নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, কোবরা ও কালো ক্রাইটসহ (এক ধরনের বিষধর সাপ) কিছু সাপ মৃত্যুর পরও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিষ ছড়াতে সক্ষম। আগে ধারণা করা হতো শুধু র্যাটলস্নেক বা স্পিটিং কোবরা (দূর থেকে বিষ ছুড়ে মারতে পারে এমন সাপ) এ ক্ষমতা রাখে।
কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা জানাচ্ছে, ভারতীয় মনোকলড কোবরা (Naja kaouthia) এবং ব্ল্যাক ক্রাইট (Bungarus lividus) মরে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরও কামড় দিয়ে বিষ প্রবেশ করাতে পারে।
এই গবেষণা পরিচালনা করেন আসামের নামরূপ কলেজের অধ্যাপক সুমিতা ঠাকুরের নেতৃত্বে একদল গবেষক। তারা আসামের তিনটি আলাদা ঘটনায় এর প্রমাণ পান।
গবেষণায় বল হয়, এক ব্যক্তি বাড়ির মুরগি বাঁচাতে কোবরাকে হত্যা করে মাথা কেটে ফেলেন। পরে যখন সাপের মৃতদেহ সরাতে যান, কাটা মাথা হঠাৎ তার আঙুলে কামড় বসায়। সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ব্যথা শুরু হয় এবং হাত থেকে কাঁধ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর দেখা যায় বমি, ব্যথা এবং আঙুল কালো হয়ে গেছে। চিকিৎসকেরা সাপের ছবি দেখে নিশ্চিত হন যে এটি কোবরা। অ্যান্টিভেনম ও ওষুধ দেওয়ার পর ওই ব্যক্তি ২০ দিন চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন।
ধানক্ষেতে এক কৃষক ট্রাক্টর দিয়ে কোবরা পিষে ফেলেন। কয়েক ঘণ্টা পর মৃত ভেবে সাপের শরীরের কাছে গেলে এটি তার পায়ে কামড়ায়। তার পায়ে ফোলা, ব্যথা এবং কালো দাগ পড়ে। হাসপাতালে দুই দফা বমিও হয়। যদিও স্নায়ুতে বিষক্রিয়ার লক্ষণ ছিল না, তবে ক্ষতস্থানে আলসার (পচন ধরনের ঘা) তৈরি হয়। দীর্ঘ চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হন।
এছাড়া এক বাড়িতে ঢুকে পড়া কালো একটি ক্রাইট সাপ মেরে ফেলার পর মাথা বাড়ির উঠোনে ফেলে রাখা হয়। পরে এক প্রতিবেশী মাথাটি হাতে ধরতেই সেটি তার আঙুলে কামড়ায়। তিন ঘণ্টা মৃত থাকার পরও সাপের মাথা থেকে বিষ বের হয়। কামড়ানোর পর রোগীর গিলতে সমস্যা হয়, চোখের পাতা ঢলে পড়ে। পরে তার অবস্থা এত খারাপ হয় যে শ্বাস নিতে যন্ত্র লাগাতে হয়। ২০ ভায়াল অ্যান্টিভেনম দেওয়ার পরও তিনি অসাড় হয়ে পড়েন। তবে ৪৩ ঘণ্টা নিবিড় চিকিৎসার পর অবস্থার উন্নতি হয় এবং ৬ দিনের মাথায় তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, সাপের বিশেষ ধরনের বিষগ্রন্থি ফাঁপা দাঁতের সঙ্গে যুক্ত থাকে। ফলে সাপ মরে গেলেও মাথা চেপে ধরা বা চাপ পড়লে দাঁত দিয়ে বিষ বের হতে পারে। এতে জীবিত সাপের কামড়ের মতোই মারাত্মক লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
গবেষকেরা সতর্ক করেছেন, মৃত সাপও বিপজ্জনক হতে পারে। তাই কোনো মৃত সাপ খালি হাতে ধরা বা ফেলে দেওয়ার সময় সতর্ক থাকতে হবে।