English

32.8 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫
- Advertisement -

বহুমাত্রিক প্রতিভাবান কিংবদন্তী চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব খান আতার ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

- Advertisements -

অভিনেতা, গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, গায়ক, চলচ্চিত্র নির্মাতা,চিত্রনাট্যকার, কাহিনীকার, প্রযোজক-পরিবেশক এবং বহুমাত্রিক প্রতিভাবান কিংবদন্তী চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব খান আতা’র ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৯৭ খ্রিষ্টাবদের ১ ডিসেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। প্রয়াত এই গুণী চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
খান আতা (খান আতাউর রহমান) ১১ ডিসেম্বর ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে, মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার, রামকান্তপুর গ্রামেজন্মগ্রহণ করেন। তাঁর
বাবার নাম জিয়ারত হোসেন খান, মায়ের নাম জোহরা খাতুন। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে খান আতা তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে ঢাকা জিলা সঙ্গীত প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে, প্রথম স্থান অধিকার করেন।
১৯৪৩-এ ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশান পাস করেন। ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষা দেন ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন।কিন্তু অল্প কিছুদিন পরেই মেডিকেল ছেড়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এ বছরেই তিনি লন্ডনে ফটোগ্রাফি বিষয়ক একটি বৃত্তি লাভ করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তিনি সেখানে যাননি।
১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের উদ্দেশ্যে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে মুম্বাই যান। মুম্বাই গিয়ে তিনি, চলচ্চিত্র জগতের আনাচে কানাচে গিয়েছেন। এসময় তিনি জ্যোতি স্টুডিওতে ক্যামেরাম্যান, জাল ইরানির শিক্ষানবিশ হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন।
১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে চলে আসেন করাচি। করাচী এসে তিনি যোগ দেন রেডিও পাকিস্তান-এ, সংবাদপত্র পাঠক হিসেবে। এখানেই আরেকজন প্রতিভাবান বাঙালি ফতেহ্ লোহানীর সাথে তাঁর সখ্যতা গড়ে উঠে। তখনো চলচ্চিত্রের ব্যাপারে তাঁর উৎসাহ কমেনি। যার কারণে তিনি প্রায়ই লাহোর যেতেন। এসময় তিনি সারঙ্গী, বাদক জওহারি খানের কাছ থেকে তালিম নেয়া শুরু করেন। ফতেহ্‌ লোহানী কিছুদিন পরে লন্ডন চলে গেলে ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে খান আতা একটি পোল্যান্ডীয় জাহাজে করে লন্ডন পাড়ি জমান। সেখানে অনেক বাঙালি অনুষ্ঠানে গায়ক এবং অভিনেতা হিসেবে তিনি অংশগ্রহণ করেন। এখানে এস এম সুলতানের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। এস এম সুলতানের চিত্রকর্মের উপকরণ যোগানে সাহায্য করেন তিনি। খান আতা এবং তাঁর সাথীরা এস এম সুলতান-এর চিত্রকর্মের প্রদর্শনী এবং বিক্রয়ের ব্যবস্থা করেন।
এক সময় লন্ডনের সিটি লিটারেরি ইন্সটিটিউটে তিনি থিয়েটার ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হন। পরের বছরেই তিনি ইউনেস্কোর বৃত্তি নিয়ে নেদারল্যান্ডে চলে যান।
১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে আবার লন্ডনে ফিরে এসে থিয়েটার রয়াল, ইউনিটি থিয়েটার, আরভিং থিয়েটারে সকল স্থানীয় গ্রুপের সাথে কাজ করতে থাকেন। এসময় তিনি কিছুদিন বিবিসি’র সাথেও কাজ করেছেন।
১৯৫৭-তে ফিরে আসেন ঢাকায়। এসেই তিনি পাকিস্তান অবজারভারে চাকরি নেন। এরপর তিনি রেডিওতে গীতিকার, সঙ্গীত পরিচালক, আবৃত্তিকার এবং অভিনেতা হিসেবে যোগ দেন।
খান আতা ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানি পরিচালক এ জে কারদার পরিচালিত উর্দু ভাষার চলচ্চিত্র ‘জাগো হুয়া সাভেরা’তে অভিনয়ের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেন। এতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন ভারতীয় অভিনেত্রী তৃপ্তি মিত্র। চলচ্চিত্রে অভিনীতেনা হিসেবে তিনি ‘আনিস’ নামটি ব্যবহার করতেন। একই বছরে মুক্তি পায় তাঁর অভিনীত প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র এহতেশাম পরিচালিত ‘এ দেশ তোমার আমার’, তাঁর নায়িকা ছিলেন সুমিতা দেবী। পরের বছরগুলোতে তাঁর জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়তে থাকে।
খান আতার চলচ্চিত্র কর্মসমূহ:- এ দেশ তোমার আমার (নায়ক-গীতিকার-সুরকার), যে নদী মরু পথে(নায়ক-সহযোগী সঙ্গীত পরিচালক-গীতিকার), কখনো আসেনি(নায়ক-গায়ক-সঙ্গীত পরিচালক), সূর্যস্নান(সঙ্গীত পরিচালক), সোনার কাজল( সঙ্গীত পরিচালক-গীতিকার), কাঁচের দেয়াল( অভিনয়-সঙ্গীত পরিচালক- গীতিকার), সংগম(সঙ্গীত পরিচালক), দুই দিগন্ত(সঙ্গীত পরিচালক), অনেক দিনের চেনা(পরিচালনা), মিলন (সঙ্গীত পরিচালক), বাহানা (সঙ্গীত পরিচালক), সাগর (সঙ্গীত পরিচালক), মালা (সঙ্গীত পরিচালক), আখেরী স্টেশন (সঙ্গীত পরিচালক), রাজা সন্ন্যাসী(পরিচালনা-প্রযোজনা-চিত্রনাট্য-সঙ্গীত পরিচালনা), নবাব সিরাজউদ্দৌলা (পরিচালনা-প্রযোজনা-গীতিকার-সঙ্গীত পরিচালনা), সোয়ে নদীয়া জাগে পানি (পরিচালনা-প্রযোজনা-সঙ্গীত পরিচালনা), সাত ভাই চম্পা (প্রযোজনা-অভিনয়-গীতিকার), অরুন বরুন কিরনমালা (পরিচালনা-প্রযোজনা-গীতিকার), মনের মতো বউ(অভিনয়-গীতিকার-সঙ্গীত পরিচালক), জোয়ার ভাটা (পরিচালনা-প্রযোজনা- গীতিকার-সঙ্গীত পরিচালক), জীবন থেকে নেয়া(অভিনয়-সঙ্গীত পরিচালক), সুখ দুঃখ(পরিচালনা-প্রযোজনা- গীতিকার-সঙ্গীত পরিচালক), আবার তোরা মানুষ হ(পরিচালনা-প্রযোজনা- গীতিকার-সঙ্গীত পরিচালক-অভিনয়), ঝড়ের পাখি (প্রযোজনা- গীতিকার-সঙ্গীত পরিচালক- অভিনয়), আরশীনগর(প্রযোজনা- গীতিকার-সঙ্গীত পরিচালক- পরিচালক), পরশপাথর(প্রযোজনা- গীতিকার-সঙ্গীত পরিচালক- পরিচালক), সুজন সখী (পরিচালনা-প্রযোজনা- গীতিকার-সঙ্গীত পরিচালক-অভিনয়), দিন যায় কথা থাকে (প্রযোজনা- গীতিকার-সঙ্গীত পরিচালক- পরিচালক), হিসাব নিকাশ (প্রযোজনা- গীতিকার-সঙ্গীত পরিচালক- পরিচালক), এখনো অনেক রাত (প্রযোজনা- গীতিকার-সঙ্গীত পরিচালক- পরিচালক) অন্যতম।
তাঁর পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র সমূহ- ডানপিটে ছেলে( স্বল্পদৈর্ঘ্য শিশুতোষ চলচ্চিত্র), দুটি পাতা একটি কুঁড়ি(প্রামাণ্যচিত্র), গঙ্গা অামার গঙ্গা (প্রামাণ্যচিত্র), বাংলা কবি জসিম উদ্দিন (প্রামাণ্যচিত্র), চা বাগানের রোজ নামচা (প্রামাণ্যচিত্র), গানের পাখি আব্বাস উদ্দিন (প্রামাণ্যচিত্র) প্রভৃতি।
তিনি যেসব চলচ্চিত্রের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন- ‘সূর্যস্নান’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে এবং ‘কাঁচের দেয়াল’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে ১৯৬৫-তে পাকিস্তান চলচ্চিত্র উৎসব-এ তিনি পুরস্কার লাভ করেন।
মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে ‘নবাব সিরাজউদ্দৌল্লা’ গোল্ডেন প্রাইজ মনোনীত।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার: শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার- সুজন সখী, শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার- ডানপিটে ছেলে, শ্রেষ্ঠ গীতিকার, শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক- এখনো অনেক রাত। এসব এছাড়াও তিনি অারো অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।
বহুমাত্রিক প্রতিভায় সমৃদ্ধ খান আতা ছিলেন একাধারে- অভিনেতা, গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, গায়ক, চলচ্চিত্র নির্মাতা,চিত্রনাট্যকার, কাহিনীকার, প্রযোজক-পরিবেশক । একজন প্রতিভাবান, সৃজনশীল মেধাবী মানুষ হিসেবে, শিল্পের নানা শাখায় বিচরণ করেছিলেন তিনি।
অভিনয়ের পাশা-পাশি তিনি প্রযোজনা-পরিচালনা ছাড়াও চলচ্চিত্রের বিভিন্ন শাখায়, অতিব কৃতিত্বপূর্ণ কাজ করেছেন।
কিংবদন্তী চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব খান আতা, প্রযোজক-পরিচালক হিসেবে আমাদেরকে উপহার দিয়েছেন জনপ্রিয় ও খ্যাতিমান সব চলচ্চিত্র। আবার প্রতিভাবান গীতিকার ও সুরকার হিসেবে আমাদের জন্য রেখে গেছেন অসংখ্য জনপ্রিয় ও কালজয়ী সব গান।
একজন উচুমানের অভিনেতা হিসেবেও তিনি ছিলেন, প্রসংশিত, প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয়। একজন জাতঅভিনেতার স্বাক্ষর রেখেছেন, অনবদ্য সৃজনশীল অভিনয়ের মাধ্যমে।
চলচ্চিত্র নির্মাণ করেও ব্যাপক আলোচিত ও প্রসংশিত হয়েছেন খান আতা । চলচ্চিত্র পরিচালনাতেও তিনি, তাঁর মেধা মননশক্তি দিয়ে সৃজনশীল কাজ করে গেছেন। তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহ, সে সময়ে চলচ্চিত্রদর্শক ও সমালোচক কর্তৃক সমাদৃত ও প্রসংশিত হয়েছে।
চলচ্চিত্র সম্পর্কে বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ ছিলেন তিনি। চলচ্চিত্র সম্পর্কে তাঁর, বিদেশে অর্জিত জ্ঞান ও শিক্ষা দিয়ে, নিজের দেশের চলচ্চিত্রশিল্পকে করে গেছেন সমৃদ্ধ। এফডিসি প্রতিষ্ঠার পর, এ শিল্পের ভিত রচনায় ও চলচ্চিত্রশিল্পকে গড়ে তোলার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে যে ক’জন কাজ করে গেছেন, খান আতা ছিলেন তাঁদের অন্যতম একজন।
অসাধারণ প্রতিভাবাসম্পন্ন একজন প্রগতিশীল, আধুনিক চিন্তা-চেতনার এক মহিরূহ চলচ্চিত্রব্যক্তিত্ব, খান আতা। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পে তথা শিল্প-সংস্কৃতিতে তাঁর অবদান, ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
( তথ্যসূত্র – অনুপম হায়াৎ ও ইন্টারনেট)

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/gfdg
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন

নায়িকার খোলস ছাড়ছেন শুভশ্রী

আরিয়ানকে নিয়ে কী বললেন ববি?