English

27.8 C
Dhaka
মঙ্গলবার, জুলাই ১, ২০২৫
- Advertisement -

সৃজনশীল মেধাবী গীতিকার কে জি মোস্তফার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ

- Advertisements -

একে আজাদ: কে জি মোস্তফা। গীতিকার, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, ও হোমিও চিকিৎসক। বাংলা গানের একজন খ্যাতিমান গীতিকার তিনি। এই খ্যাতিমান-জনপ্রিয় গীতিকারের রচিত গানে সুর দিয়েছেন সুবিখ্যাত সুরকারেরা এবং তাঁর লেখা গানে কণ্ঠ দিয়েছেন স্বনামখ্যাত ও জনপ্রিয় সব কন্ঠশিল্পীরা । তিনি নিজেও পেয়েছেন জনপ্রিয়তা-সুখ্যাতি। কাব্যিক গানের অসম্ভব মেধাবী এই গীতিকার আমাদের দেশের গানের জগতকে সমৃদ্ধ করে গেছেন তাঁর প্রতিভা দিয়ে । বিশেষ করে তাঁর শ্রুতিমধুর বাণীসমৃদ্ধ গান দিয়ে, বাংলা সিনেমাকে করেছেন সমৃদ্ধ।

সৃজনশীল মেধাবী গীতিকার কে জি মোস্তফা’র তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ । তিনি ২০২২ সালের ৮ মে, ৮৫ বছর বয়সে, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। প্রয়াত এই গুণী ব্যক্তিত্বের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।

নন্দিত গীতিকার কে জি মোস্তফা ১৯৩৭ সালের ১ জুলাই, নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। ছাত্রজীবন থেকে কে জি মোস্তফার কবিতা দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়। ছাত্র থাকা অবস্থায়ই ১৯৫৮ সালে ‘দৈনিক ইত্তেহাদ’-এ শিক্ষানবিশ হিসেবে সাংবাদিকতায় যুক্ত হন। একই বছরে ‘দৈনিক মজলুম’-এ সহ-সম্পাদক পদে নিয়োগ পান এবং পত্রিকাটির বিলুপ্তির আগ পর্যন্ত বহাল ছিলেন। ১৯৬৮ সালে ‘সাপ্তাহিক জনতা’য় সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন।

স্বাধীনতার পর প্রথমে ‘দৈনিক গণকন্ঠ’, পরে ‘দৈনিক স্বদেশে’ চীফ রিপোর্টারের দায়িত্ব পালন করেণ কে জি মুস্তফা। ‘দৈনিক জনপদে’ কূটনৈতিক রিপোর্টার হিসেবেও কাজ করেছেন। সেই সময়ে ‘নূপুর’ নামে একটি বিনোদন মাসিকও সম্পাদনা করতেন। ১৯৭৬ সালে বিলুপ্ত সংবাদপত্রের একজন সাংবাদিক হিসেবে কে জি মুস্তফা বি.সি.এস (তথ্য) ক্যডারভূক্ত হন এবং চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরে সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন। পদোন্নতি পেয়ে প্রথমে সম্পাদক, পরে সিনিয়র সম্পাদক পদে উন্নীত হন। ১৯৯৬ সালে অবসর গ্রহণ করেন। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত কিশোর পত্রিকা ‘নবারুণ, সাহিত্য মাসিক ‘পূর্বাচল’, ‘সাপ্তাহিক সংবাদ’ এবং সর্বশেষ ‘সচিত্র বাংলাদেশ’পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬০ সাল থেকে চলচ্চিত্র, রেডিও এবং টেলিভিশনে তাঁর লেখা প্রচুর গান প্রচারিত হতে থাকে।
কে জি মোস্তফার লেখা চলচ্চিত্রের গানগুলোই বেশী জনপ্রিয়তা পায়। চলচ্চিত্রে লেখা তাঁর প্রথম গান- ‘তোমারে লেগেছে এত যে ভালো/চাঁদ বুঝি তা জানে’ চলচ্চিত্রের সর্বাধিক জনপ্রিয় গান হিসেবে আজও স্বীকৃত।

তিনি প্রথম গান লিখেন, এহতেশাম পরিচালিত ‘রাজধানীর বুকে’ চলচ্চিত্রের জন্য, চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৬০ সালে।
কে জি মোস্তফা আরো যেসব চলচ্চিত্রে গান লিখেছেন তাঁরমধ্যে- নতুন সুর, অধিকার, গলি থেকে রাজপথ, নাচের পুতুল, মায়ার সংসার, পীচঢালা পথ, মনের মানুষ অন্যতম।

কে জি মোস্তফা কয়েকটি চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন। অধিকার, গলি থেকে রাজপথ, মায়ার সংসার চলচ্চিত্রগুলোর সহকারী পরিচালক হিসেবে তিনি কাজ করেছেন।

কে জি মোস্তফার লেখা কয়েকটি জনপ্রিয় কালজয়ী গান- তোমারে লেগেছে এত যে ভালো চাঁদ বুঝি তা জানে.., কে স্মরণের প্রান্তরে…, শহরবাসী শোনো…, ফুলের কানে ভ্রমর এসে চুপিচুপি বলে যায়…, তারা ভরা রাতে…, তোমরা যাঁদের মানুষ বলো না…., আয়ানাতে ঐ মুখ দেখবে যখন…, প্রভৃতি।

কে জি মোস্তফার লেখা গ্রন্থসমূহ- কাছে থাকো ছুঁয়ে থাকো, উড়ন্ত রুমাল, চক্ষুহীন প্রজাপতি, সাতনরী প্রাণ, আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন, এক মুঠো ভালোবাসা, প্রেম শোনে না মানা (কাব্যগ্রন্থ)। কবিতার প্রাণ মন দেহ (গদ্যগ্রন্থ), কোথায় চলেছি আমি (সরস আত্মকাহিনী)। শিশু তুমি যিশু, কন্যা তুমি অনন্যা, মজার ছড়া শিশুর পড়া (ছড়ার বই)।
তাঁর লেখায় কয়েকটি গানের ক্যাসেট বেরিয়েছিল এক সময়ে। সেইসব অ্যালবাম- ‘তোমারে লেগেছে এত যে ভালো’,
‘তৃষ্ণা আমার হারিয়ে গেছে’ ও ‘কাছে থাকো ছুঁয়ে থাকো’।

কে জি মোস্তফা তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেন বহু পুরস্কার, সম্মাননা ও পদক। যারমধ্যে- কুমিল্লার অলক্ত সাহিত্য সংসদ- সংবর্ধনা ও পদক-১৯৮৭, জাতীয় প্রেসক্লাব-লেখক সম্মাননা ও পদক-২০০৩/২০০৯, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ললিত কলা বিভাগ ‘সফেন’-এর সম্মাননা ও পদক ২০০৪, ‘সৃজনী’ সংগীত গোষ্ঠীর সম্মাননা ও পদক-২০০৫, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ লেখক পুরস্কার-২০১০, বাংলাদেশ স্কাউটস-এর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদক-১৯৯২, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘ডাকসু’র শ্রেষ্ঠকবির সনদপত্র-১৯৫৯ অন্যতম।

কে জি মোস্তফা অবসর সময়ে হোমিও চিকিৎসক হিসেবে সেবা প্রদান করতেন। প্রেসক্লাবের গেটে এজটা রুমে তাঁর চেম্বার ছিল।

গীতিকার, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, ও হোমিও চিকিৎসক সব জায়গায়ই তিনি সফল বিচরণ করেছেন। আমাদের শিল্প-সংস্কৃতিজগতের সফল এই মানুষটি অনন্তলোকে ভালো থাকুন- এই প্রার্থণা করি।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/y7cb
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন