কিংবদন্তি হেভি মেটাল শিল্পী ও ব্ল্যাক সাবাথ ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ওজি অসবোর্ন মারা গেছেন। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) রাতে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে তার মৃত্যু হয়। ‘প্রিন্স অব ডার্কনেস’ নামে পরিচিত ওসবার্নের মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতির বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমাদের প্রিয় ওজি অসবোর্ন আজ সকালে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তিনি তার পরিবারের সান্নিধ্যে এবং ভালোবাসায় বেষ্টিত ছিলেন।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এই কঠিন সময়ে আমরা সবার কাছে আমাদের পারিবারিক গোপনীয়তা রক্ষার অনুরোধ জানাচ্ছি।’ এদিকে ওজির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে পরিবার বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
অসবোর্ন সাবাথের প্রধান কণ্ঠশিল্পী হিসেবে জন্ম দেন হেভি মেটাল ঘরানার ‘আয়রন ম্যান’ ও ‘প্যারানয়েড’-এর মতো গান। মাত্র তিন সপ্তাহ আগেই নিজের শহর বার্মিংহামে জীবনের শেষ কনসার্টে গান করেন। মঞ্চে ছিলেন তার অনুপ্রেরণায় গড়ে ওঠা মেটালিকা, গানস এন’রোজেসসহ আরও অনেকে রক ব্যান্ডের কিংবদন্তি শিল্পীরা।
২০২০ সালে ওজি অসবোর্ন জানান, তিনি পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত। এটি একটি স্নায়ুতন্ত্রের নড়াচড়া জনিত রোগ যা সময়ের সাথে সাথে খারাপ হতে থাকে। এর এক বছর আগে, ২০১৯ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে নিজ বাড়িতে পড়ে গিয়ে তিনি আহত হন। যা ২০০৩ সালের একটি অল-টেরেইন ভেহিকেল দুর্ঘটনায় পাওয়া আঘাতকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
ওজির আসল নাম জন মাইকেল অসবোর্ন। ১৫ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে নানা অস্থায়ী কাজ করেছেন তিনি। এমনকি চুরি করে কিছুদিন জেলেও ছিলেন। এরপর তিনি ঝুঁকে পড়েন সংগীতের দিকে। ১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে গিটারিস্ট টনি ইয়োমি, বেসিস্ট গিজার বাটলার ও ড্রামার বিল ওয়ার্ডের সঙ্গে অসবোর্ন গড়ে তোলেন ব্যান্ড ব্ল্যাক সাবাথ। ব্লুজঘেঁষা অথচ ভারী, ধীর ও গা ছমছমে সংগীতে উঠে আসে অতিপ্রাকৃত ইঙ্গিত, শুরু হয় হেভি মেটালের পথচলা। ১৯৭০ সালে মুক্তি পায় ব্যান্ডটির ব্ল্যাক সাবাথ। এরপর একে একে আসে ‘প্যারানয়েড’, ‘মাস্টার অব রিয়েলিটি’র মতো বহু প্ল্যাটিনাম হিট।
১৯৭৮ সালে ব্যান্ড থেকে ছাঁটাই হলে অসবোর্ন শুরু করেন একক ক্যারিয়ার। ১৯৮০ সালে মুক্তি পায় ‘ব্লিজার্ড অব অজ’ নামের অ্যালবাম। এই অ্যালবামে ছিল বিখ্যাত গান ‘ক্রেজি ট্রেইন’। পরের বছর আসে ‘ডায়েরি অব আ ম্যাডম্যান’। বিক্রি হয় ৫০ লাখ কপির বেশি।
মঞ্চে অসবোর্নের আচরণ ছিল পাগলামি দিয়ে ভরা। একটি কনসার্টে তিনি ভুল করে একটি জীবন্ত বাদুড়ের মাথা কামড়ে দেন, ঘটনাটি কিংবদন্তি হয়ে ওঠে। মাদকসেবন ও মদ্যপানের আসক্তির কারণে নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন ওসবার্ন। এই আসক্তির অন্ধকার দিকও ছিল।
১৯৮৯ সালে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী শ্যারনকে খুনের চেষ্টা করায় গ্রেপ্তার হন অসবোর্ন। আদালতের নির্দেশে ছয় মাস পুনর্বাসনে কাটাতে হয় তাকে। শ্যারন পরে মামলা না করায় দাম্পত্য জীবন টিকে যায়। ২০০০-এর দশকে এমটিভির রিয়েলিটি শো ‘দ্য অসবোর্ননাস’ অসবোর্নকে এক ভিন্ন রূপে হাজির করে। ওসবার্ন বলেছিলেন, ‘মঞ্চে আমি যা করি, সেটা শুধু একটা অভিনয়। আমি আসলে একান্তেই পারিবারিক মানুষ।’
২০২২ সালে কমনওয়েলথ গেমসের সমাপনী অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার পর বেশির ভাগ সময়ই মঞ্চ থেকে দূরে ছিলেন অসবোর্ন। ২০২০ সালে জানান, তিনি পারকিনসনে আক্রান্ত। তবু অসবোর্ন বিদায়ী কনসার্ট করতে চেয়েছিলেন। ৫ জুলাই বার্মিংহামের অ্যাস্টনের বাড়ির কাছের ভিলা পার্ক স্টেডিয়ামে বসে শেষবারের মতো তিনি গাইলেন প্রিয় সব গান। কালো সিংহাসনে বসে, হাত নেড়ে, চোখ বড় করে- এক অনবদ্য বিদায় নেন তিনি।
অসবোর্নের মৃত্যুর খবরে শোক প্রকাশ করেছেন অনেক তারকা- রোনি উড (রোলিং স্টোনস), মেটালিকা, স্যামি হ্যাগার (ভ্যান হ্যালেন), ব্রায়ান মে (কুইন), এলটন জন, বিলি জো (গ্রিন ডে)।
এলটন জন বলেছেন, ‘ওজি ছিলেন আমার প্রিয় বন্ধু এবং রক সংগীতের পথিকৃৎ। তিনি থাকবেন গানের দেবতাদের অমর তালিকায়।’
অসবোর্ন রেখে গেছেন স্ত্রী শ্যারন, তাদের সন্তান অ্যাইমি, কেলি ও জ্যাক এবং নাতি-নাতনিদের। অসবোর্নের আগের সংসারের সন্তান জেসিকা, লুইস ও এলিয়টও আছেন।