English

30 C
Dhaka
সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
- Advertisement -

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ‘ফাস্টলেডি’ খ্যাত অভিনেত্রী: সুমিতা দেবী

- Advertisements -

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ‘ফাস্টলেডি’ খ্যাত অভিনেত্রী ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম শব্দসৈনিক সুমিতা দেবী। আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী। ৬ জানুয়ারি ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে, মৃত্যুবরণ করেন এই প্রথিতযশা অভিনয়শিল্পী। মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে, এই গুণী দেশবরেণ্য অভিনয়শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং তাঁর বিদেহী আত্মার চির শান্তি কামনা করি।

সুমিতা দেবী ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারি, মানিকগঞ্জের দক্ষিণখল্লি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। পারিবারিক নাম হেনা ভট্টাচার্য। পঞ্চাশের দশকের শেষভাগে চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব ফতেহ লোহানীর ‘আসিয়া’ ও ‘আকাশ আর মাটি’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রের পর্দায় অভিষেক ঘটে তাঁর। ফতেহ লোহানীই তাকে ‘সুমিতা দেবী’ নামটি দেন।
‘আসিয়া’ চলচ্চিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করে রাতারাতি খ্যাতির উচ্চশিখড়ে পৌছে যান এবং ছবির নাম ভূমিকায় অসামান্য অভিনয় করে চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন তিনি।
‘আসিয়া’ ছবিটি ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের শ্রেষ্ঠ বাংলা চলচ্চিত্র হিসাবে প্রেসিডেন্ট পদক লাভ করেছিল। নায়িকা হিসেবে প্রধান চরিত্রে অভিনীত তাঁর চলচ্চিত্রের সংখ্যা প্রায় পঁচিশটি। পরে তিনি বিভিন্ন ছবিতে সহ-নায়িকা কিংবা পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন। সুমিতা দেবী অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে- এ দেশ তোমার আমার, মাটির পাহাড়, কখনো আসেনি, সোনার কাজল, সঙ্গম (উর্দু), যে নদী মরুপথে, নবারুণ (প্রামাণ্যচিত্র), ১৩ নং ফেকু ওস্তাগার লেন, তানহা, কাঁচের দেয়াল, দুই দিগন্ত, ধূপছাঁও (উর্দু), এইতো জীবন, বেহুলা, অভিশাপ, আগুন নিয়ে খেলা, আপন দুলাল, মানুষ-অমানুষ, আলী বাবা, অশান্ত প্রেম, জনম জনম কি পিয়াসি (উর্দু), আমার জন্মভূমি, ওরা ১১ জন, সুজন সখী, জন্ম থেকে জ্বলছি, অপরাজেয়, সুর্য উঠার আগে, স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা, সুর্যকন্যা, দাবী, অলংকার, ডুমুরের ফুল, মেহেরবানু, নদের চাঁদ, ঘর সংসার, ছোট মা, ইশারা, নাগরদোলা, এতিম, স্মৃতি তুমি বেদনা, মাসুম, দেনা-পাওনা, লাল সবুজের পালা, সোনার হরিণ, ভাই ভাই, গাংচিল, আল্লাহ মেহেরবান, অংশিদার, রেশমী চুড়ি, লাল কাজল, নাতবৌ, দেবদাস, দুই পয়সার আলতা, মোহনা, আরশীনগর, দরদীশত্রু, দুই নয়ন, মিস্ লোলিতা, সাধনা, হাসি, অন্যতম।

Advertisements

অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেছেন। তাঁর প্রযোজিত ছবিগুলো হলো – আগুন নিয়ে খেলা, মোমের আলো, মায়ার সংসার, আদর্শ ছাপাখানা এবং নতুন প্রভাত।

দীর্ঘ অভিনয় জীবনে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং মঞ্চ নাটকেও সমান তালে অভিনয় করে গেছেন সুমিতা দেবী।

বীরমুক্তিযোদ্ধা, কিংবদন্তী চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব সুমিতা দেবী যেসব সম্মাননা ও পুরস্কার পেয়েছেন- পাকিস্তানের সমালোচক পুরস্কার ১৯৬২, নিগার পুরস্কার (কাঁচের দেয়াল)১৯৬৩, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার, বাংলাদেশ টেলিভিশন রিপোর্টার সমিতি পুরস্কার, আগরতলা মুক্তিযোদ্ধা পুরস্কার ২০০২, জনকণ্ঠ গুণীজন এবং প্রতিভা সম্মাননা ২০০২, চলচ্চিত্রম ফিল্ম সোসাইটি পুরস্কার ২০০২।

ব্যক্তিজীবনে সুমিতা দেবী’র প্রথম বিয়ে হয় অমূল্য লাহিড়ী নামের এক ব্যক্তির সাথে, কিছুদিনের মধ্যেই তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। পরবর্তীতে চলচ্চিত্র জগতে আসার পর, প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের সাথে পরিচয় হয়, অতঃপর তিনি জহির রায়হানের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ধর্মান্তরিত হয়ে তাঁর নতুন নামকরণ হয় নিলুফার বেগম। তাদের সংসারে দু’টো পুত্র সন্তান রয়েছে। বিপুল রায়হান ও অনল রায়হান ।

Advertisements

এফডিসি প্রতিষ্ঠিত হবার পর সেখানে নির্মিত প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আসিয়া’ এবং ‘আকাশ আর মাটি’ দুটো ছবিরই নায়িকা হিসেবে সুমিতা দেবীকে এ দেশের চলচ্চিত্রশিল্পের ‘ফাস্টলেডি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সুমিতা দেবী তখনকার সময়ে ঢাকার চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় নায়িকা ছিলেন।

সুমিতা দেবী ১৯৭১-এ সোচ্চার হয়েছিলেন পাকিস্তানী হানাদারের বিরুদ্ধে। কোলকাতার রাজপথে, সেখানকার বিভিন্ন দেশের হাই কমিশনের সামনে মিছিল করেছেন, অবস্থান ধর্মঘট কেরেছেন, বিশ্ববাসীর দৃস্টি আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে আনার লক্ষ্যে কাজ কেরেছেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নিয়েছেন তিনি।

সুমিতা দেবী শারীরিকভাবে চলে গেছেন, কিন্তু রেখে গেছেন তাঁর সৃষ্টিশীল কর্ম। রেখে গেছেন শিল্প-সংস্কৃতির জগতে তাঁর বলিষ্ঠ উজ্জ্বল ভূমিকা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পে তাঁর অবদান, অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আল কোরআন ও আল হাদিস

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন