English

26 C
Dhaka
রবিবার, মে ১২, ২০২৪
- Advertisement -

প্রথীতযশা কন্ঠশিল্পী ও সঙ্গীতজ্ঞ অজিত রায় এর ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

- Advertisements -

আজাদ আবুল কাশেম: প্রথীতযশা কন্ঠশিল্পী ও সঙ্গীতজ্ঞ অজিত রায় এর ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। প্রয়াত এই গুণি সঙ্গীতজ্ঞের স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

অজিত রায় ১৯৩৮ সালের ২৯ জুন, কুড়িগ্রাম জেলার সোনালুর কুঠি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মুকুন্দ সরকার, তাঁর মাতা কনিকা রায়- ছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী এবং শিক্ষিকা। মায়ের কাছেই সঙ্গীতের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় তাঁর কৈশরবেলা থেকে।
অজিত রায়ের শিক্ষাজীবন শুরু রংপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। পরবর্তিতে লেখাপড়া করেন রংপুর কারমাইকেল কলেজে।

১৯৬২ সালে ঢাকায় আসেন অজিত রায়। ১৯৬৩ সাল থেকে রেডিওতে গান গাওয়া শুরু করেন।
১৯৬৬ সালে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের বাঙালি জাতীয়তা বোধে উদ্বুদ্ধ জনতার সাথে আন্দোলনে যোগ দেন।
১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সময় ডাকসুতে নিয়মিত গণ-সংগীতের রিহার্সেল করাতেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ঢাকায় কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকেন। জুন মাসের দিকে কলকাতায় যান এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে যোগদেন। সেই সময়ে তাঁর সুরারোপিত ও গাওয়া গানগুলো রণাঙ্গণে মুক্তিবাহিনীসহ সাধারণ মানুষদেরকেও স্বদেশ চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে সাহায্য করেছিল। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে প্রচারিত আখতার হোসেন রচিত ‘স্বাধীন স্বাধীন দিকে দিকে’ এই গানটির সুর ও কণ্ঠ দিয়েছিলেন অজিত রায়।

Advertisements

দেশ স্বাধীন এর পর ১৯৭২ সালে, বাংলাদেশ বেতারের সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে যোগ দেন অজিত রায়।
১৯৭৮ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধি হিসেব সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করেন।

১৯৮৭ সালে বিশ্বভারতী আয়োজিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‌১২৫তম জন্ম জয়ন্তীতে আমন্ত্রিত হয়ে কলকাতায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

১৯৯৫ সালের ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ বেতারের চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন তিনি।

অজিত রায় মূলত রবীন্দ্রসঙ্গীশিল্পী হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন। এর পাশাপাশি গণসঙ্গীত ও দেশাত্মবোধকগানের জন্য পরিচিতি লাভ করেছিলেন তিনি। ৭১-এর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কণ্ঠযোদ্ধা অজিত রায় বেশ কিছু চলচ্চিত্রেও কণ্ঠ দিয়ে ছিলেন। নেপথ্য গায়ক হিসেবে যেসব চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন সেগুলো হলো – রিপোর্টার, জীবন থেকে নেয়া, যে আগুনে পুড়ি, আমার জন্মভূমি, সংগ্রাম, কোথায় যেন দেখেছি, কসাই, সুরুজ মিঞা, প্রভৃতি ।

তাছাড়াও তিনি ‘সুরুজ মিঞা’ চলচ্চিত্রে বিশেষ একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুল গীতি, দেশাত্মবোধক গান, গণসঙ্গীত ও আধুনিক সব ধরণের গানই করেছেন অজিত রায়। তাঁর গাওয়া/সুর করা কিছু জনপ্রিয় গানের মধ্যে- একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার…, সুখ তুমি কি বড় জানতে ইচ্ছে করে…., একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার…., আমি যুগে যুগে আসি…., এদেশ বিপন্ন…., হে বঙ্গ ভান্ডারে তব…., ও আমার দেশের মাটি…., স্বাধীন স্বাধীন দিকে দিকে আজ…., বিজয় নিশান উড়ছে ঐ…, বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি…., অন্যতম।

Advertisements

অজিত রায় তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন বহু পুরস্কার ও সম্মাননা। যারমধ্যে উল্লেখযোগ্য-
২০০০ সালে স্বাধীনতা পদক, স্বাধীনবাংলা বেতারকেন্দ্র শিল্পী পরিষদ থেকে ‘শব্দসৈনিক পদক, ১৯৮৮ সালে সিকোয়েন্স পদক, বেগম রোকেয়া পদক, ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী পদক, রবি রশ্মি পদক, ২০১১ সালে রবীন্দ্র পদক, রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের গুণীজন পদক, বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থার শ্রদ্ধাঞ্জলি পত্র, চট্টগ্রাম ইয়ুথ কয়্যার অ্যাওয়ার্ড।

ব্যক্তিজীবনে অজিত রায়, বুলা রায় এর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের সংসারে, শ্রেয়শী রায় মুমু নামে এক কন্যা এবং রোমাঞ্চ রায় নামে এক পুত্র সন্তান রয়েছে।

বরেণ্য কন্ঠশিল্পী, সুরকার ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম কন্ঠযোদ্ধা ও সংগঠক অজিত রায়।
প্রথিতযশা সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ভুবনে অত্যন্ত সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। একাধারে গায়ক, গীতিকার, সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে চার দশককালেরও অধিক সময় ধরে তাঁর সৃজনশীল প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন সুচারুভাবে। একজন উঁচুমানের সঙ্গীত বিশারদ হিসেবে তাঁর দৃপ্ত পদচারণায় মুখরিত হয়েছে আমাদের সাংস্কৃতিক জগত।

বাংলাদেশের সঙ্গীতের ভান্ডার সমৃদ্ধ করে যাওয়া, বরেণ্য সঙ্গীতজ্ঞ অজিত রায়, অনন্তলোকে ভালো থাকুন- এই আমাদের প্রার্থণা।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন