নাসিম রুমি: আমাদের দেশে ‘কুড়িতে বুড়ি’ কথাটি বেশ প্রচলিত থাকলেও হলিউড, বলিউড কিংবা বিনোদন ভুবনে বয়স শুধু একটি সংখ্যা মাত্র। জীবনের হাফ সেঞ্চুরি পার করে এখনো সমানভাবে পর্দায় ঝড় তুলে চলেছেন অনেকেই। এখনো তারা দেহ-সৌষ্ঠব আকর্ষণীয় করে রেখেছেন। এক নয়নাভিরাম নস্টালজিয়ার ছোঁয়া সৃষ্টি হয় পর্দায় তাদের সরব উপস্থিতি দেখে। সামাজিক নিন্দাকে পিছু হটিয়ে বা বয়স ফোবিয়াকে দূরে সরিয়ে বলিউড অঙ্গনে দৃপ্ত পদচারণা করছেন এমন কিছু নায়িকা। যাদের রূপ-লাবণ্য এখনো ঊনত্রিশ থেকে ঊনআশি সবার হৃদয়কেই ব্যাকুল করে।
মাধুরী দীক্ষিত
বয়স যেন তার কাছে নস্যি। নাচ-অভিনয় কিংবা ব্যক্তিত্ব—এখনো তার শোভা আর সৌন্দর্যে মুগ্ধ সিনেপ্রেমীরা। তিনি নব্বইয়ের দশকের হৃদয় কাঁপানো নায়িকা মাধুরী দীক্ষিত। তার রূপ-লাবণ্য ও অভিনয়শৈলী দর্শকদের বিমোহিত করে রাখত। ৭০টির বেশি সিনেমায় অভিনয় করা মাধুরী এখন ৫৭ বছরের ‘টগবগে তরুণী’। এজন্যই তরুণী বলা যে, বয়সকে হার মানানো মাধুরী এখনো পর্দায় নিজের শোভা বাড়িয়ে চলছেন। দীর্ঘ বিরতির পর ২০২২ সালে নতুন আঙ্গিকে পর্দায় হাজির হয়েছেন তিনি। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ‘দ্য ফেম গেম’ ওয়েব সিরিজ এবং ‘মাজা মা’ ছবিতে অভিনয় করেছেন মাধুরী।
ঐশ্বরিয়া রায়
বিশ্বসুন্দরীর মুকুট মাথায় তোলেন ১৯৯৪ সালে। এর মানে, তিনি যে রূপ-সৌন্দর্যে সেরা, এ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। বিনা বাক্যে হিন্দি সিনেমার জগতে অন্যতম সুন্দরী নায়িকা ঐশ্বরিয়া রাই। মিস ওয়ার্ল্ড খেতাব জেতার পর চলচ্চিত্রে এসেই নিজেকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যান। সৌন্দর্যে সেরা হওয়ার তিন দশক পেরিয়ে গেলেও এখনো তার আবেদন কমেনি বিন্দুমাত্র। ৫১ বছর বয়সী চিরতরুণী ‘অ্যাশ’ সম্প্রতি দক্ষিণী সিনেমা ‘পনিয়িন সেলভানে’ অভিনয় করে চমক লাগিয়ে দেন। পঞ্চাশ পেরোলেও এখনো অনেকের কাছেই সৌন্দর্যের সংজ্ঞা মানেই ঐশ্বরিয়া!
কাজল
হিন্দি সিনেমায় রোমান্সের সংজ্ঞা নতুনভাবে লেখা হয়েছিল শাহরুখ-কাজল জুটিতেই। বলিউডে অনস্ক্রিন জুটিগুলোর মধ্যে এ জুটিই যে সেরা, তাতে দ্বিমত নেই কারও। একের পর এক দর্শকনন্দিত সিনেমা উপহার দিয়ে দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন ৫০ বছরের চিরসুন্দরী বাঙালিকন্যা কাজল মুখার্জি। পর্দার সামনে হোক বা বাইরে—এই অভিনেত্রী এসে দাঁড়ালেই যেন লাস্যের বান ডাকে। টানটান দেহ পল্লবী, উপচে পড়া যৌবন, খোলামেলা সাজে এখনো পারদ-চড়ানো উষ্ণতা! ১৯৯২ সালে ‘বেখুদি’ দিয়ে শুরু হলেও প্রথম বাণিজ্যিক সিনেমা ‘বাজিগর’-এর আকাশচুম্বী সাফল্যের পর তাকে নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে। এখনো তার রূপের কাছে হার মানবে ২৪ বছরের তরুণী।
শিল্পা শেঠি
পঞ্চাশ বছর—অসম্ভব! শিল্পা শেঠিকে দেখলে হয়তো অনেকেই তাকে ত্রিশের যুবতী ভেবে ভুল করতে পারেন। বলিউডের এই ফিটনেস-ফ্রিক এখনো নিজের সৌন্দর্যের ঝান্ডা নিজের কাছেই তুলে রেখেছেন। বয়স তার শরীর, মন বা আত্মবিশ্বাস কোনো কিছুর ওপরই ছাপ ফেলতে পারেনি। ১৯৯৩ সালে আব্বাস-মাস্তানের ‘বাজিগর’ দিয়ে বলিউডে অভিষেক। অভিনয় ছাড়াও শিল্পা শেঠি ভারতনাট্যমের স্বনামধন্য নৃত্যশিল্পী। শুধু পর্দাতেই নয়, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তিনি নিজেকে গড়েছেন এক পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে। ৪৯ বছর বয়সেও তার গ্লোয়িং স্কিন, টোনড ফিগার ও আত্মবিশ্বাসী ক্যারিশমা নতুন প্রজন্মের সেলিব্রেটিদেরও পেছনে ফেলে দেয়।
টাবু
দশকের পর দশক পেরিয়ে গেলেও নিজের সৌন্দর্য আর আকর্ষণ ধরে রেখেছেন বলিউড অভিনেত্রী তাবাসসুম ফাতিমা হাশমি। বলি ইন্ডান্ট্রিতে তিনি পরিচিত টাবু নামে। মোহময়ী অভিনেত্রী টাবু বরাবরই সৌন্দর্যের সঙ্গে বুদ্ধিমত্তার মিশেলে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। পঞ্চাশ পেরিয়ে ৫৩-তে পড়লেও এখনো টাল খায়নি তার আকর্ষণে। বয়সকে হার মানানো টাবুর সিনেমার পর্দায় সরব উপস্থিতি দর্শকহৃদয়ে দাগ কেটে যায়। তুখোড় ব্যক্তিত্ব দিয়ে শোভা বাড়িয়ে চলছেন সিনেজগতে।
প্রীতি জিনতা
বলিউডের ডিম্পল গার্ল প্রীতি জিনতা কীভাবে নিজের বয়সকে লুকিয়ে রেখেছেন—সেটা নিয়ে ধন্ধে থাকে সবাই। অভিনয় থেকে সামান্য বিরতি দিলেও আইপিএলের কল্যাণে নিয়মিত টিভি পর্দায় দেখা যায় তাকে। কে বলবে তার বয়স হাফ সেঞ্চুরি পার হয়েছে। ফিটনেস আর আকর্ষণে এখনো অপ্রতিদ্বন্দ্বী। যেভাবে নিজের গ্ল্যামার ধরে রেখেছেন, তা নতুন নায়িকাদের প্রেরণা। সম্প্রতি কান উৎসবে সাদা গাউন পরে লালগালিচায় হেঁটে নজর কাড়েন এই গ্ল্যামার কুইন।