এ কে আজাদ: চাঁদ প্রবাসী। কৌতুক অভিনেতা। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে- স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের কন্ঠযোদ্ধা তিনি। শব্দসৈনিক-কৌতুক অভিনেতা চাঁদ প্রবাসী’র দশম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। প্রয়াত এই গুণি অভিনেতার স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
চাঁদ প্রবাসী (সৈয়দ মোহাম্মদ চাঁদ) ১৯২৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের ফকিরপুরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তিনি পঞ্চাশের দশকে কোলকাতায়, ‘বউ মা’ ছবিতে সর্বপ্রথম অভিনয় করেন। এরপর তিনি ঢাকায় এসে অভিনয় করেন জহির রায়হানের প্রামাণ্যচিত্র ‘নয়া সড়ক’-এ।
১৯৬৫ সাল থেকে ঢাকা বেতারের সঙ্গে যুক্ত হন চাঁদ প্রবাসী। বেতারের গ্রামীণ শ্রোতাদের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান, ‘আমার দেশ’-এ ‘রুস্তম আলী’ চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়েছিলেন। ঢাকার বিভিন্ন মঞ্চেও অভিনয় করতেন তিনি।
এক সময় প্যারোডি গান গেয়ে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ছিলেন চাঁদ প্রবাসী। সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি প্যারোডি গান রচনা করতেন, সুর করতেন এবং নিজেই গাইতেন। তৎকালীন সময়ে তাঁর বেশ কয়েকটি কৌতুক ও প্যারোডি গানের ডিস্ক বেরিয়েছিল। তাঁর নিজের লেখা, সুর করা ও গাওয়া কৌতুকমিশ্রিত সেইসব গান বেশ জনপ্রিয়তাও পেয়েছিল।
চাঁদ প্রবাসী পরবর্তিতে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। তাঁর অভিনীত ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য- কার বউ, বেহুলা, আলী বাবা, যোগ বিয়োগ, ভাগ্যচক্র, আনোয়ারা, দুই ভাই, কাঞ্চনমালা, সংসার, প্রতিশোধ, টাকা আনা পাই, অনির্বাণ, জোয়ার ভাটা, অশ্রু দিয়ে লেখা, অবাক পৃথিবী, দিন যায় কথা থাকে, মহানগর, ঘর জামাই, কসাই, দোস্তী, লাল সবুজের পালা, জনি, নান্টু ঘটক, সোহাগ মিলন, শুভদা, সিকান্দার, জীবনধারা, প্রভৃতি।
চাঁদ প্রবাসী বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ষাট ও সত্তর দশকের একজন জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা ছিলেন। ছোট ছোট চরিত্রে সুন্দর-সাবলিল, কৌতুকপূর্ণ অঙ্গভঙ্গির সাথে অভিনয় করতেন। তাঁর কথা বলার ঢং এবং অভিনয় দক্ষতা দর্শকদের বিনোদিত করতো। তিনি বেতার ও টেলিভিশনের একজন স্বনামধন্য জনপ্রিয়শিল্পী ছিলেন।
আমরা হয়তো এ ধরণের অভিনেতাদের মরে যাওয়ার পর মনে রাখার চেষ্টাও করি না। অথচ চলচ্চিত্রকে ভালবেসে, অভিনয়কে ভালবেসে, তাঁরা কিন্তু আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন- চলচ্চিত্রে ছোট ছোট চরিত্রে সুন্দর-সাবলিল, কৌতুকপূর্ণ অভিনয় করে, সিনেমা দর্শকদের বিনোদিত করতে। যখন যতটুকু চরিত্রই পেতেন তাঁরা, তাদের অভিনয় প্রতিভার গুণে সেই চরিত্রকে চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলে সিনেমা দর্শকদের নজর কাড়তেন। অভিনয়শিল্পী চাঁদ প্রবাসী অবশ্যই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবেন।