English

36 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
- Advertisement -

নন্দিত অভিনেতা নারায়ণ চক্রবর্তীর ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

- Advertisements -

এ কে আজাদ: নারায়ণ চক্রবর্তী। অভিনেতা। দীর্ঘ চলচ্চিত্রজীবনে তিনি অভিনয় করেছেন অসংখ্য ব্যবসাসফল ও মানসম্পন্ন ছবিতে। নানামুখি চরিত্রে নিজের অভিনয় প্রতিভার মুন্সিয়ানায় যেমন মুগ্ধ করেছেন এদেশের সিনেমাপ্রেমীদের, তেমনই চলচ্চিত্রে নিজের অবস্থানকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।

বহু দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্রের নন্দিত অভিনেতা নারায়ণ চক্রবর্তী’র ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৯৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি, ৭২ বছর বয়সে, পরলোকগমন করেন। প্রয়াত এই গুণী অভিনয়শিল্পীর স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।

Advertisements

বরেণ্য অভিনেতা নারায়ণ চক্রবর্তী ১৯২৬ সালের ১৮ জানুয়ারী, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখাঁন থানার কোলাগ্রামে, জন্মগ্রহণ করেন। চার ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। ১৯৪৪ সালে মেট্রিকুলেশন পাস করেন। লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ কম থাকায় কলেজে ভর্তি না হয়ে কারিগরি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। খিদিরপুর ‘ইন্ডিয়ান অক্সিজেন অ্যান্ড অ্যাসোটাইল কোম্পানি’তে ইলেক্ট্রিক ও গ্যাস ওয়েল্ডিংয়ের কাজ শিখে ওই কোম্পানিতে চাকরি করেন। ওখানে কিছুদিন কাজ করার পর, ‘ফ্রেন্ডস মটর ওয়ার্কস’ নামে এক কোম্পানিতে যোগ দেন । এরপর কলকাতার ‘পোস্ট অ্যান্ড টেলিগ্রাফ ডিপার্টমেন্টে’ চাকুরি নেন। নারায়ণ চক্রবর্তী মেট্রিক পরীক্ষার পরই তাঁর বাবার ইচ্ছায়, রেখা চক্রবর্তীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

১৯৪৭ সালে, ভারত পাকিস্তান ভাগ হলে তিনি পোস্টিং নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের কুষ্টিয়ায় চলে আসেন।
চাকরির অবসরে তিনি ফুটবল খেলতেন। কুষ্টিয়া মোহিনী মিলের মালিক কানু চক্রবর্তীর সহযোগিতায় কুষ্টিয়ায় প্রথম বিভাগ ফুটবল দলে টাউন মাঠে খেলার সুযোগ হয় তাঁর।

কিছুদিন পর রাজবাড়িতে বদলি হয়ে আসেন। রাজবাড়ি ‘রেলওয়ে ক্লাব’ এর বাৎসরিক নাটক ‘সিরাজউদ্দৌলা’তে জীবনে প্রথম অভিনয় করেন নারায়ণ চক্রবর্তী। প্রথম অভিনয়েই ভালো পারফর্মেন্সের জন্য রৌপ্য পদক পান।

এক সময় তাঁকে ঢাকায় বদলি করা হয় । থাকতেন বাংলাবাজারে । তখন লক্ষ্মীবাজার এলাকায় নিয়মিত মঞ্চনাটক হতো। বিনয় বিশ্বাস, ড. আজম, নূরুল আলম খান, ভবেশ মুখার্জি, শিরিন চৌধুরী, কাফি খান, হোসনে আরাদের সাথে তিনিও মঞ্চনাটকে অভিনয় শুরু করেন । পরবর্তী সময়ে নারায়ণ চক্রবর্তীকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়। সেখানে তাঁর পরিচয় হয় যাত্রা দলের নায়িকা পুর্ণিমা সেন গুপ্তার (মুখ ও মুখোশ এর নায়িকা) সাথে এবং তিনি যাত্রাপালায় অভিনয়ও করেন। পুনরায় ঢাকায় বদলি হয়ে এসে আবার নাটক করতে থাকেন। এরইমধ্যে নাট্যমহলে নারায়ণ চক্রবর্তীর বেশ নামডাক ছড়িয়ে পড়ে এবং তিনি ঢাকার রেডিওতে নাট্যশিল্পী হিসেবে যোগ দেন।

Advertisements

এফডিসি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি ফতেহ লোহানী, নাজীর আহমেদ, আলী মনসুর ও এহতেশাম-এর যৌথ সমন্বয়ে নির্মিত “নবারুণ” প্রামাণ্যচিত্রে সর্বপ্রথম অভিনয় করেন।

অভিনেতা নারায়ণ চক্রবর্তী অসংখ্য সুপারহিট ও দর্শকনন্দিত ছবিতে অভিনয় করেছেন। তিনি যেসব উল্লেখযোগ্য ছবিতে অভিনয় করেন সেগুলোর মধ্যে- তোমার আমার, এদেশ তোমার আমার, হারানো দিন, চান্দা, কখনো আসেনি, তালাশ, প্রীত না জানে রীত, কাঁচের দেয়াল, নতুন সুর, পয়সে, কাজল, মালা, মহুয়া, পরওয়ানা, চাওয়া পাওয়া, ছোটে সাহাব, সোয়ে নদীয়া জাগে পানি, মধুমালা, শহীদ তিতুমীর, বেদের মেয়ে, অবাঞ্চিত, আগুন্তুক, পদ্মা নদীর মাঝি, সূর্য উঠার আগে, নতুন সুর, রাজা এলো শহরে, কাগজের নৌকা, ডাক বাবু, রূপ কুমারী, আবির্ভাব, চেনা অচেনা, মহুয়া, দুই দিগন্ত, রূপবানের রূপকথা, অপরিচিতা, সন্তান, নীল আকাশের নীচে, বিজলী, ক খ গ ঘ ঙ, আপন পর, ঢেউয়ের পর ঢেউ, রং বদলায়, দীপ নেভে নাই, একই অঙ্গে এত রূপ, পীচ ঢালা পথ, বড় বউ, সাধারণ মেয়ে, নাচের পুতুল, তানসেন, স্মৃতি টুকু থাক, শেষ পর্যন্ত, চৌধুরী বাড়ী, স্বীকৃতি, বাঘা বাঙ্গালী, অবুঝ মন, তিতাস একটি নদীর নাম, সমাধান, প্রতিশোধ, অশ্রু দিয়ে লেখা, এরাও মানুষ, কাঁচের স্বর্গ, এখানে আকাশ নীল, রংবাজ, দূরন্ত দুর্বার, মাল্‌কা বানু, কার হাসি কে হাসে, টাকার খেলা, আলোর মিছিল, লাঠিয়াল, বাদশা, অনেক প্রেম অনেক জ্বালা, ডাক পিওন, হাসি কান্না, জীবন নিয়ে জুয়া, প্রতিনিধি, লাভ ইন সিমলা, উপহার, গরমিল, শাপমুক্তি, জানোয়ার, গুন্ডা, মা, তৃষ্ণা, অমর প্রেম, লুকোচুরি, হারানো মানিক, অশিক্ষিত, অংগার, মতিমহল, সোহাগ, বন্ধু, ডুমুরের ফুল, জোকার, অনুরাগ, আরাধনা, রাজবন্দী, ছুটির ঘন্টা, মহানগর, নাগিন, দোস্তী, অংশীদার, সুখো থাকো, লাল কাজল, মৌচোর, মাটির পুতুল, ভাংগা গড়া, জনতা এক্সপ্রেস, বদনাম, রাজিয়া সুলতানা, ভাগ্যলিপি, ঘর সংসার, কলংকিনী, আমানত, অগ্নিকন্যা, মীমাংসা, লাওয়ারিশ, ঘরে বাইরে, সৎভাই এবং সতী কমলা অন্যতম।

একজন উঁচুমানের মেধাবী অভিনেতা ছিলেন নারায়ণ চক্রবর্তী। এই প্রতিভাবান গুণী অভিনয়শিল্পী তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে রাস্ট্রীয় বা প্রাতিষ্ঠানিক কোনো পুরস্কার তিনি পাননি। যা পেয়েছেন তা শুধু আপামর দর্শক-শ্রোতাদের ভালোবাসা। মানুষের এই ভালোবাসাই শিল্পী নারায়ণ চক্রবর্তীকে বাঁচিয়ে রাখবে যুগের পর যুগ ধরে।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন