে ও বানু আমি যামু ঢাহার শহর…., ও বাস কন্ডাকাটার….., চল আঁরা ধাই…., আঁর বাইক্য টেয়াঁ দে…., আঁর বউঅরে আঁই কিলাইউম…., বাইছা দুমরি আঁইয়েন রেলে ফুঁৎ কইচ্ছে…, ভাইসাব ও কইয়েন না….,
ও বেয়াইনরে কেনতে আইলেন আঙ্গোঁ বাইত…., আন্নের বাই দাগনভূইঞা…., দেশে গেলে কইয়েনগো ভাইজান চাটিগাঁয়ে চাকরি একখান হাইছি…. প্রভৃতি।

আঞ্চলিক গানের শিল্পী শ্যামসুন্দরের বাল্য বন্ধু ছিলেন প্রখ্যাত সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক সত্য সাহা। সত্য সাহার অনুপ্রেরণায় তিনি কয়েকটি চলচ্চিত্রেও কাজ করেছেন। মনের মানুষ, সাম্পানওয়ালা, বর্গী এলো দেশে, মধুমিতা, অশিক্ষিত, অনুরাগ, যন্ত্রর মন্ত্ররসহ বেশকিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন ও কন্ঠ দিয়েছেন।

কাজের সীকৃতি হিসেবে শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব জীবদ্দশায় অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- বাংলাদেশ বেতার গুণীজন সংবর্ধনা, রয়েল ক্লাব অব মেট্রোপলিটন, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা, শহীদ নতুন চন্দ্র সিংহ স্মৃতি পরিষদ, বাংলাদেশ উদীচী, চট্টগ্রাম শিল্পী সংস্থা, ধ্রুব পরিষদ, বীর চট্টগ্রাম মঞ্চ, অবসর সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, আলাউদ্দিন ললিতকলা একাডেমি, ত্রিতরঙ্গ, ফতেপুর রুদ্র পল্লীবাসী, হাটহাজারী কণ্ঠ, সম্মিলিত বর্ষবরণ পুরস্কার। মৃত্যুর পর তাকে ২০০৮ সালে, রাষ্ট্রীয়ভাবে একুশে পদক পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

শ্যামসুন্দর বৈষ্ণবের পাঁচ ছেলে ও পাঁচ মেয়ের মধ্যে,
এক ছেলে প্রেমসুন্দর বৈষ্ণব বাবার আদর্শকে অনুসরণ করে গান করে যাচ্ছেন।

শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব একাধারে গায়ক, অভিনেতা, গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক। স্বমহিমায় উদ্ভাসিত এক অমর শিল্পী। যিনি আঞ্চলিক লোক গানের শিল্পী হিসেবে গণমানুষের হৃদয়ের কাছাকাছি যেতে পেরেছেন।
কন্ঠশিল্পী শেফালী ঘোষের সাথে দ্বৈতকন্ঠের জুটি বেঁধে বাংলা লোক গানের জগতে এক অনবদ্য ইতিহাসের জন্ম দিয়েছেন কয়েক দশক জুড়ে।
আঞ্চলিক বাংলা লোক গানের ইতিহাসে চির অমর হয়ে থাকবেন শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/677r
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

নতুন জুটি সিয়াম: ইধিকা

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন