English

28 C
Dhaka
রবিবার, জুন ১৫, ২০২৫
- Advertisement -

সোনালি যুগের সিনেমা ‘এপার ওপার’ – সোমার প্রেমে সোহেল রানা

- Advertisements -

নাসিম রুমি: ১৯৭৫ সালে মুক্তি পায় প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার মাসুদ পারভেজ ওরফে সোহেল রানা পরিচালিত সিনেমা ‘এপার ওপার’। ছবিতে প্রযোজক, পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার ছিলেন মাসুদ পারভেজ ওরফে সোহেল রানা। সিনেমার কেন্দ্রীয় আলী চরিত্রে অভিনয়ও করেন তিনি। আর আসমা চরিত্রে ছিলেন ওপার বাংলার অভিনেত্রী সোমা মুখার্জি।

সোমা মুখার্জিকে এ সিনেমায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল ঘটনাচক্রে। এতে অভিনয় করার কথা ছিল সুচরিতার, কিন্তু শুটিংয়ের চার দিন আগে তাঁর মাতামহী অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। তখন ছবির আরেক অভিনেত্রী সুমিতা দেবী সোহেল রানার কাছে কলকাতার অভিনেত্রী সোমা মুখার্জির নাম প্রস্তাব করেন। সিনেমার অধিকাংশ দৃশ্যের শুটিং হয়েছিল সিলেটের জয়ন্তিয়াপুরে।

সোমার বাবা মেয়েকে নিয়ে কলকাতা থেকে সোজা জয়ন্তিয়াপুরে চলে যান। এ ছবিতে একটি দৃশ্যে পাহাড় থেকে গড়িয়ে নামার সময় বেশ আঘাত পান সোহেল রানা। সে সময় দৌড়ে আসেন সোমা মুখার্জি। উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন তাঁর জন্য।এভাবে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। ছবিতে অভিনয়ের সময় সোহেল রানা অভিনেত্রী সোমা মুখার্জির প্রেমে পড়েন বলে প্রচার আছে। সোমাও তাঁকে ভালোবেসে ফেলেন। বিয়ের কথাও ভাবেন তারা দুজনে। কিন্তু বাদ সাধেন সোমার বাবা।

কারণ উঠতি নায়িকা বিয়ের পিঁড়িতে বসলে তাঁর ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে। মেয়েকে নিয়ে তিনি কলকাতায় ফিরে যান। রোমান্টিক সিনেমা হিসেবে ‘এপার ওপার’ দারুণ বাণিজ্যিক সাফল্য পায়। সিনেমার গানগুলোও তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে ‘ভালোবাসার মূল্য কত’ গানটি দর্শক-শ্রোতার মুখে মুখে ফেরে। এর সংগীত পরিচালক ছিলেন আজাদ রহমান। গানটিতে কণ্ঠও দিয়েছিলেন তিনি। এদিকে প্রখ্যাত ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন বলেন, সত্তরের দশক। ঢাকার ‘নাজ’-এ মুক্তি পেল ‘এপার ওপার’। কাজী আনোয়ার হোসেনের বিখ্যাত চরিত্র ‘মাসুদ রানা’র মাধ্যমে নায়ক সোহেল রানার অভিষেক ঘটলেও মুগ্ধতা কেড়ে নেন তিনি এপার ওপারের মাধ্যমে।

প্রথম ছবি ‘মাসুদ রানা’য় ড্যাশিং ইমেজের নায়ক সোহেল রানা দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হলেও দ্বিতীয় ছবি এপার ওপারে খুব মামুলি ডিজাইনের পাজামা আর একটা ফতুয়া টাইপ জামা পরা সোহেল রানা বাজিমাত করে ফেললেন। ঢাকার ছবির দর্শকরা সাদরে তাঁকে গ্রহণ করলেন। ঢাকার অন্য নায়করা তখন উচ্চমাত্রার উচ্চকণ্ঠ ঢিঁশ্যুম ঢুশ্যুম অভিনেতা। এ সিনেমায় সোহেল রানা আবির্ভূত হলেন নতুন ম্যানারিজমে, একটি সফট ইমেজ নিয়ে। এরকম ইমেজ ১৯৭৫ সালের ছবিতে তখন অকল্পনীয় ছিল। বলা চলে এপার ওপারের মাধ্যমে রোমান্টিক সোহেল রানা জয় করে নিলেন সিনেমাপ্রিয় মধ্যবিত্ত বাঙালির হৃদয়।

এ সিনেমার ‘ভালোবাসার মূল্য কতো’ গানটি গাওয়ার জন্য আবদুল জব্বারকেই নির্বাচন করেছিলেন আজাদ রহমান। গানটির দুটি ভার্সন আছে সিনেমায়। শুরুর দিকে একবার নায়ক সোহেল রানা গানটি গেয়েছেন অতি আনন্দচিত্তে এবং শেষদিকে আরেকবার গেয়েছেন বেদনার্ত কণ্ঠে। শিল্পী আবদুল জব্বার এ গানটির জন্য দুবার পারিশ্রমিক দাবি করেছিলেন; কিন্তু আজাদ রহমান জব্বারকে দুবার পেমেন্ট করতে রাজি ছিলেন না। ‘ভালোবাসার মূল্য কতো’ গানটি তৈরি করে প্রযোজক-পরিচালক সোহেল রানাকে শুনিয়েছিলেন আজাদ রহমান।

আজাদ রহমানের কণ্ঠে গানটি শুনে সোহেল রানাই প্রস্তাব করেছিলেন আবদুল জব্বার না গাইলে আপনিই গেয়ে ফেলুন গানটা। আপনার কণ্ঠেও খুব ভালো লাগছে। এরপর আজাদ রহমান নিজের সংগীতায়োজনে নিজেই কণ্ঠ দিলেন। ফলে চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক সিংগার হিসেবে দুর্দান্ত এক নতুন শিল্পীর আগমন ঘটল। প্রসঙ্গত, মাসুদ পারভেজ ওরফে সোহেল রানা স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা ‘ওরা ১১ জন’-এর প্রযোজক। তিনি সু-অভিনয়ের পাশপাশি দুই ডজনেরও বেশি চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছেন।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আল কোরআন ও আল হাদিস

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন