English

19 C
Dhaka
মঙ্গলবার, নভেম্বর ১৮, ২০২৫
- Advertisement -

প্রতিভাবান অভিনেতা রাতিন-এর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ

- Advertisements -

এ কে আজাদ: রাতিন। অভিনেতা। একাধারে মঞ্চ-বেতার-টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অভিনেতা। পাশাপাশি তিনি ডাবিং শিল্পীও। অনেক বিখ্যাত ছবির খ্যাতিমান অভিনেতাদের কন্ঠ দিয়েছেন । অভিনেতা রাতিন সহকারী পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন। সৈয়দ হাসান ইমামের সাথে- লাল সবুজের পালা, অবিচার’সহ যাত্রিক প্রযোজনা সংস্থার সব ছবিতে ।

খ্যাতিমান চিত্রপরিচালক মহিউদ্দিন স্যারের ‘বড় ভালো লোক ছিল’ ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি সহকারী পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। প্রতিভাবান অভিনেতা রাতিন-এর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৭ সালের ১৯ জুলাই, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। প্রয়াত এই অভিনেতার স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

অভিনেতা রাতিন (আবদুর রাতিন) ১৯৫২ সালের ১৩ জুলাই, পুরান ঢাকার নারিন্দায়, জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের সূচনালগ্নের খ্যাতিমান অভিনেতা আবদুল মতিন। মা আয়শা খাতুন গৃহিণী । ১৫ জন ভাই-বোনের মধ্যে রাতিন তৃতীয়। তাঁর ছোট ভাই অনজন রহমান একজন সংস্কৃতিকর্মী ও সাংবাদিক ।

রাতিন ছেলেবেলায় ভীষণ ডানপিটে ছিলেন। বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে, দৌড়ে গিয়ে উঠে পরতেন চলন্ত ট্রেনে। বাড়ির কাছেই গেন্ডারিয়া রেল স্টেশন। টিকেট না কেটে, টিটিকে ফাঁকি দিয়ে ট্রেন ভ্রমণ ছিল (গেন্ডারিয়া-তেজগাঁও- এয়ারপোর্ট-নারায়ণগঞ্জ-গেন্ডারিয়া পর্যন্ত) নিত্য-নৈমিত্তিক বেপার । স্কুল ফাঁকি দেয়া ছিল তাঁর একটি মজার বিষয়।

নারিন্দা গভর্ণমেন্ট হাই স্কুলে পড়া-লেখা শুরু করলেও রাতিন, এসএসসি পাস করেন গ্রাজুয়েট হাই স্কুলে থেকে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে এইচএসসি ও জগন্নাথ কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেন ।

ছোটবেলা থেকেই নাটক ও অভিনয়ের প্রতি তাঁর প্রচন্ড ঝোঁক ছিল। পাড়া-মহল্লায় যেসব নাটক হত, তা দেখে দেখে নিজেই এক সময় নাটক লিখা শুরু করেন। নিজের নির্দেশনায় বন্ধুদের নিয়ে সেসব নাটকে অভিনয় করতেন।

সেই সময়ে একবার নারায়ণগঞ্জে অভিনয় প্রতিযোগিতা হয়েছিল। সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে রাতিন হয়েছিলেন, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা। এভাবেই রাতিন-এর অভিনেতা হয়ে ওঠা।

কলেজে পড়াকালীন সময়ে রাতিন গড়ে তোলেন নিজের নাটকের দল। বিখ্যাত সব লেখকদের গল্পকে নিজের নাট্যরুপ ও নির্দেশনায় মঞ্চস্থ করতে থাকেন। একসময় নাট্যনির্দেশক পরেশ আচার্যী, রাতিন-এর এসব প্রতিভা দেখে তাঁকে নিয়ে আসেন তাঁর নাট্যদল ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’তে। এখানে এসে রাতিন অভিনয় করেন, গরুর গাড়ির হেডলাইট ও ফাঁস’সহ বেশ কয়েকটি নাটকে। মহিলা সমিতি, মাহবুব আলী মিলনায়তন, লালকুঠি’সহ বিভিন্ন জায়গায় মঞ্চস্থ হয় এসব নাটক। রাতিন তখন মঞ্চের সুপরিচিত অভিনেতা।

অভিনেতা রাতিন ১৯৭০ সালে মুক্তি পাওয়া, মুস্তাফা মেহমুদ পরিচালিত ‘নতুন প্রভাত’ ছবিতে প্রথম অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পদার্পণ করেন।

রাতিন অভিনীত অন্যান্য ছবি সমূহ’র মধ্যে- প্রতিজ্ঞা, বড় ভালো লোক ছিল, দেবদাস, জিদ্দি, হারানো সুর, শুকতারা, বিবাদ, আমার সংসার, আলাল দুলাল, অবুঝ হৃদয়, জবাব চাই, কৈফিয়ত, সতী নারীর পতি, দোষী, সমস্যা, আশির্বাদ, ঘর ভাঙ্গা ঘর, চোরের বউ, রক্তের বদলা, মহা-গ্যাঞ্জাম, কেয়ামত থেকে কেয়ামত, প্রেমের দাবী, গহর বাদশা বানেছা পরি, নয়া লায়লা নয়া মজনু, চাঁদনী রাতে, মহান বন্ধু, স্বার্থপর, জনমদুখি, আজকের শয়তান, আসামী বধূ, প্রিয়শত্রু, লালু সর্দার, মহা-ভূমিকম্প, মৌমাছি, স্নেহের প্রতিদান, হৃদয়ের আয়না, এখনো অনেক রাত, আমাদের সন্তান, মোঘল এ আযম, অন্যতম।

টিভি প্রযোজক আবু জাফর সিদ্দিকী রাতিনকে সুযোগ করে দেন টেলিভিশনের নাটকে অভিনয় করার। ‘রত্নদ্বীপ’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে বিটিভিতে অভিষেক হয় তাঁর। সুজন বাদিয়ার ঘাট, প্রজাপতি, অস্থির পাখিরা, ধূপছায়া, মহুয়ার মন, গৃহবাসী, স্বপ্ন বিলাস, অভিনেতা, বোবাকাহিনী, সকাল সন্ধ্যা, রুপালী প্রান্তর, ধারাবাহিক হিরামনের অনেকগুলো পর্ব’সহ বিভিন্ন চ্যানেলে অসংখ্য টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন রাতিন।

এক বিখ্যাত অভিনেতার সন্তান রাতিন। একশিল্পী পরিবারের সন্তান রাতিন। রক্তে তাঁর অভিনয়ের বীজ। অভিনয় পাগল রাতিন, যখন যে চরিত্র পেয়েছেন অভিনয় করে গেছেন, কখনো ছোট-বড় চরিত্র বিবেচনায় আনেননি। যখন যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন, ফুটিয়ে তুলেছেন নিজের অভিনয় সত্বাকে। দর্শক জনপ্রিয়তাও পেয়েছেন, পেয়েছেন নির্মাতাদের ভালোবাসা-আশির্বাদ। রাতিন-এর দীর্ঘ ৪৭ বছরের অভিনয় জীবনে, আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি চর্চা ও উন্নয়নে তাঁর ভূমিকা অনিস্বীকার্য।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/qs6m
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন