English

28 C
Dhaka
শুক্রবার, জুন ৯, ২০২৩
- Advertisement -

গ্রামে যেতে চান না জার্মান ডাক্তাররা

- Advertisements -
Advertisements

গ্রামাঞ্চলে ডাক্তার নিয়োগ করতে হিমশিম খাচ্ছে জার্মান সরকার। শহর থেকে যত দূরের এলাকা, ডাক্তার পাওয়া যেন ততই কঠিন। এমন চলতে থাকলে জার্মানির গ্রামে ডাক্তারের শূন্য পদের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়াতে বেশি সময় লাগবে না।

Advertisements

ডাক্তাররা কেন গ্রামে যেতে চান না? জার্মানদের কাছে কি তাহলে চিকিৎসকের পেশা আগের মতো আর আকর্ষণীয় নয়?

অনেকের মতো স্টেফান লিশটিংহাগেনও তা মনে করেন না। স্টেফান নিজেও চিকিৎসক। চিকিৎসা করেন কোলন শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের মারিয়েনহাইডের অঞ্চলে। ১৪ হাজার মানুষের ওই এলাকায় তার বাবাও ডাক্তারি করেছেন টানা ৩২ বছর।

ইন্টারন্যাল মেডিসিন এবং গ্য্যাস্ট্রোএন্টারোলজির বিশেষজ্ঞ বাবা ২০ বছর আগে স্টেফানকে ডেকে জানিয়েছিলেন, তিনি চান এখন থেকেই তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার মতো কাউকে খুঁজে বের করে এলাকাবাসীর সেবার জন্য তাকে তৈরি করতে। সঙ্গে  জানতে চেয়েছিলেন স্টেফানের ডাক্তার হওয়ার কোনো ইচ্ছে আছে কিনা।

বাবার সঙ্গে খুব বেশি কথা হতো না স্টেফানের। ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলার সময় বাবার ব্যস্ত জীবনের স্মৃতিচারণ করতে শুরু করেন মারিয়েনহাইডের তরুণ চিকিৎসক স্টেফান লিশটিংহাগেন, ‘আমার বাবা সত্যিকার অর্থেই সকাল থেকে সন্ধ্য্যা পর্যন্ত ভীষণ ব্যস্ত থাকতেন। বাড়িতে খুব কমই দেখতাম তাকে। দেখা হলে প্রায়ই আমাকে বলতেন, তুমি তো এমন কাজ (ডাক্তারি) করতে চাও না।’

কিন্তু অবসরে যাওয়ার কয়েক বছর আগে বাবা যখন ‘ভবিষ্যতে কে এলাকাবাসীর চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে’ এ চিন্তায় ব্যস্ত, স্টেফান ঠিক করলেন বাবার দুশ্চিন্তা তিনিই দূর করবেন।

ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলার দিন ২০ বছর বয়সি এক তরুণের রোগ নির্ণয় করেছেন স্টেফান। অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়েছে তার। প্রতিবেশী এক বন্ধুর ভীষণ শ্বাসকষ্ট। তার চিকিৎসা করেছেন। এছাড়া ৯১ বছর বয়সি একজন মাথায় আঘাত পেয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। তারও চিকিৎসা করেছেন স্টেফান লিশটিংহাগেন।

এভাবে নানা বয়সি নানা ধরনের রোগের রোগী দেখে দিন কেমন করে যে কেটে যায় স্টেফান ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না। জার্মানির নিয়ম অনুযায়ী সপ্তাহে ৫০ ঘণ্টা কাজ তো করেনই, মোট কর্মঘণ্টা প্রায়ই এর চেয়ে অনেক বেশিও হয়ে যায়।

তা সপ্তাহে ৫০ ঘণ্টায় কমপক্ষে তিন হাজার ৩০০ রোগী দেখার এই ব্য্যস্ত জীবন কেমন লাগে? কখনো কি মনে হয় ডাক্তার না হলেই ভালো হতো? স্টেফান জানালেন, এ পেশায় আসায় কোনো আক্ষেপ হয় না তার, বরং গর্ব হয়, কারণ, ‘আমার কাজে আমিই তো বস, যেভাবে চাই সেভাবেই কাজ করতে পারি আমি।’

কিন্তু জার্মানির তরুণ চিকিৎসকদের অনেকেই তা মনে করেন না। ফলে অনেকেই যেতে চান না শহর থেকে দূরের কোনো গ্রামে। ফলে গ্রামাঞ্চলে ডাক্তারদের নিয়োগ দিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। এমন চলতে থাকলে ভবিষ্যতে যে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে সে বিষয়ে রবার্ট বশ ফাউন্ডেশনের গবেষকরা নিশ্চিত। তারা সম্প্রতি এক সমীক্ষায় জানিয়েছেন, জার্মানিতে প্রতি তিন জনে একজন ডাক্তারের বয়স অন্তত ৬০ বছর বা তারও বেশি। ফলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তাদের অনেকেই অবসরে যাবেন। তাদের জায়গায় সঙ্গে সঙ্গে তরুণদের নিয়োগ দিতে না পারলে কী হবে? রবার্ট বশ ফাউন্ডেশনের সমীক্ষা বলছে, ২০৩৫ সাল নাগাদ ডাক্তারদের শূন্য পদের সংখ্যা ১১০০০ ছাড়িয়ে যাবে!

এমন আশঙ্কাকে দূরে সরাতে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে জার্মান সরকার। সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী কার্ল লাউটারবাখ বয়স্কদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে দেশের সব মেডিকেল স্কুলে ৫ হাজারটি অতিরিক্ত চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র খোলার আহ্বান জানিয়েছেন।

এছাড়া গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসকের অভাব দূর করার জন্য ২৩০০ কোটি ইউরোর বিশাল এক বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এর আওতায় জার্মানির ১৬টি রাজ্যের মধ্যে নয়টিতে আগামী ১০ বছরে গড়ে তোলা হবে অসংখ্য ডাক্তার। সেই ডাক্তারদের স্কুল জীবনে খুব বেশি মেধাবী না হলেও চলবে। স্কুল জীবনের শেষ পরীক্ষায় খুব বেশি ভালো নম্বর না পেলেও ‘গ্রাম ডাক্তার’ কোটায় চিকিৎস হতে পারবেন তারা।

শুরুর দিকে স্টেফনের মনে হতো স্বল্প মেধার ছাত্র-ছাত্রীদের ডাক্তার হতে দিলে চিকিৎসা ব্যবস্থায় এর খুব খারাপ প্রভাব পড়বে। কিন্তু ইতিমধ্যে সেই ভুল ভেঙেছে তার। তাই স্টেফান মানেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বিকল্প এই গ্রাম-ডাক্তাররা নিশ্চয়ই হবেন না, তবে অনেক রোগের চিকিৎসা স্থানীয়ভাবে তারা নিশ্চয়ই করতে পারবেন এবং তাতে রোগীদের উপকারই হবে, ‘(বর্তমান পরিস্থিতিতে ) আমাদের তো কিছু একটা করতেই হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ব্যবস্থা এক সময় কোনো-না-কোনোভাবে করা যাবে, কিন্তু পারিবারিক ডাক্তার ছাড়া কাজ চলবে না। পারিবারিক চিকিৎসকের প্রয়োজনের কথাটা যে আলাদা করে কেউ এখনো বলছে না- এতে আমি  সত্যিই খুব অবাক হয়েছি।”

গ্রামাঞ্চলে পারিবারিক চিকিৎসক কতটা দরকার তা বছর দুয়েক আগে আরব্র্যুকের মানুষেরা খুব বুঝতে পেরেছিলেন। সেবার ভয়াবহ বন্যায় ভেসে গিয়েছিল অনেক বাড়ি-ঘর। মারা গিয়েছিলেন অন্তত ১৩৪ জন মানুষ। ওই সময় পাঁচজন পারিবারিক চিকিৎসকই এলাকাবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।

ক্লাউস কোর্তে তাদের একজন।

একটা স্কুল ঘরে শত শত মানুষকে চিকিৎসা দেওয়ার ওই সময়টার কথা ভাবলে এখনো গর্ব হয় তারা। তার মতে, পারিবারিক ডাক্তাররা ফুটবল মাঠের গোলরক্ষকের মতো। সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের মুহূর্তে গোলরক্ষকের মতো যাতে ‘শেষ ভরসা’র ভূমিকায় নামার জন্য জার্মানির অনেক পারিবারিক ডাক্তার দরকার বলেও মনে করেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন