নাসিম রুমি: ঢাকাই সিনেমার সোনালী দিনের নায়ক জসীম। খল অভিনেতা হিসেবে সিনেমায় নাম লিখিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক নম্বর অ্যাকশন হিরো। তাকে নায়ক হিসেবে সিনেমা আনেন খ্যাতিমান নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু।
তিনি বলেন, ‘সিনেমায় জসীম প্রথম এসেছিল নায়ক রাজ্জাক ভাইয়ের হাত ধরে ‘রংবাজ’ সিনেমায়। তাকে ভিলেন হিসেবে প্রথম আমরা সিনেমায় দেখলাম। তারপরে ‘রাজ দুলারী’ সিনেমায় তাকে ভিলেন হিসেবে দেখা গেল। এই সিনেমায় নায়ক-নায়িকা ছিলেন ওয়াসিম ও শাবানা।’
খল-অভিনেতার চরিত্রে জসীম ছিলেন দুর্দান্ত। তবে নায়ক হওয়ার ইচ্ছা ছিল প্রবল তার। সেটা কয়েকজন নির্মাতা জানতেন। তার মধ্যে একজন দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। তিনি জসীমকে আশ্বস্ত করেছিলেন তাকে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করাবেন।
নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু বলেন, ‘জসীমকে বলেছিলাম, কোনোদিন সিনেমা বানালে তাকে নায়ক করে অবশ্যই সিনেমা বানাবো। একটা সময় সেই সুযোগ এলো। গল্প লেখার পাশাপাশি ‘ওমর শরীফ’ পরিচালনা করার সুযোগ পেলাম। নায়ক ওয়াসিমের পাশাপাশি জসিমকে নায়ক নিয়ে সিনেমাটা বানালাম।’
এই নির্মাতার কথায়, ‘এই সিনেমায় জসিমের একটা গান ছিল। সেটা নিয়ে ভয়েও ছিলাম যে মানুষ নায়ক হিসেবে তাকে গ্রহণ করবে কি না। সিনেমা মুক্তির পর উল্টো ঘটনা ঘটলো। মানুষ খুব পছন্দ করল তার গানের দৃশ্য। তার সঙ্গে গুলিস্তানের একটি হলে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম। দর্শকদের উচ্ছ্বাস দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন জসিম।’
সেই সময় ‘ওমর শরীফ’ ভালো ব্যবসা করেছিল। তারপর নায়ক হিসেবে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেন ১২০টির বেশি ছবিতে। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘দেবর’, ‘রংবাজ’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘কাজের বেটি রহিমা’, ‘মহেশখালির বাঁকে’, ‘বারুদ’, ‘বদলা’, ‘কসাই’, ‘বাহাদুর’, ‘এক মুঠো ভাত’, ‘দি রেইন’, ‘কুয়াশা’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘ভাই আমার ভাই’, ‘মাস্তান রাজা’, ‘স্বামী কেন আসামি’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
১৯৯৮ সালের ৮ অক্টোবর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যান তিনি।
১৯৫০ সালের ১৪ আগস্ট ঢাকার নবাবগঞ্জের বক্সনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার আসল নাম আব্দুল খায়ের জসীম উদ্দিন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দুই নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন জসীম।