English

31 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
- Advertisement -

বরেণ্য শিক্ষাবিদ-গীতিকবি আবু হেনা মোস্তফা কামাল-এর আজ মৃত্যুবার্ষিকী

- Advertisements -
Advertisements
Advertisements

বরেণ্য শিক্ষাবিদ-গীতিকবি-সাহিত্যিক ও গবেষক ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল-এর আজ ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ সেপ্টেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৩ বছর। প্রয়াত এই বরেণ্য মানুষটির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ মার্চ, সিরাজগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা এম, শাহজাহান আলী ছিলেন স্কুল শিক্ষক। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন মেজো । সবার বড় বোন সাবেরা খাতুন শামসুন আরা। সাবেরা খাতুন অধ্যাপক এবং মঞ্চ ও বেতারের অভিনেত্রী ছিলেন। তাঁর ছোট ভাই আবুল হায়াৎ মোহাম্মদ কামাল। গীতিকার হিসেবে তিনিও সুপরিচিত।
ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল ১৯৫২-তে পাবনা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৫৪-তে ঢাকা কলেজ থেকে আইএ পাস করেন । ম্যাট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে ত্রয়োদশ স্থান এবং আইএ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে সপ্তম স্থান অধিকার করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে বাংলায় বিএ অনার্স এবং ১৯৫৯-এ ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন, উভয় পরীক্ষাতেই প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান পান। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘দ্য বেঙ্গলি প্রেস অ্যান্ড লিটারারি রাইটিং (১৮১৮-১৮৩১)’ বিষয়ক গবেষণায় তিনি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বাল্যকালেই গানের চর্চা শুরু করেছিলেন, গায়ক হবেন বলে। এক সময়ে তিনি বেতার ও টেলিভিশনের তরুণ গায়ক হিসেবে পরিচিতিও পেয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তিতে গান গাওয়া নয়, লেখার প্রতি অধিক উৎসাহী হয়ে পড়েন। ছাত্রজীবন থেকেই নিয়মিত লিখতেন কবিতা আর গান।
ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে শিক্ষকতার মধ্যদিয়ে। পরবর্তী সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ, রাজশাহী সরকারি কলেজ এবং গণসংযোগ পরিদপ্তরে চাকুরী করেন।
১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৫-তে যোগ দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক হিসেবে। পরবর্তী সময়ে তিনি ১৯৭৩-এ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ১৯৭৮-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন অধ্যাপক হিসেবে।
১৯৮৪ থেকে ১৯৮৬ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এবং ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৯ বাংলা একাডেমির মহাপরিচলক হিসেবে কর্মরত ছিলেন ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল।
তাঁর প্রকাশিত তিনটি কাব্যগ্রন্থ- আপন জীবন বৈরী, যেহেতু জন্মান্ধ এবং আক্রান্ত গজল। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে আছে- কথা ও কবিতা (প্রবন্ধ-গবেষণা ১৯৮১), শিল্পীর রূপান্তর (প্রবন্ধ-গবেষণা ১৯৭৫), ইছামতির সোনালি-রুপালি, জর্জ কার্ভার (ক্রীতদাস পুত্র থেকে কৃষিবিজ্ঞানী), মানবসম্পদ উন্নয়ন : প্রেক্ষিত ইসলাম, মালয় দ্বীপের উপাখ্যান, নেপালের সবুজ উপত্যকায়, বিবশ বিহঙ্গ, পেঙ্গুইনের দেশে, সাহসী সাত বন্ধু, যেমন দেখেছি জাপান, এশিয়ার দেশে দেশে, নিশুতির নোনা জল, আকাশ নন্দিনী, আমি সাগরের নীল, ইকো-ট্যুরিজম, ইত্যাদি। কবি-গবেষক আবদুল মান্নান সৈয়দের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় তাঁর ‘কাব্যসমগ্র’।
পঞ্চাশের দশকের অন্যতম মেধাবী কবি ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল গান লিখে এক সময়ে তাঁর কবি খ্যাতিকে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি গীতিকবি হিসেবে হয়ে যান খ্যাতিমান । আমাদের সঙ্গীত ভাণ্ডারে তিনি যোগ করে গিয়েছেন কিছু অসাধারণ বাংলা গান।
তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্যও গান লিখেছেন। তিনি চলচ্চিত্রে প্রথম গান লিখেন ‘মাটির পাহাড়’ ছবির জন্য। মোহাম্মদ মহিউদ্দিন পরিচালিত এই ছবিটি মুক্তিপায় ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে।
ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল আরো যেসব ছবিতে গান লিখেছেন তারমধ্যে- তোমার আমার, যোগ-বিয়োগ, দর্পচূর্ণ, উপহার, গোধূলীর প্রেম, জানাজানি, অনির্বাণ, কলমিলতা, সমর্পণ, অসাধারণ, রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত, উল্লেখযোগ্য।
মুস্তফা আনোয়ার পরিচালিত ‘অসাধারণ’ ছবির চিত্রনাট্যও তিনি লিখেছিলেন।
বাংলাদেশের গীতিকবিদের মধ্যে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল-এর লেখা জনপ্রিয় কালজয়ী গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ওই যে আকাশ নীল হলো আজ, সে শুধু তোমার প্রেমে…, আমি সাগরের নীল নয়নে মেখেছি…, এ ঘর ও ঘর করে, সারাদিন যায় গো যদি.., তুমি যে আমার কবিতা, আমার বাঁশির রাগিনী…, হাতের কাঁকন ফেলেছি খুলে কাজল নেই চোখে…, সেই চম্পা নদীর তীরে দেখা হবে আবার, যদি ফাল্গুন আসে গো ফিরে…, অনেক বৃষ্টি ঝরে তুমি এলে, যেন এক মুঠো রোদ্দুর আমার দু’চোখ ভরে…, নদীর মাঝি বলে এসো নবীন, মাঠের কবি বলে এসো নবীন…, অপমানে তুমি জ্বলে উঠেছিলে সেদিন বর্ণমালা, সেই থেকে শুরু দিন বদলের পালা…, এই বাংলার হিজল তমাল…, শূন্য হাতে আজ এসেছি নেই তো কিছু আর….., শত জনমের স্বপ্ন তুমি আমার জীবনে এলে…, তোমার কাজল কেশ ছড়ালো বলে এই রাত এমন মধুর..,
এই পৃথিবীর পান্থশালায় গাইতে গেলে গান.., প্রভৃতি।
ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল যেসব পুরস্কারে, পুরস্কৃত হয়েছেন, তারমধ্যে-
আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, সুহৃদ সাহিত্য স্বর্ণপদক, একুশে পদক-১৯৮৭, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ স্বর্ণপদক, সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার, ইত্যাদি।
ব্যক্তিগত জীবনে ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ অক্টোবর, হালিমা খাতুনের সাথে দাম্পত্যজীবন শুরু করেন৷ তাদের পাঁচ সন্তান ৷ তাঁরা হলেন- কাবেরী মোস্তফা, কাকলী মোস্তফা, সুজিত মোস্তফা (নজরুল সঙ্গীতের খ্যাতিমান শিল্পী), শ্যামলী মোস্তফা এবং সৌমী মোস্তফা৷
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল ছিলেন- উপস্থাপক, গবেষক, কবি, প্রাবন্ধিক, গীতিকবি, শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও দক্ষ প্রশাসক। সৃজনশীল মানুষ হিসেবে তাঁর বিচরণ ছিল সাহিত্যের সকল শাখায়। তাঁর গান-কবিতা-গবেষণা, শিক্ষা ক্ষেত্রে তাঁর অবদান আমাদের সমৃদ্ধ করেছে, ঋদ্ধ করেছে।
আধুনিক সুদ্ধশিল্প চর্চার এক পরিশিলীত মানুষ হিসেবে আমাদের মাঝে আবির্ভুত হয়েছিলেন তিনি। তাঁর কবিতা, গান,
প্রবন্ধ, সমালোচনা, গবেষণাধর্মী লেখা, সাহিত্যের এইসব ক্ষেত্রে তাঁর ভাষাশৈলী বক্তব্য উপস্থাপন রীতি, রসবোধ সবই সৃষ্টিশীল এক স্বাতন্ত্র্যতার বহিঃপ্রকাশ। যা আমাদের জন্য অনুকরণীয়-অনুস্মরণীয় হতে থাকবে।
প্রখর নীতিবান একজন ভালো মানুষ ছিলেন, ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। অসময়ে-অপরিণত বয়সে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। রেখে গেছেন তাঁর সৃষ্টি, তাঁর কর্ম। যার মাধ্যমে তিনি অনন্তকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন, আমাদের মাঝে।
(তথ্যসূত্র ও ছবি- ইন্টারনেট থেকে নেয়া)

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন