English

28 C
Dhaka
শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪
- Advertisement -

স্মরণে-শ্রদ্ধায় সুঅভিনেত্রী রোজী

- Advertisements -

মিষ্টি হাসির দৃষ্টিকাড়া সুন্দরী অভিনেত্রী ও চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিচালক রোজী’র ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০০৭ সালের ৯ মার্চ, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। প্রয়াত এই গুণি অভিনেত্রীর প্রতি বিন্ম্র শ্রদ্ধা জানাই । তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

জনপ্রিয় অভিনেত্রী রোজী (শামীমা আখতার রোজী, রোজী সামাদ নামেও অধিক পরিচিত ছিলেন) ১৯৪৫ সালের ২৩ এপ্রিল, লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ (সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং চলচ্চিত্র সংগঠক) এবং মাতার নাম আখতারী বেগম (চল্লিশ দশকের জনপ্রিয় নাট্য অভিনেত্রী)। দুই ভাই এবং চার বোন-এর মধ্যে, রোজী ছিলেন সবার বড়। তাঁর লেখাপড়া শুরু হয় ‘উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে’ । জুনিয়র ক্যামব্রিজ করেছিলেন ঢাকার ‘ভিকারুননিসা নুন স্কুল’ থেকে।

১৯৬২ সালে মুক্তি প্রাপ্ত, আব্দুল জব্বার খান পরিচালিত ‘জোয়ার এলো’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন রোজী।
১৯৬৩ সালে তিনি প্রথম নায়িকা হিসেবে অভিনয় করার সুযোগ পান ‘এইতো জীবন’ চলচ্চিত্রে। জিল্লুর রহিম পরিচালিত ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৬৪ সালে। এই ছবিতে রোজী’র বিপরিতে নায়ক ছিলেন শওকত আকবর।

তিনি প্রায় বিশ-এর অধিক ছবিতে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন এবং জনপ্রিয়তাও পেয়েছেন । পরবর্তিতে চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবে (মা-বাভী-বড় বোন) ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন এবং দর্শক নন্দিত হন। একের পর এক মুক্তি পেতে থাকে তাঁর, জনপ্রিয় ও সুপারহিট সব চলচ্চিত্র। রোজী অভিনীত অসংখ্য ছবি’র মধ্যে- সংগম, পুনম কি রাত, একালের রূপকথা , ভাইয়া, উলঝন, সোয়ে নদীয়া জাগে পানি, বন্ধন, এতটুকু আশা, চোরাবালি, বেদের মেয়ে, আলোর পিপাসা, ইস ধরতি পর, জোয়ার ভাটা, নীল আকাশের নীচে, প্রতিকার, জীবন থেকে নেয়া, কাচঁ কাটা হীরে, তিতাস একটি নদীর নাম, আলোর মিছিল, সূর্যগ্রহন, লাঠিয়াল, ফকীর মজনু শাহ, গোলাপী এখন ট্রেনে, অশিক্ষিত, সাধারণ মেয়ে, বড় বৌ, স্মৃতিটুকু থাক, সুখ-দুঃখ, সমাধান, মানুষের মন, বন্ধু, বাহরাম বাদশা, জীবন সঙ্গীত, স্বীকৃতি, রংবাজ, পরিচয়, প্রতিনিধি, দি রেইন, দাবী, বেলা শেষের গান, সূর্যসংগ্রাম, স্বামী, মিন্টু আমার নাম, শ্রীমতী ৪২০, ঘরজামাই, ছোট মা, নাগ নাগিনী, ইশারা, নাগরদোলা, মোকাবোলা, হুর এ আরব, কলমীলতা, সুখের সংসার, সওদাগর, ওমর শরীফ, আনারকলি, সেলিম জাভেদ, টক্কর, মেঘ বিজলী বাদল, সাত রাজার ধন, ইজ্জত, প্রতিহিংসা, চেনামুখ, চ্যালেঞ্জ, নাজমা, গাদ্দার, পদ্মাবতী, জোশ, মহেশখালীর বাঁকে, নরম গরম, সালতানাত, রাজদন্ড, ঘরে বাইরে, গীত, মায়ের দাবী, গোলমাল, শিরি ফরহাদ, আশা নিরাশা, দ্বীন দুনিয়া, শশীপুন্নু, ঝড় তুফান, জুলি, ক্ষতিপূরণ, ক্ষমা, রাস্তার রাজা, এই ঘর এই সংসার, হীরা চুন্নি পান্না, পরম প্রিয়, উউল্লেখযোগ্য ।

রোজী বেতার এবং টেলিভিশন নাটকেও অভিনয় করেছেন এবং জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। স্বাধীনতার আগে জনপ্রিয় টিভি ধারাবাহিক নাটক ‘সংশপ্তক’-এ ‘হুরমতী’র ভুমিকায় অসাধরণ অভিনয় করে চিরস্বরণীয় হয়ে আছেন।

অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছেন। তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল ‘রোজী ফিল্মস’। তিনি ‘আশা নিরাশা’ নামে একটি চলচ্চিত্রও পরিচালনা করেছেন।

প্রতিভাবান এই গুণি অভিনয়শিল্পী, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের প্রথম (ছবি-লাঠিয়াল- ১৯৭৫) আসরেই শ্রেষ্ঠ পার্শ্বঅভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন।
এছাড়া পাকিস্তানের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘নিগার অ্যাওয়ার্ড’সহ দেশি-বিদেশি বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। এরমধ্যে আছে- ৭২, ৭৩, ৭৪, ৭৫ সালের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জিয়া স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি পুরস্কার, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি পুরস্কার, বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার, পূর্বাণী চলচ্চিত্র পুরস্কার, এফডিসির রজত জয়ন্তী পুরস্কার, কালচারাল রিপোর্টাস অ্যাওয়ার্ড, স্বদেশ সাংস্কৃতিক স্বর্নপদক, অনির্বাণ সংসদ স্বাধীনতা পদক, মহিলা চিত্রপরিচালক হিসেবে সিডাব পুরস্কার, প্রভৃতি।

ব্যক্তিজীবনে তিনি দুইবার বিবাহ করেন। প্রথমে বিবাহ হয় খ্যাতিমান চলচ্চিত্রগ্রাহক ও পরিচালক আবদুস সামাদের সাথে । এ সংসারে তাঁর একটি কন্যাসন্তান আছে, নাম কবিতা সামাদ। পরবর্তীতে পরিচালক মালেক আফসারীকে বিয়ে করেন তিনি। এ ঘরে রয়েছে ছেলে, রবি আফসারী।

মিষ্টি হাসির দৃষ্টি কাড়া সুন্দরী অভিনেত্রী রোজী। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সোনালী সময়ের, সীমাহীন জনপ্রিয় ও দর্শক নন্দিত অভিনেত্রী রোজী। রোমান্টিক নায়িকা থেকে চরিত্রাভিনেত্রী- চরিত্রের প্রয়োজনে, অভিনয় প্রতিভার সীমানা ছাড়িয়ে গেছেন- সবখানে। অসংখ্য ব্যবসাসফল, হিট-সুপারহিট, জনপ্রিয়-কালজয়ী চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন রোজী। একসময় পারিবারিক-সামাজিক ছবির প্রভাপশালী অভিনেত্রী ছিলেন তিনি। চরিত্রাভিনেত্রী হলেও তাঁর চাহিদা ছিল নায়িকদের চেয়েও বেশী। তখন তাঁর সাথে জুটি হিসেবে ছিলেন, আরেক প্রখ্যাত অভিনেতা আনোয়ার হোসেন। তাঁরা দুজন ছবিতে থাকা মানে, সেই ছবি দর্শক চাহিদায় এক নাম্বারে, ছবি হিট-সুপারহিট হওয়ার সমূহ-সম্ভাবনা।

অভিনেত্রী রোজী যখন যে চরিত্রই করেছেন, মনে হয়েছে এটাই তাঁর জন্য আদর্শ চরিত্র। অভিনয় দক্ষতার এতটা দাপট দেখিয়েছেন যে, নিজেকে নিয়ে গেছেন জনপ্রিয়তার অনন্য উচ্চতায়। কিংবদন্তীতুল্য এই অভিনেত্রী, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অভিনয় ইতিহাসে, চির-অমলিন।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন