স্বাধীনতার পর বাংলা সিনেমায় যে ক’জন আলো ছড়িয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা। প্রযোজনার পাশাপাশি দর্শকদের উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় সিনেমা। অভিনয়ের বাইরে তার আরও একটি পরিচয় তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। গর্ব করার মতো সেই পরিচয় ও সার্টিফিকেট নিয়ে এখন অনেকটাই অনুতপ্ত-বিরক্ত এই নায়ক। যা কিছুদিন আগেই তিনি জানিয়েছেন।
নায়কের কথায়, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম ছবি “ওরা ১১ জন”, প্রযোজক মাসুদ পারভেজ। ধিক তোমাকে, ধিক তোমার মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট এবং মুক্তিযোদ্ধা আইডেন্টিটি কার্ডকে।’ তার এমন ক্ষোভ ছিল মূলত, হাসপাতালে সেবা নিতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়ার কারণ।
বর্তমানে কেমন আছেন কিংবদন্তি এই অভিনেতা জানতে চাইলে সোহেল রানা বলেন, ‘আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। একটু সুস্থবোধ করছি। বয়স তো অনেক হয়েছে এখন এই ভালো, এই খারাপ- এভাবেই দিন কাটছে।’
কথা কথা তার মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গ আসতেই অনেকটা খেপে যান এই অভিনেতা। বলেন, ‘কী হবে এই মুক্তিযোদ্ধা কার্ড দিয়ে আর এই কার্ডের কাজ কী? যার কোন মূল্যই নেই এদেশে। বিগত সরকার থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এক্সট্রা কোনো সুবিধা পাওয়া যায় না এই কার্ডে; না ভিআইপি, না সিআইপি। যেখানেই যাবেন সাধারণ মানুষের মতো করেই আপনাকে চলতে হবে। আমি আমার কার্ড বাসায় ফেলে রেখেছি। ওটা কোনো কাজের না। যা করেছি আমি নিজ দেশের জন্য করেছি, এটাই শান্তনা।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে হাসপাতালে গিয়ে আলাদা কোনো সেবা পাইনি। হাসপাতালগুলো এখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মনের কষ্ট থেকেই কথাগুলো তখন ফেসবুকে লিখেছিলাম। বর্তমান সরকার (অন্তবর্তীকালীন সরকার) তারা তো এক বছর পার করেছে। তারা যদি এই বিষয়গুলো দেখত, তাও বলতে পারতাম এই কার্ডের মূল্য তারা দিয়েছে। যাই হোক মুক্তিযোদ্ধার বিষয়টি নিয়ে আমি আর কোনো কথা বলতে চাই না।’
বিভিন্ন পুরস্কারের পাশাপাশি আপনি তো আজীবন সম্মাননাও পেয়েছেন। ‘হ্যাঁ, এটি তো আমি সিনেমার জন্য পেয়েছি। ভক্তদের জন্য পেয়েছি। এখন কী সেই সম্মাননা নিয়ে ঘুরতে হবে বা জনে জনে গিয়ে বলতে হবে, আমি আজীবন সম্মাননা পেয়েছি; আমার জন্য বিশেষ সুবিধা রাখতে হবে। আমি কখনো বিশেষ কোনো সুবিধা আশা করিনি আর আগামীতেও করব না। আমি চাই যার যে কাজ, সে যেন সেই কাজটাই ভালো ভাবে করে। যাদের সেবা দেওয়ার দায়িত্ব তারা যেন প্রতিটি মানুষকেই সুন্দর ভাবে সেবা দেয়, ভোগান্তি না।’ বললেন সোহেল রানা।