ভারতের সাবেক আইকনিক ক্রিকেটার তার ‘সৌভাগ্যের প্রতীক’ খ্যাত স্মৃতি বিজড়িত ‘দাদার ইউনিয়ন ক্যাপটি’ দান করে দিয়েছেন।
ক্যাপটি তিনি মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (এমসিএ) অনন্য জাদুঘর ‘শারদ পাওয়ার ক্রিকেট মিউজিয়ামে’ দান করে দিয়েছেন।
শনিবার সন্ধ্যায় ভারতের আন্তর্জাতিক ওয়াংখেরে ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সুনীল গাভাস্কারের একটি প্রতিমূর্তি বা ভাস্কর্য উন্মোচন করা হয়, যাকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে যান তিনি।
এদিন মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (এমসিএ) শারদ পাওয়ার ক্রিকেট জাদুঘর উদ্বোধন করে। ওই জাদুঘরেই রাখা হবে সুনীল গাভাস্কারের ভাস্কর্যটি।
এখন থেকে জাদুঘরটির প্রশস্থ প্রবেশপথে দর্শনার্থীরা গাভাস্কার এবং শারদ পাওয়ারের পূর্ণাঙ্গ ভাস্কর্য দেখতে পাবেন। লিটল মাস্টার গাভাস্কার নিঃসন্দেহে ভারতের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন এবং এই ভাস্কর্য তার ঐতিহ্যের প্রমাণ।
এমসিএ ক্রিকেট জাদুঘরে গাভাস্কার এবং মুম্বাই এবং ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যান্য মহান খেলোয়াড়দের উপর একটি বিশেষ বিভাগ রয়েছে। মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অজিঙ্কা নায়েক জানিয়েছেন, গাভাস্কার তার খেলায়াড় জীবনে দুটি ক্যাপ পরেছিলৈন। একটি মুম্বাইয়ের জন্য এবং অন্যটি দাদার ইউনিয়নের জন্য। এ দুটোই তিনি জাদুঘরের জন্য দান করে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে ওডিআই বিশ্বকাপের সময় মাস্টার ব্লাস্টার শচীন টেন্ডুলকারের একটি বিশাল প্রতিমূর্তি উন্মোচন করা হয়। আর ভারতের সাবেক অধিনায়ক গাভাস্কার ১৯৮৩ সালের ভারতের ঐতিহাসিক বিশ্বকাপ জয়ের অংশ ছিলেন।
এরপর ১৯৮৫ সালের বিশ্ব ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে এক বিখ্যাত জয় এনে দেন গাভাস্কার। প্রতিযোগিতার ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে পরাজিত করে ট্রফি ঘরে তোলে ভারত।
এই বিশেষ অনুষ্ঠান সম্পর্কে গাভাস্কার এক বিবৃতিতে বলেন, “আমি অবশ্যই বলব যে, আমি সবসময় নিজেকে ক্রিকেট ইতিহাসের একজন ছাত্র বলে মনে করি। আমাদের খেলার সময়, কোনও ভিডিও ছিল না- কেবল বই এবং ম্যাগাজিন ছিল। আমরা পড়া, আত্মজীবনী এবং লিখিত শব্দ থেকে শিখেছি।”
“এই কারণেই এই জাদুঘরটি দেখে আমি সত্যিই অভিভূত। এমসিএ কেবল মুম্বাই ক্রিকেটের জন্য নয়, সমগ্র ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য দুর্দান্ত কাজ করেছে। তরুণ খেলোয়াড়রা এখানে সংরক্ষিত গল্প এবং ইতিহাস থেকে অনুপ্রেরণা পাবেন, যোগ করেন তিনি।
১৯৭১ সালে ২২ বছর বয়সে ভারতের হয়ে টেস্ট অভিষেক হয়ে গাভাস্কারের। তার খেলা ছিল পিচ-নিখুঁত প্রতিরক্ষার আদলে। তিনি কোনও রকম ক্লান্তি ছাড়াই ঘণ্টার পর ঘণ্টা ক্রিজে থাকতে পারতেন। তার সময়ে তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিখ্যাত পেস কোয়ার্টেটের মতো খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে ব্যাট করতেন। তিনি অ্যান্ডি রবার্টস, মাইকেল হোল্ডিং এবং আরও অনেককে সফলভাবে মোকাবেলা করেছেন।
গাভাস্কার রিচি বেনো, রিচার্ড হ্যাডলি, ইমরান খান এবং ইয়ান বোথামের মতো খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধেও জমজমাট লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন। লিটল মাস্টার ভারতের হয়ে ১২৫টি টেস্ট এবং ১০৮টি ওয়ানডে খেলেছেন, উভয় ফরম্যাটেই তিনি ১৩,০০০-এরও বেশি রান করেছেন।
ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান টেস্ট ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ১০,০০০ রান করেন। ১৯৮৭ সালে আহমেদাবাদে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিনি এই কৃতিত্ব অর্জন করেন।
১৯৭৪ সালে উত্তর প্রদেশের কানপুরের এক শিল্পপতির মেয়ে মার্শনিলকে বিয়ে করেন গাভাস্কার। এই দম্পতির একটাই ছেলে, রোহান গাভাস্কার। তার জন্ম ১৯৭৬ সালে। বাবার মতো রোহানও ক্রিকেটার। তবে তিনি বাবার মতো বড় ব্যাটসম্যান হতে পারেননি। মাত্র ১১ ওয়ানডেতেই শেষ হয়ে গেছে তার জাতীয় দলের ক্যারিয়ার। গাভাস্কার বর্তমানে ক্রিকেট বিশ্লেষক ও ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করেন।