English

26 C
Dhaka
মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৬, ২০২৪
- Advertisement -

প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন-চ্যানেল আই প্রকৃতি সংরক্ষণ পদক-২০২০ পেলেন ড. মোঃ মনোয়ার হোসেন

- Advertisements -

বাংলাদেশের পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণে অসামান্য অবদানের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. মনোয়ার হোসেনকে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন-চ্যানেল আই প্রকৃতি সংরক্ষণ পদক-২০২০ প্রদান করা হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার ১৭ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের চ্যানেল আইয়ের চেতনা চত্বরে এক জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ পদক প্রদান করা হয়। বিজয়ে পঞ্চাশ আর প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের একযুগ পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশ বরেণ্য পরিবেশবিদ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

শুরুতে সিনথিয়া ও তার দলের নৃত্য পরিবেশনার মধ্যদিয়ে সূচনা হয় অনুষ্ঠানের। এরপর প্রকৃতি বিষয়ক গান নিয়ে মঞ্চে আসেন খায়রুল ও অনন্যা । এরপর প্রকৃতি নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।

প্রজাপতি, মৌমাছি, ফড়িংসহ বিভিন্ন কীটপতঙ্গ সংরক্ষক ও গবেষক ড. হোসেনের হাতে পদক তুলে দেন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। এ সময় মঞ্চে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সাবের হোসেন চৌধুরী।
পদক প্রদান শেষে মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন পদক প্রদান সম্পর্কে বলেন, প্রকৃতি রক্ষায় সরকার কাজ করে যাচ্ছে। পরিবেশ রক্ষার মুল সমস্যা হলো অধিক জনসংখ্যা। যার কারনে আমরা প্রতিনিয়ত ধ্বংস করছি বন, পাহাড় ও বন্যপ্রাণীদের। কিন্তু আমরা এই বিষয়গুলোকে ঠিক মতো বুঝতেই পাচ্ছিনা। বন ও পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন-চ্যানেল আই প্রকৃতি সংরক্ষণ পদক বিষয়ে তিনি আরো বলেন, প্রান প্রকৃতির রক্ষায় মুকিত মজুমদার বাবু দীর্ঘদিন থেকেই কাজ করে আসছে। তার এই কাজ আমাদের পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ ভুমিকা রাখছে।

পদক প্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করে ড. মো. ড. মনোয়ার হোসেন বলেন, প্রজাপতি একটি ছোট পতঙ্গ। প্রকৃতির এইসব অনুষঙ্গকে ভালোবাসতে হবে। কারন আমাদের চিরচেনা প্রকৃতিতে এসব পতঙ্গের নানা রকমের কর্মকান্ড রয়েছে। তাই এদের সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা প্রদানের দায়িত্বও আমাদের। বন্যপ্রাণী রক্ষায় আমাদের সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। আমার চলমান কাজকে আরো উৎসাহিত করবে আজকের এই পদক ।

পদক প্রদান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু। তিনি বলেন, বন্য প্রাণীরা আমাদের খাবার টেবিলে চলে এসেছে। যার কারনেই করোনার মত মহামারি মানব জাতিকে হানা দিচ্ছে। এখনো যদি আমরা প্রকৃতির প্রতি সচেতন না হই তাহলে আগামীতে আরো বড় কোন দূর্যোগ আমাদের দেখতে হবে। তাই আগামী প্রজন্মের কথা ভেবে আমাদের সবাইকে প্রকৃতিকে সচেতন ভাবেই ভালোবাসতে হবে।

অতিথি হিসাবে আরো বক্তব্য রাখেন রাখেন- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিন এবং বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইল চৌধুরী। পদক প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইমপ্রেসম গ্র“পের চেয়ারম্যান আবদুর রশীদ মজুমদার ও পরিচালনা পর্ষদ সদস্য জহির উদ্দিন মাহমুদ মামুন।

অনুষ্ঠানে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের পক্ষ থেকে এক লাখ টাকার সন্মাননা চেক এবং বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পক্ষ থেকে আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানের সনদপত্র তুলে দেওয়া হয় ড. মনোয়ার হোসেনের হাতে।
ড. মনোয়ার হোসেন পরিচিতি : জন্ম ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি জামালপুর জেলায়। পিতা তৈয়ব উদ্দিন, মা রাবেয়া খাতুন। ড. হোসেন ১৯৮৫ সালে জামালপুর সদরের সিংহজানি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি এবং ১৯৮৭ সালে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় পাশ করেন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সালে স্নাাতক এবং ১৯৯৫ সালে স্নাাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। প্রজাপতির দৃষ্টিশক্তি বিষয়ে গবেষণার জন্য তিনি ১৯৯৯ সালে জাপানের ইয়োকোহামা সিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রি-ডক্টোরাল ফেলোশিপ অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে কানাজাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে রিসার্চ ফেলো হিসেবে ড. হোসেনের কর্মজীবন শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি ২০২১ সাল থেকে জাপানের কানাজাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোলাবোরেটিভ প্রফেসর হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। বৈচিত্র্যময় কর্মজীবনে ড. হোসেনের গবেষণার মূল বিষয় প্রজাপতি, মৌমাছি, ফড়িংসহ বিভিন্ন কীটপতঙ্গ। বাংলাদেশে তিনি প্রজাপতির রেডলিস্ট তৈরির প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশে কুড়িটির অধিক নতুন প্রজাতির প্রজাপতি শনাক্ত করেছেন। কীটপতঙ্গের ডিএনএ বারকোডিং বিষয়ক প্রকল্পের উপ-প্রকল্প ব্যবস্থাপক হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দুশোর অধিক প্রজাতির জিনবিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করেছেন।
প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন : প্রকৃতি সংরক্ষণে ২০০৯ সালের ৩ ডিসেম্বর ‘প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১০ সালের ১ আগস্ট চ্যানেল আইয়ে শুরু হয় নতুন মাত্রার গবেষণা, তথ্যবহুল, সচেতনতা ও শিক্ষামূলক ধারাবাহিক প্রামাণ্য অনুষ্ঠান ‘প্রকৃতি ও জীবন’। প্রকৃতি সংরক্ষণ পদক প্রদান শুরু হয় ২০১১ সাল থেকে। গবেষণা, জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ প্রাণ-প্রকৃতি সংরক্ষণে বহুবিধ কাজ করে যাচ্ছে এই ফাউন্ডেশন। প্রকৃতিবিষয়ক অনুষ্ঠান, ত্রৈমাসিক প্রকৃতিবার্তা প্রকাশ, স্বাস্থ্যসেবা, জাতীয় দৈনিকে লেখা প্রকাশ, প্রকৃতিমেলা উদযাপন, প্রকৃতি সংরক্ষণ পদক প্রদান, জলবায়ু নিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম, গান, টেলিফিল্ম, বই, পোস্টার, লিফলেট প্রকাশ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন