English

15 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৫
- Advertisement -

রূপালী পর্দার বাইরে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এর নায়ক তিনি

- Advertisements -

নাসিম রুমি: একজন নায়ক যখন পর্দার আলো থেকে সরে এসে মানুষের জীবনের আলো জ্বালাতে শুরু করেন, তখন তিনি কেবল অভিনেতা থাকেন না—তিনি হয়ে ওঠেন ইতিহাসের অংশ। ইলিয়াস কাঞ্চনের গল্প ঠিক তেমনই। ঢালিউডের সুপারস্টার হিসেবে যিনি দর্শকের করতালিতে অভ্যস্ত ছিলেন, সেই মানুষটিই গত দুই যুগের বেশি সময় ধরে কোনো ক্যামেরা বা মঞ্চের তোয়াক্কা না করে লড়ে যাচ্ছেন নিরাপদ সড়ক চাই এর জন্য। ১৯৫৬ সালে কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলায় আশুতিয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

বিশ্ব সিনেমার দিকে তাকালে একটি ঘটনা সবাইকে ভাবিয়ে তুল। আবেগি তাড়িত করে তুলে। হলিউড অভিনেতা পল ওয়াকার। যাকে ভুলে যাওয়ার কথা না। এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর তার নামে গড়ে ওঠে একটি দাতব্য সংস্থা। এই সংস্থার সক্রিয় সদস্য আরেক হলিউড অভিনেতা ভিন ডিজেল। ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ সিরিজে একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে গড়ে ওঠা বন্ধুত্বই পল ওয়াকারের স্মৃতিকে সমাজসেবায় রূপ দেওয়ার প্রেরণা জুগিয়েছে ভিন ডিজেলকে। এখনও তিনি সেই সংস্থার সঙ্গে জড়িত। বন্ধুর হয়ে মানবকল্যাণে নিবেদিত তিনি।

একই সূত্রের গল্প ইলিয়াস কাঞ্চনের জীবনেও। সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রীর বিয়োগের পর তিনি নিজেকে নিবেদিত করেছেন সড়কে মানুষের নিরাপদ চলাচলের জন্য। লড়াই করে যাচ্ছেন নিরাপদ সড়কের দাবিতে। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’—এই একটি স্লোগান সামনে করেই পথ চলা তার। ‘পথ যেন হয় শান্তির, মৃত্যুর নয়’ এই বাক্যই ছিল ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ খ্যাত এই নায়কের জীবনের ব্রত। এই বাক্যটিই হয়ে উঠেছে তার জীবনের ব্রত।

সংক্ষিত পরিচয়

১৯৫৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলায় জন্ম ইলিয়াস কাঞ্চনের। কবি নজরুল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে টম হ্যাংকস বা ব্র্যাড পিটের মতো তিনিও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চূড়ান্ত না করেই অভিনয়ের পথে পা বাড়ান। দ্বিতীয় বর্ষে পড়াকালেই, ১৯৭৭ সালে সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘বসুন্ধরা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে রূপালী পর্দায় অভিষেক ঘটে তার। এরপর একের পর এক ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক। ‘বেদের মেয়ে জোসনা’—বাংলা চলচ্চিত্র ইতিহাসের সর্বাধিক ব্যবসাসফল ছবিগুলোর একটি। ববিতা থেকে পপি—চার দশকের নানা প্রজন্মের নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে কাজ করেছেন তিনি।তবে বাংলা সিনেমা যখন অশ্লীলতার অভিযোগে সংকটে পড়ে, তখন ধীরে ধীরে চলচ্চিত্র থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন ইলিয়াস কাঞ্চন। মনোযোগ দেন সমাজসেবা ও রাজনীতিতে।

নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের যাত্রা

১৯৭৯ সালে জাহানারা কাঞ্চনকে বিয়ে করেন ইলিয়াস কাঞ্চন। সুখের সংসারে কেটে যায় ১৪টি বছর। কিন্তু ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর সেই সুখ নিমেষেই তছনছ হয়ে যায়। বান্দরবনে শুটিংরত ইলিয়াস কাঞ্চনকে দেখতে সন্তান জয় ও ইমাকে নিয়ে রওনা হন স্ত্রী জাহানারা। পথে পটিয়ার কাছে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি । মায়ের সঙ্গে বাবাকে দেখতে গিয়ে সন্তানরা ফিরে আসে মায়ের নিথর দেহ নিয়ে।

এই শোকই ইলিয়াস কাঞ্চনের জীবনকে অন্য পথে মোড় নেয়। স্ত্রীর মৃত্যুকে শক্তিতে পরিণত করে ওই বছরের ১ ডিসেম্বর এফডিসি থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ স্লোগান নিয়ে পদযাত্রা করেন তিনি। লক্ষ্য একটাই—সড়ক যেন আর কোনো শিশুকে তার মায়ের কাছ থেকে কেড়ে না নেয়। সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে উৎসাহিত হয়ে, দৈনিক যায়যায়দিনের সম্পাদক শফিক রেহমানের পরামর্শে আন্দোলনটিকে সাংগঠনিক রূপ দেন তিনি। উত্থাপন করেন ২২ দফা দাবি।ঢাকা ছাড়িয়ে দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন। পাশাপাশি স্ত্রী হারানোর দিন ২২ অক্টোবরকে ‘নিরাপদ সড়ক দিবস’ হিসেবে ঘোষণার দাবিও জোরালো করেন তিনি। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ২০১৭ সালের ১৪ জুন সরকারিভাবে ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

একুশে পদক প্রাপ্তি

দীর্ঘ অভিনয়জীবন থাকা সত্ত্বেও ইলিয়াস কাঞ্চন একুশে পদক পেয়েছেন সমাজসেবায়—এটাই তাকে আলাদা করে তোলে। ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা লাভ করেন তিনি।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/y0qf
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন