একসময় বিলবোর্ড হট ১০০ চার্টে প্রথম নারী শিল্পী হিসেবে শীর্ষে ওঠা কনি ফ্রান্সিস এখন টিকটকের নতুন তারকা। তার ১৯৬২ সালের গান ‘প্রিটি লিটল বেবি’ হঠাৎ করেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটকে ভাইরাল হয়ে গেছে।
গানটি এখন পর্যন্ত ১০ বিলিয়নের বেশি ভিউ পেয়েছে। ব্যবহারকারীরা এই গানটিতে ঠোঁট মিলিয়ে নিজেদের সন্তান, পোষা প্রাণী কিংবা ফ্যাশন স্টাইল শেয়ার করছেন। গানটি এখন টিকটকের ভাইরাল ৫০ ও টপ ৫০ তালিকার এক নম্বরে।
এটা কনি ফ্রান্সিসের ক্যারিয়ারের খুব পরিচিত গান না হলেও এমন সাফল্য সবাইকে চমকে দিয়েছে। তিনি নিজেও বিস্মিত। পিপল ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে আমি গানটার কথা মনেই করতে পারিনি। আমি নিজেই আবার শুনে চিনেছি। ভাবতেই পারিনি যে ৬৩ বছর আগে রেকর্ড করা একটা গান এত মানুষকে নাড়া দিতে পারে। এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য অনুভূতি।’
কাইলি জেনার, কিম কার্দাশিয়ান ও তার মেয়ে নর্থ ওয়েস্টের মতো তারকারাও গানটি ব্যবহার করেছেন। কনি বলেন, ‘এটা সম্মানের বিষয়। তারা আমাকে সম্মান জানাচ্ছে দেখে আমি মুগ্ধ।’
২০১৮ সালে সংগীতজগৎ থেকে অবসর নেওয়া কনি এখন ৮৭ বছর বয়সি। এই সাফল্যে তিনি যেমন অবাক, তেমনি তার ব্যাখ্যাও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় গানটা খুবই সরল আর নিষ্পাপ। এখনকার বিশৃঙ্খলার সময়ে এমন কিছু মানুষের মন ছুঁয়ে যায়।’
কনি ফ্রান্সিসের ক্যারিয়ার শুরু হয় অনেকটা হঠাৎ করেই। তার প্রথম ১০টি সিঙ্গেলই ছিল ব্যর্থ। তখন তিনি ভাবছিলেন মেডিকেলে পড়তে চলে যাবেন।
‘আমি নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পেয়েছিলাম। কিন্তু আমার বাবা চাইতেন আমি “হু’স সরি নাউ” গানটা করি।’ গানটা ১৯২৩ সালে লেখা, তখনকার রক অ্যান্ড রোল যুগে এই গানটা বেমানান লাগছিল তার।
কনি বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, এমন গান গেয়ে আমি আমেরিকান ব্যান্ডস্ট্যান্ড থেকে হাসির পাত্র হয়ে যাবো।’ তখন বাবা বলেছিলেন, ‘তোমাকে টিভির ওপরে বসিয়ে হলেও এই গানটা গাওয়াবো।’
রেকর্ডিংয়ের সময় শেষে ১৬ মিনিট বাকি ছিল। কনি তখন বলেন, ‘ব্যস, শেষ। সময় নেই “হু’স সরি নাউ” করার।’ কিন্তু বাবা জোরাজুরি করে বলেন, ‘তোমাকে মাইকে পেরেক দিয়ে আটকাতে হলেও আমি করাবো।’ এক টেকেই গানটা রেকর্ড করেন কনি।
কনি বলেন, ‘আমি ১৪ বছর বয়স থেকে ডেমো রেকর্ড করতাম। আমাকে বলা হতো প্যাটি পেইজ বা কেই স্টার বা জর্জিয়া গিবসের মতো গাইতে। কিন্তু আমার নিজস্ব কোনো স্টাইল ছিল না। “হু’স সরি নাউ” আমি নিজের মতো করে গেয়েছিলাম।’
গানটা এক টেকেই রেকর্ড হয়েছিল, কিন্তু লেবেল এমজিএম এটিকে বিশেষ কিছু মনে করল। তারা ১৯৫৭ সালের শেষ দিকে গানটি প্রকাশ করে। ডিক ক্লার্ক তার বিখ্যাত শোতে গানটা বাজান।
‘এটাই আমার জীবন বদলে দেয়’, কনি বলেন। ‘ডিক ক্লার্ক না থাকলে আমি কনি ফ্রান্সিস হতাম না। তিনি বলেছিলেন, “এই মেয়ে শিগগিরই এক নম্বরে যাবে।” তখনই বুঝেছিলাম, আমার জীবন আর আগের মতো থাকবে না।’
পরের পাঁচ বছরে তার ১৫টি গান শীর্ষ দশে আসে, তখন একমাত্র এলভিস প্রেসলিই তার আগে ছিলেন। কনি গান রেকর্ড করেন ১২টিরও বেশি ভাষায়, হয়ে ওঠেন প্রথম বিশ্বমানের শিল্পীদের একজন।
‘প্রিটি লিটল বেবি’ গানটিও আছে ফরাসি, জার্মান, ইতালিয়ান, জাপানিজ, স্প্যানিশ ও সুইডিশ ভাষায়। তবে সব ভাষায় দক্ষ হলেও ফরাসি ভাষা তার জন্য কঠিন ছিল। হেসে বলেন, ‘ফ্রেঞ্চ ছিল আমার ওয়াটারলু।’
বর্তমানে কনি ফ্লোরিডায় থাকেন। সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান, স্ক্র্যাবল খেলেন। এখন একটি হিপ ইনজুরির কারণে হুইলচেয়ারে থাকলেও তিনি শিগগিরই সুস্থ হয়ে নিউইয়র্ক যেতে চান।
তিনি বলেন, ‘থেরাপি শেষে যখন হাঁটতে পারবো, তখন নিউইয়র্কে যাবো। সেখানে “জাস্ট ইন টাইম” মিউজিক্যালে গ্রেসি লরেন্স আমাকে চরিত্রে অভিনয় করছেন। সেটা দেখার অপেক্ষায় আছি।’
শেষ বয়সে টিকটকের সাফল্যকে কনি বলছেন ‘একটা স্বপ্ন পূরণ’। তার কথায়, ‘অসাধারণ লাগছে। ভাবতেই পারিনি এটা সম্ভব। এটা একটা স্বপ্ন। এখন কিন্ডারগার্টেনের বাচ্চারাও আমার নাম জানে, আমার গান চেনে — এটা ভাবতেই ভালো লাগছে!’