ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের কারাগার থেকে প্রায় পাঁচ বছর পর মুক্তি পেয়েছেন অভিনেত্রী ও মডেল ইনতিসার আল হাম্মাদি। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন তার আইনজীবী খালিদ আল কামাল। এদিকে, ইনতিসারের মামলাকে অন্যায্য ও নির্যাতনে পরিপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইয়েমেনের হুতি-নিয়ন্ত্রিত রাজধানী সানায় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইনতিসারকে আটক করে বিদ্রোহীরা। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২০ বছর। পরে এক হুতি আদালতে তথাকথিত ‘অশোভন আচরণ’ ও ‘মাদকদ্রব্য রাখার’ অভিযোগে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে।
ইনতিসারের সঙ্গে সে সময় গ্রেফতার করা হয়েছিল আরও তিন নারীকে। তাদের মধ্যে ইনতিসার ও ইউসরা আল নাশরি একই মেয়াদের সাজা পান, অন্য দুই নারীকে যথাক্রমে এক ও তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো সমালোচনায় মুখর ছিল ইনতিসারের গ্রেফতার ও বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, চোখ বেঁধে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে, শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়। এমনকি বর্ণবিদ্বেষমূলক গালাগালও দেওয়া হয়। জোর করে কয়েকটি অপরাধের স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছিল বলেও জানা গেছে। ২০২১ সালে মানবাধিকারকর্মীরা জানিয়েছিলেন, হতাশায় আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন ইনতিসার। ইয়েমেনের বহু বিশিষ্ট নাগরিক তার মুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছেন—ইনতিসারের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া জরুরি। তাদের মতে, হুতি-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে নারীদের ওপর নিপীড়ন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দমননীতির প্রতীক এই মামলা।
গ্রেফতারের আগে টানা চার বছর তিনি মডেল হিসেবে কাজ করেছেন এবং দুটি ইয়েমেনি টেলিভিশন সিরিজে অভিনয় করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে তিনি ঐতিহ্যবাহী পোশাক, জিন্স কিংবা লেদার জ্যাকেট পরা নানা ছবিতে হাজির হতেন। কখনো তিনি মাথায় ওড়না দিতেন, আবার কখনো উন্মুক্ত চুলে। ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে তার হাজারো অনুসারী রয়েছে। ইথিওপীয় মা ও ইয়েমেনি বাবার সন্তান ইনতিসার আল হাম্মাদি।
ইয়েমেনে ২০১৪ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে হুতি-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে নারীদের ওপর সহিংসতা বেড়েছে ব্যাপকভাবে। এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটগুলোর একটি হিসেবে আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ।
