হলিউড আর বলিউডে বিমান দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে অসংখ্য আলোচিত সিনেমা। বাস্তব হৃদয়বিদারক ঘটনা যেমন তুলে ধরা হয়েছে এসব সেলুলয়েডে, তেমনি কল্পনার ডানায় ভর করে এসেছে থ্রিলার, অ্যাকশন বা সাইকোলজিক্যাল ড্রামা।
রানওয়ে ৩৪
২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট দোহা থেকে জেট এয়ারওয়েজের ফ্লাইট ৯ ডব্লিউ ৫৫৫ কোচি বিমানবন্দরের আকাশে পৌঁছায়। কিন্তু সদ্য বৃষ্টি হওয়ার কারণে বিমানটি নামতে পারেনি। তা ছাড়া ভোরের কুয়াশায় চারদিক আচ্ছাদিত ছিল। ওই সময়ে বিমানে ১৪১ জন যাত্রী আর আটজন ক্রু সদস্য ছিলেন। বিমানে জ্বালানি মজুত ছিল ৪ হাজার ৮৪৪ লিটার। কোচি বিমানবন্দরে তিনবার ল্যান্ডিং করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। কমতে থাকে বিমানের জ্বালানির পরিমাণ। দুই হাজার লিটারে জ্বালানি নামার পর বিমানটি তিরুবনন্তপুরম এয়ারপোর্টে ঘুরিয়ে নেন পাইলট। কিন্তু সেখানেও প্রচণ্ড কুয়াশার কারণে ছয়বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। বিমানবন্দর থেকেও ল্যান্ড করতে বাধা দেওয়া হয়। এই বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত হয় ‘রানওয়ে ৩৪’ সিনেমা। অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ছবিটিতে অভিনয়ের পাশাপাশি এটি পরিচালনা করেন অজয় দেবগন। ২০২২ সালের ২৯ এপ্রিল মুক্তি পায় সিনেমাটি।
রং দে বাসন্তী
আমির খানের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা সিনেমা এটি। এই চলচ্চিত্র মূলত রাজনৈতিক-সামাজিক বার্তা কেন্দ্রিক। তবে একটি বিমান দুর্ঘটনা পুরো গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। মিগ-২১ যুদ্ধবিমানের এক দুর্ঘটনায় ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট অজয় সিং রাঠোরের মৃত্যু তার বন্ধুদের মনে জাগিয়ে তোলে প্রতিবাদ আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ইচ্ছা। দুর্ঘটনাটি হয়ে ওঠে যুব বিদ্রোহের প্রতীক। সিনেমাটির গল্প মোড় নেয় যখন বিমান বাহিনীর মিগ-২১ ক্র্যাশে সোনিয়ার বয়ফ্রেন্ড ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট অজয় (আর. মাধবান) মৃত্যুবরণ করেন। অজয়ের মৃত্যু মোড় ঘুরিয়ে দেয় ডিজেদের জীবনেও। অজয়ের মৃত্যুর পর সরকার ঘোষণা করে, পাইলটের ভুলের কারণে মিগ-২১ ক্র্যাশ হয়। কিন্তু দক্ষ পাইলট অজয় শহরের অসংখ্য লোকের প্রাণ বাঁচানোর জন্য তাঁর জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। সরকারের উচ্চপর্যায়ের মন্ত্রী ও আমলাদের দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশ থেকে কেনা সস্তা ও ত্রুটিযুক্ত মিগ-২১ এর কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছিল। এমন গল্প নিয়ে নির্মিত হয় ‘রং দে বাসন্তী’ সিনেমা। রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা নির্মিত সিনেমাটি ২০০৬ সালের ২৬ জানুয়ারি মুক্তি পায়।
ইউ হোতা তো ক্যায়া হোতা
নাসিরুদ্দিন শাহ পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি এক বিমান দুর্ঘটনার পরিণতি নিয়ে গড়া। যেখানে একাধিক চরিত্রের জীবনে ঘটে যায় ভয়াবহ বদল। ভাগ্য, দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর হঠাৎ আগমন কীভাবে জীবনের গতিপথ বদলে দেয়, তা নিপুণভাবে দেখানো হয়েছে এই মানবিক চিত্রনাট্যে।
ফ্লাইট
ফ্লাইট হলো ২০১২ সালের একটি আমেরিকান চলচ্চিত্র- যা পরিচালনা করেছেন রবার্ট জেমেকিস। এখানে ডেনজেল ওয়াশিংটন উইলিয়াম হুইটেকার সিনিয়র চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যিনি একজন পাইলট। বিমানে একটি যান্ত্রিক ব্যর্থতার পরে তার বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে যাচ্ছিল। মারা যাচ্ছিলেন প্রায় প্রত্যেকেই। এই সময় পাইলট অলৌকিকভাবে বিমানটি ক্র্যাশ ল্যান্ডিং করাতে সমর্থ হন। যাতে সবাই বেঁচে যান। ঘটনার পরপরই তাঁকে একজন নায়ক হিসেবে প্রশংসিত করা হয়েছে। তবে ঘটনার তদন্ত তার দিকে এমন প্রশ্নগুলো ধেয়ে আসে যা অনেক সন্দেহ তৈরি করে। পরে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এতে পাইলট চরিত্রে অভিনয় করেছেন ডেনজেল ওয়াশিংটন। চলচ্চিত্রটি আলাস্কা এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ২৬১ এর বিমান দুর্ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল। এটি বাণিজ্যিকভাবেও সফল ছিল। এর নির্মাণ ব্যয় ছিল ৩১ মিলিয়ন ডলার আর ১৬১.৪ মিলিয়ন ডলার আয় করেছিল।
ফেয়ারলেস
জেফ ব্রিজ অভিনীত ছবি ‘ফেয়ারলেস’ এ বিমান দুর্ঘটনার মতো নির্মম পরিস্থিতিকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। প্লেন ক্র্যাশের দৃশ্যে দেখা যায়, জেফের পাশে বসা একটি ছোট্ট ছেলে আসন্ন মৃত্যু দেখে ঘাবড়ে যায়। জেফ সেই ছোট্ট ছেলেকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। এর এক পর্যায়েই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে যায়।
এলাইভ
প্লেনটি মেঘে ঢেকে যায়, কোনো কিছুই পাইলটের দৃষ্টিগোচর হয় না। থেকে থেকে প্লেন ঝাঁকুনি দিয়ে উঠছে। আর যাত্রীদের মনে প্রাণ সংকটের শঙ্কা বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত ঘটে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা। দৃশ্যটি ‘এলাইভ’ ছবির। ছোট্ট প্লেনে আনন্দ-ফুর্তিতে থাকা যাত্রীদের নির্মম ফলাফল।