English

29 C
Dhaka
শনিবার, মে ৪, ২০২৪
- Advertisement -

৬০০ পুরুষকে হত্যা করেছেন যে নারী

- Advertisements -
Advertisements

ইতিহাসের পাতা উল্টালে যুগে যুগে অনেক সিরিয়াল কিলারের নাম পাওয়া যাবে। সবচেয়ে রহস্যময় সিরিয়াল কিলার হচ্ছে জ্যাক দ্য রিপার। যার খোঁজ আজও পাওয়া যায়নি। বেছে বেছে পতিতাদের হত্যাকরতেন তিনি। শুধু হত্যা করেই শেষ হতো না, সঙ্গে সেই নারীদের শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে নিয়ে যেতেন সঙ্গে করে।

Advertisements

ধারণা করা হয়, জ্যাক দ্য রিপার একজন পুরুষ ছিলেন। তবে শুধু পুরুষরাই নন, সিরিয়াল কিলারের তকমা পেয়েছেন অনেক নারী। এর মধ্যে আছেন রানি এলিজাবেথ বার্থের নাম। কথিত আছে, তিনি কুমারী মেয়েদের হত্যা করে তাদের রক্তে গোসল করতেন এবং পান করতেন। যৌবন ধরে রাখতেই নাকি এমন ভয়ানক কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন এলিজাবেথ।

তবে ৬০০ পুরুষকে হত্যা করা সিরিয়াল কিলারের নাম জুলিয়া টোফানা। তিনি ছিলেন ইতালির বাসিন্দা। ১৬ শতাব্দীতেই তার জন্ম। তবে তার জন্ম সাল নিয়ে রয়েছে ইতিহাসে নানা বিতর্ক। জুলিয়া খুব কম বয়সে তার বাবা মাকে হারান। ১৬৩৩ সালে জুলিয়ার মা তার বাবাকে হত্যা করে। আর সে অপরাধে তারও মৃত্যতুদণ্ড হয়। সেসময় নারীদের উপর খুব অত্যাচার করা হত। অনেকটা পণ্য হিসেবেই গণ্য করা হত তাদের।

সেসময় পুরুষরা মূল্য দিয়ে বিয়ে করত। বলা যায় একপ্রকার কিনেই আনতেন স্ত্রীকে। ফলে তার সব ধরনের অধিকার ছিল স্ত্রীর সঙ্গে যা খুশি করার। এমনটাই মনে করতেন তখনকার পুরুষরা। এজন্য বিয়ের পর তারা স্ত্রীর উপর সব ধরনের অধিকারচর্চা করত। তাতে কেউ কোনো বাধা দিতে আসত না। এসময় নারীরা শারীরিক এবং মানসিক সব দিক থেকেই অত্যাচারিত হত। আর এই অত্যাচার থেকে বাঁচতেই জুলিয়ার মা তার বাবাকে হত্যা করে। তবে দুর্ভাগ্য যে সে বাঁচতে পারেনি। বরং হত্যার দায়ে তাকে ফাঁসিতে ঝুলতে হয়েছিল।

 

১৬ শতাব্দীতে কোনো বিবাহ বিচ্ছেদ হতো না। কারণ তখনকার সময়ে বিবাহ বিচ্ছেদকে অনেকটা পাপ বলেই মনে করতেন ইতালিবাসী। এর থেকে বিধবা হওয়াও তখন ভালো ছিল। বিধবাদের সবাই সাধারণ চোখে দেখলেও বিবাহ বিচ্ছেদ তারা মানতে পারত না। সমাজের আরও বেশি অত্যাচার তাদের সহ্য করতে হতো।

কিন্তু ছোট্ট জুলিয়ার মনে এই অত্যাচার গভীর দাগ কেটে গিয়েছিল। শুধু নিজের মাকেই নয় আশাপাশের সব নারীদের এমন নির্যাতনের শিকার হতে দেখেছেন। মনে মনে প্রতিশোধ নেওয়ার সংকল্প করেন। জীবিকার তাগিদে কৈশরেই একটি ফার্মেসিতে কাজ পান। সেখানে মূলত তার কাজ ছিল বিভিন্ন রোগের ওষুধ তৈরিতে সাহায্য করা। এখান থেকেই জুলিয়া বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের বিষয়ে রীতিমত দক্ষ হয়ে ওঠেন। সেসময় জুলিয়া একটি অ্যাকোয়া টোফানা নামক একটি বিষ তৈরি করেন। যা স্বাদ গন্ধহীন আর্সেনিক, সীসা এবং বিভিন্ন রাসায়নিক মিশ্রিত।

ফার্মেসির কাজ ছেড়ে দিয়ে জুলিয়া প্রসাধনী তৈরি এবং বিক্রি শুরু করে। এর আড়ালে চলতে থাকে তার বিষের ব্যবসা। জুলিয়া মূলত অত্যাচারী পুরুষদের শায়েস্তা করতেই এটি বিক্রি করতেন। তার ক্রেতারা ছিল মূলত অত্যাচারে শিকার নারীরা। যারা তাদের স্বামীদের থেকে দিনের পর দিন অত্যাচারিত হয়ে আসছিল, এখন তারা মুক্ত হতে চায়। সেসব নারীদেরকেই মূলত জুলিয়া এই বিষ বিক্রি করত।

প্রথমে তিনি গয়েন্দাগিরি করে নিশ্চিত হতেন আসলেই সেই নারী সবামীর কাছে অত্যাচারিত হন কি না। তারপর সেই নারীকে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দিতেন কীভাবে বিষপ্রয়োগ করা হবে। এই বিষের সবচেয়ে ভালো দিক হলো এর কোনো রং বা গন্ধ ছিল না। তাই সহজেই নারীরা তাদের স্বামীর খাবারে এটি অল্প করে প্রতিদিন মিশিয়ে খায়ানোর মাধ্যমে মৃত্যু ঘটাতো। এভাবেই দিনের পর দিন নারীরা জুলিয়ার কাছ থেকে বিষ নিয়ে যেত। জুলিয়া প্রথম ফ্রান্সেস্কা লা সারদা নামে এক নারীর কাছে বিক্রি করে অ্যাকোয়া টোফানা। এরপর ৫০ বছরের জীবনে ৬০০ এর বেশি পুরুষকে হত্যা করেছিলেন জুলিয়া।

জুলিয়া এবং তার মেয়ে একসঙ্গে এই ব্যবসা চালাতেন। তার সবামীর ব্যাপারে খুব বেশি জানা যায় না। অনেকেই ধারণা করেন জুলিয়া তার স্বামীকে একই বিষ দিয়ে হত্যা করেছেন। নিজের নামের সঙ্গে মিলিয়েই সারাজীবনের পরিশ্রমে জুলিয়া অ্যাকোয়া টোফানা নামক বিষটি তৈরি করেন।

জুলিয়া এত বছর ধরা ছোঁয়ার বাইরে ছিলেন পুরোপুরি। কেউ তাকে এ ব্যাপারে কখনো সন্দেহ করেনি কখনো। এমনকি যেসব নারীরা তাদের স্বামীকে হত্যা করেছেন তাদেরও সন্দেহ করা হয়নি। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, জুলিয়া অ্যাকোয়া টোফানা এমন একটি বোতলে রাখত যেটি দেখতে প্রসাধনীর অন্য সব বোতলগুলোর মতোই ছিল। আর এর গায়ে লেখা থাকত ত্বকে কীভাবে এটি ব্যবহার করা যায় তার দিক নির্দেশনা। ফলে যে কেউ দেখলে ভাবত এটি হয়ত কোনো প্রসাধনী পণ্য। তাই কেউ কখনো বুঝতেই পারেনি এই প্রসাধনীর বোতলে আছে বিষ।

তবে অবশেষে ধরা পড়েন জুলিয়া। তবে তা তার এক ক্লায়েন্টের জন্যই। একবার একজন নারী তার কাছে অ্যাকোয়া টোফানা কিনতে আসেন। জুলিয়া অন্যবারের মতো এবারো সব খোঁজ খবর করে দেখেন সত্যিই ওই নারী তার স্বামীর দ্বারা অত্যাচারিত। এরপর তাকে প্রশিক্ষণ দেন জুলিয়া কীভাবে বিষ ব্যবহার করতে হবে।

ওই নারী স্যুপের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তার স্বামীকে খেতে দেয়। এরপরই তার আবার স্বামীর প্রতি ভালোবাসার উদয় হয়। এ কারণে স্যুপ খাওয়ার আগেই তিনি তার স্বামীর হাত থেকে তা ফেলে দেন। এতে তার স্বামী রেগে যান এবং তাকে মারতে থাকেন। একসময় সে স্বীকার করে যে স্যুপে বিষ মেশানো ছিল। এরপর জুলিয়ার কথাও জানিয়ে দেয় সে। একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে জুলিয়ার সব অপকর্ম। জুলিয়া তার মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে এক গির্জায় আশ্রয় নেয়।

পুরো ইতালির মানুষের কাছে পৌঁছে যায় এ খবর। তবে একটু বেশি রং ছড়িয়ে ছড়াতে থাকে খবর। এক সময় এই খবর রূপ নেয় পুরোই অন্যদিকে। সবাই তখন বলতে থাকে জুলিয়া একটি বিষ বানিয়েছে যা পানির মধ্যে মিশিয়ে সে সবাইকে মেরে ফেলতে চায়। আর এরপর পুরো শহরের দখল নেবে সে। এরপর সব মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে জুলিয়ার উপর। একসময় ধরা পড়ে জুলিয়া আর তার মেয়ে। জুলিয়াকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

সবচেয়ে মর্মান্তিক বিষয়টি হলো, জুলিয়ার তৈরি অ্যাকোয়া টোফানা দিয়েই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। রোমের ক্যাম্পো দে ফিওরিতে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ১৬৫৯ সালে জুলিয়ার সঙ্গে তার মেয়ে এবং তার তিন কর্মচারীকেও মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। পুলিশ সেসময় জুলিয়ার তৈরি সব বিষ ধ্বংস করে দেয়। তবে জুলিয়া কীভাবে এই বিষ তৈরি করেছিল তা আজো কেউ আবিষ্কার করতে পারেনি।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন