English

30 C
Dhaka
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
- Advertisement -

স্বনামখ্যাত কন্ঠশিল্পী ও সঙ্গীতপরিচালক বশির আহমেদের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

- Advertisements -

আজাদ আবুল কাশেম: বশির আহমেদ। স্বনামখ্যাত কন্ঠশিল্পী ও সঙ্গীতপরিচালক। তিনি গান গেয়েছেন, সুর করেছেন, গান লিখেছেন ও গানের শিক্ষকতা করেছেন। খ্যাতিমান এই গুণী সংগীত ব্যক্তিত্ব আজীবন সমৃদ্ধ করে গেছেন আমাদের গানেরভুবনকে। এই গুণী সংগীতজ্ঞর অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৪ সালের ১৯ এপ্রিল, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। বরেণ্য এই সঙ্গীতশিল্পীর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

বশির আহমেদ (পাকিস্তান আমলে ‘আহমেদ রুশদী’ নামে পরিচিত ছিলেন) ১৯৩৯ সালের ১৯ নভেম্বর, কলকাতার খিদিরপুরে, জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম নাসির আহমেদ। তিনি উর্দু সাহিত্যে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন ।

বশির আহমেদ কলকাতায় ওস্তাদ বেলায়েত হোসেনের কাছ থেকে সঙ্গীত শেখার পর মুম্বাইয়ে চলে যান। সেখানে উপমহাদেশের প্রখ্যাত ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খাঁ’র কাছে তালিম নেন।

এই গুণী শিল্পী ১৯৫৬ সালে, মাত্র সতেরো বছর বয়সে বাংলাদেশেরই আরেক কৃতি সন্তান, শ্রীমতী গীতা দত্তের সঙ্গে বোম্বের একটি ছবিতে কন্ঠ দেন। সেই সময় হিজ মাস্টার্স ভয়েস তাঁর রেকর্ড বের করে। আশা ভোঁসলের সঙ্গেও ডুয়েট গান গাওয়ার সুযোগ হয়েছিল বশির আহমেদ এর।
উপমহাদেশের খ্যাতিমান কন্ঠশিল্পী নূর জাহানের সঙ্গে অনেক উর্দূ গান গেয়েছেন তিনি ।

বশির আহমেদ ১৯৬০ সালে, তালাত মাহমুদের সঙ্গে আমাদের দেশে আসেন গান গাওয়ার জন্য। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাঁরা একসঙ্গে স্টেজে গান করেন। তারপর ফিরে গেলেও গানের টানেই কিছুদিন পরপর ঢাকা আসতেন তিনি। এই আসা-যাওয়ার মধ্যে এখানে চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার সুযোগ পান। ঢাকায় নির্মিত চলচ্চিত্রে তাঁর গাওয়া মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম ছবি, এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ । ‘নতুন সুর’ মুক্তিপায় ১৯৬২ সালে।
১৯৬৪ সালে, স্বপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন বশির আহমেদ। ঢাকায় নির্মিত আরো যেসব চলচ্চিত্রে তিনি, কন্ঠশিল্পী ও সঙ্গীতপরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন তাঁরমধ্যে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রসমূহ- তালাশ, সাগর, সঙ্গম, বন্ধন, কারওয়াঁ, কাজল, সোয়ে নদীয়া জাগে পানি, ইন্ধন, মিলন, মালা, জাঁহা বাজে শেহনাই, কংগন, অন্তরঙ্গ, দরশন, আয়না ও অবশিষ্ট, শহীদ তিতুমীর, মনের মত বউ, অবাঞ্ছিত, ময়না মতি, জোয়ার ভাঁটা, মধুমিলন, আপন পর, মনের মানুষ, অশান্ত প্রেম, স্বামীর সোহাগ, বিজয়িনী সোনাভান, রাজকন্যা, বধূবরণ, ভাঙাগড়া, কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি, প্রভৃতি।

বশির আহমেদের গাওয়া ও সুর করা কিছু উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয় গান- যব তোম একেলে হোগে হাম ইয়াদ আয়েঙ্গে…, কুছ আপনি কাহিয়ে, কুছ মেরি সুনিয়ে…,
কথা বলো না বলো ওগো বন্ধু/ছায়া হয়ে তবু পাশে রইব…, মানুষের গান আমি শুনিয়ে যাবো…,
ওগো প্রিয়তমা ওরা জানতে চেয়েছে…, পাহাড়-নদী ঝরনা ধারা…, আমি রিক্সাওয়ালা মাতওয়ালা…, তুমহারে লিয়ে ইস দিলমে যিতনি মোহাব্বত হ্যায়…,
আমাকে পোড়াতে যদি এতো লাগে ভালো…, আমার খাতার প্রতি পাতায়…, যারে যাবি যদি যা…, অনেক সাধের ময়না আমার বাঁধন ছিঁড়ে যায়…, ডেকোনা আমারে তুমি কাছে ডেকো না…, বন্ধু সেই দেখা কেন শেষ দেখা হলো…, সেই যে কবে ঘর ছেড়েছি/আর তো ঘরে ফেরা হলো না…, সুখপাখিটা সুখের কথা কয় না…, ফুল ভালোবাসি/পাখি ভালোবাসি…, সজনী গো ভালবেসে এত জ্বালা কেন বলো না…, তোমার কাজল বেশ ছড়াল বলে/এই রাত এমন মধুর…, পারি না সহিতে পারি না কহিতে/কী জানি কী হয়ে গেলো আঁখিতে আঁখিতে…, খুঁজে খুঁজে জনম গেল…, অথৈ জলে ডুবে যদি মানিক পাওয়া যায়…, কাঁকন কার বাজে রুমঝুম…, আমার এ মন আমি যারে দিতে চাই…, সুরের বাঁধনে তুমি যতই কন্ঠ সাধো…, এই বৈশাখে লেখা প্রেমের চিঠি…, ইত্যাদি।

বশির আহমেদ বেতার ও টেলিভিশনেও প্রচুর গান গেয়েছেন এবং সুর করেছেন।

‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ ছবিতে ‘এই বৈশাখে লেখা প্রেমের চিঠি’ গানের জন্য তিনি ২০০৩ সালে, শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি টেলিভিশন দর্শক অ্যাওয়ার্ড’সহ পেয়েছেন বিভিন্ন পদক ও সম্মাননা।

ব্যক্তিজীবনে বশির আহমেদ ১৯৬৮ সালে, মিনা বশিরের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মিনা বশিরও একজন কণ্ঠশিল্পী। তাঁদের এক মেয়ে এক ছেলে- হোমায়রা বশির ও রাজা বশির। তাঁরাও গানের সাথে জড়িত।

বশির আহমেদের পরিবার তাঁর নামে প্রবর্তন করেছেন ‘বশির আহমেদ সম্মাননা পদক’। সংগীতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য দেশের গুণী ব্যক্তিত্বদের এই সম্মানে ভূষিত করা হয়।

বশির আহমেদ গান গেয়েছেন, সুর করেছেন, গান লিখেছেন ও গানের শিক্ষকতা করেছেন। একজন পরিপূর্ণ সংগীতব্যক্তিত্ব বলতে যা বোঝায়, তিনি ছিলেন তাই। বাংলাদেশের সংগীত আকাশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন তিনি। এই নন্দিত শিল্পী ষাট দশক থেকে আশির দশক পর্যন্ত দাপটের সাথে গান করে গেছেন। জনপ্রিয়তাও পেয়েছেন আকাশছোঁয়া। তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল সুরমাধূর্যে ভরা।
খ্যাতিমান এই গুণী সংগীত ব্যক্তিত্ব আজীবন সমৃদ্ধ করে গেছেন আমাদের গানের ভুবনকে। বাংলাদেশের সংগীতজগতে অমলিন বশির আহমেদ, অমলিন তাঁর গান।

 

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন