English

28 C
Dhaka
রবিবার, জুলাই ১৩, ২০২৫
- Advertisement -

বাংলা গানের খ্যাতিমান কন্ঠশিল্পী: মাহমুদুন্নবী

- Advertisements -

বাংলা গানের খ্যাতিমান কন্ঠশিল্পী, গীতিকার ও সুরকার মাহমুদুন্নবী’র ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৯০ সালের ২০ ডিসেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৪ বছর। প্রয়াত এই গুণী কন্ঠশিল্পীর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই । তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

মাহমুদুন্নবী ১৯৩৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামে, জন্মগ্রহন করেন।
শৈশবকাল থেকেই তাঁর গানের প্রতি ভীষণ ঝোঁক ছিল। কোনো গান একবার শুনলেই হুবহু তা গাইতে পারতেন তিনি। কলেজ জীবনে এসে ওস্তাদ প্রাণবন্ধু সাহার নিকট গান শিখেন ।

মাহমুদুন্নবী এক সময় অনুভব করলেন, পড়াশোনা নয়, গানই তাঁকে ভীষণভাবে টানছে, তাই লেখাপড়ার চেয়ে গান’কেই বেশী প্রাধান্য দিলেন। গানে মগ্ন থাকার নিম্মিত্তে, কলেজের পরীক্ষা না দিয়ে, গান গাইবার একান্ত বাসনায় প্রথমে চট্টগ্রাম চলে গেলেন এবং সেখান থেকে ঢাকায় এলেন । ঢাকায় তাঁর দেখা হয় ওস্তাদ গঁফুর খাঁ’র সাথে । তিনি শিল্পীর গান শুনে মুগ্ধ হন । তখন থেকে মাহমুদুন্নবী ওস্তাদ গঁফুর খাঁ’র কাছে গান শেখা শুরু করেন । পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় গান গেয়ে তিনি শ্রোতাপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেন । এসময় একদিন কার্জন হলে গান গাইতে গিয়ে পরিচয় হয় বিখ্যাত গণসংগীতশিল্পী শেখ লুৎফর রহমানের সাথে ।

লুৎফর রহমানই তাঁকে করাচীতে নিয়ে যান। করাচী কালচারাল সেন্টারে গান গেয়ে বাঙ্গালী মহলে বিশিষ্ট কন্ঠশিল্পী হয়ে ওঠেন তিনি । শুরু হয়ে যায় মাহমুদুন্নবীর সঙ্গীতে এগিয়ে যাবার ধাপ।

চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম কন্ঠদেন পাকিস্তানী ছবি ‘আধুরী দাস্তান’ ও ‘জিনে ভি দো’ ছবিতে ।

নিজের দেশে ফিরে বাংলায় গান করার প্রচণ্ড তাগিদ অনূভব করতে থাকেন মাহমুদুন্নবী । সেই তাগিদেই এক সময় দেশে ফিরে এসে, ঢাকা রেডিও-তে গান গাওয়া শুরু করেন। ঢাকা রেডিও-তে তাঁর প্রথম গান, নিজের লেখা ও সুরে ‘কাকনের ঠিনিঠিনি নূপূরের রিনিঝিনি’ গানটি ।
এক সময় ঢাকা রেডিও, টেলিভিশন ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত গান পরিবেশন করে মাহমুদুন্নবী ভীষণ ব্যস্ত ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ।

এরপরে ঢাকার চলচ্চিত্রে নেপথ্য কন্ঠশিল্পী হিসেবে গান গাওয়া শুরু করেন তিনি। মাহমুদুন্নবী যেসব ছবিতে কন্ঠ দিয়েছেন- জিনা ভি মুশকিল, পিয়াসা, উলঝন, জংলী ফুল, কাগজের নৌকা, হীরামন, বেহুলা, আগুন নিয়ে খেলা, চাওয়া পাওয়া, আয়না ও অবশিষ্ট, আবির্ভাব, খেলাঘর, নীল আকাশের নীচে, দুই ভাই, শেষ পর্যন্ত, সমাপ্তি, স্বরলিপি, দীপ নেভে নাই , নাচের পুতুল, অনির্বাণ, দর্পচূর্ণ, মায়ার বাঁধন, জোয়ার ভাটা, যে আগুনে পুড়ি, মধুমিতা, আগন্তুক, দি রেইন, হারজিৎ, ছন্দ হারিয়ে গেল, অনন্ত প্রেম, আলো তুমি আলোয়া, দি ফাদার, প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ।

মাহমুদুন্নবীর গাওয়া কালজয়ী জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে আছে- তুমি যে আমার কবিতা, আমারও বাঁশি রাগিণী…, তুমি কখন এসে দাঁড়িয়ে আছো আমার অজান্তে…, ও গো মোর মধুমিতা…, সালাম পৃথিবী তোমাকে সালাম, দুনিয়াকে করেছো টাকার গোলাম…, আমি সাত সাগর পাড়ি দিয়ে, কেন সৈকতে পড়ে আছি…, সুরের ভুবনে আমি আজও পথচারী, ক্ষমা করে দিও যদি না তোমায় মনের মত গান শুনাতে পারি…, গানের খাতায় স্বরলিপি লিখে বল কি হবে…, বড় একা একা লাগে তুমি পাশে নেই বলে…, আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন…, ও মেয়ের নাম দেবো কি ভাবি শুধু তাই…, এই স্বপ্ন ঘেরা দিন রাখব ধরে…, কে যেন আজ আমার চোখে…, প্রেমের নাম বেদনা…, আমি ছন্দহারা এক নদীর মত ছুটে যাই… গীতিময় এইদিন সেইদিন, চিরদিন রবে কি…, প্রভৃতি।

১৯৭৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত জনপ্রিয় রোমান্টিক চলচ্চিত্র ‘দি রেইন’-এ (আমি তো আজ ভুলে গেছি সবই) গান গাওয়ার জন্য, তিনি শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

ব্যক্তিজীবনে মাহমুদুন্নবী বিয়ে করেন, তাঁর খালাতো বোন রাশিদা চৌধুরীকে। রাশিদা-মাহমুদুন্নবী দম্পতী’র চার সন্তান। তাঁরা হলেন কন্ঠশিল্পী সামিনা চৌধুরী, কন্ঠশিল্পী ফাহমিদা নবী, সঙ্গীত পরিচালক রিদওয়ান নবী পঞ্চম ও তানজিদা নবী।

গান গাওয়ার বাইরে শিল্পী মাহমুদুন্নবী’র লেখার হাতও খুব ভালো ছিল । উপন্যাস থেকে রম্যরচনা সব ধরনের লেখাই তিনি লিখেছেন । সে সময়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে এবং পাঠক কর্তৃক সমাদৃত হয়েছে।

৬৯-এর গণঅভ্যুথানের সময় এবং ১৯৭১-এ, অনেক গণজাগরণমূলক গান নিজেই লিখেছেন এবং সুর করে, গেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস বাড়াতে উজ্জীবিত করেছেন মাহমুদুন্নবী ।

মাহমুদুন্নবী একটা সময়ে ‘আধুনিক সংগীত নিকেতন’ নামে একটি সংগীত স্কুল করেন, যেখানে সংগীত অনুরাগীরা তাঁর কাছে গান শিখতো । তাঁর সেসব ছাত্ররা অনেকেই আজ প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী ।

শ্রুতিমধুর কন্ঠের অসাধারণ প্রতিভাবান শিল্পী ছিলেন
মাহমুদুন্নবী। তাঁর ভরাটকণ্ঠের গাওয়া সুরেলা গান, খুব সহজেই আকর্ষণ করত দর্শক-শ্রোতাদের।
বাংলা আধুনিক সঙ্গীতের তুমুল জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পীদের অন্যতম প্রতিনিধি তিনি। বাংলাদেশের আধুনিক ও চলচিত্রের জনপ্রিয় ও কালজয়ী গানের সফল কন্ঠশিল্পী মাহমুদুন্নবী। রোমান্টিক গানের, যাদুকরী কন্ঠের বিরল এক প্রতিভা ছিলেন তিনি। তাঁর সময়ে তিনি ছিলেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে, অধিষ্ঠিত হয়েছেন শ্রেষ্ঠ গায়কের মর্যাদায়।

ব্যক্তি হিসেবে তিনি ছিলেন, অত্যান্ত সহজ-সরল, মিষ্টভাষী এবং গানপাগল অভিমানী এক মানুষ। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি কেবল গান-ই ধারণ করেছেন, তাঁর কন্ঠে ও হৃদয়ে। মাহমুদুন্নবী বাংলাদেশের আধুনিক ও চলচ্চিত্রের গানের, যে শুভ সূচনার উন্মেষ ঘটিয়েছিলেন তাঁর যাদুকরী কন্ঠে, তা আজও দর্শক-শ্রোতাদের হৃদয়ে চির স্মরণীয় হয়ে আছে। স্মরণীয় হয়ে আছেন মাহমুদুন্নবী নিজেও।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/3wpg
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন