নাসিম রুমি: সৌদি আরবের লোহিত সাগরের বুকে এক টুকরো স্বর্গীয় দ্বীপ ‘নুজুমা’। বিশ্বের ধনীদের অন্যতম প্রিয় গন্তব্য হিসাবে পরিচিতি এই দ্বীপ। সেখানেই বিলাসবহুল আবাসন গড়ে তুলছেন ফুটবল মহাতারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘ডেইলি মেইল’ জানাচ্ছে, এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মালিক এই পর্তুগিজ তারকা রিটজ-কার্লটন রেসিডেন্সের এই রিসোর্ট দ্বীপে দুটি বিশাল ভিলা কিনেছেন।
সৌদি প্রো লিগে যোগ দেয়ার পর থেকেই দেশটিতে নিজের রাজকীয় জীবনযাপনের জন্য আলোচনায় আছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। এবার জানা গেলো, সৌদি আরবের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে লোহিত সাগরে অবস্থিত অতি-বিলাসবহুল ‘নুজুমা’ দ্বীপে দুটি ভিলা কিনেছেন তিনি।
নুজুমা দ্বীপটি মূলত রিটজ-কার্লটন গ্রুপের একটি বিলাসবহুল প্রকল্প। এই দ্বীপে পৌঁছানোর একমাত্র উপায় হলো ব্যক্তিগত নৌকা বা সি-প্লেন। অর্থাৎ, আধুনিক কোলাহল থেকে দূরে এক নিভৃত অভয়ারণ্য এটি।
রোনালদোর কেনা দুটি ভিলার মধ্যে একটিতে রয়েছে তিনটি বেডরুম ও অন্যটিতে দুটি। আধুনিক স্থাপত্য শৈলীর মিশেলে তৈরি এই ভিলাগুলো সমুদ্রের নীল জলরাশির ঠিক মাঝখানে অবস্থিত।
এই দ্বীপে মাত্র ১৯টি ব্যক্তিগত ভিলা রয়েছে। অত্যন্ত সীমিত সংখ্যক আবাসন থাকায় ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখা সহজ, যা রোনালদো ও তার সঙ্গী জর্জিনা রদ্রিগেজের জন্য অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল।
এই রিসোর্টে ভিলার দাম শুরু হয় প্রায় ১৫.৫ মিলিয়ন সৌদি রিয়াল থেকে। তবে, রোনালদো ও জর্জিনা ভবিষ্যতে এই এলাকায় আরও সম্পত্তি কেনার পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে।
এই নতুন ভিলা নিয়ে উচ্ছ্বাসিত রোনালদো বলেন, যে মুহূর্তে আমি জর্জিনাকে নিয়ে এই দ্বীপে পা রেখেছি, তখনই এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। এখানে আমরা এক অদ্ভুত প্রশান্তি ও নিরাপত্তা খুঁজে পাই। এখন যেহেতু আমাদের এখানে নিজস্ব বাড়ি আছে, আমি আমার পরিবারের সাথে এখানে দারুণ কিছু সময় কাটানোর অপেক্ষায় আছি।
বর্তমানে রোনালদো ও জর্জিনার সংসারে দুই কন্যা সন্তান রয়েছে- আলানা (৭) এবং বেলা (২)। এই নির্জন দ্বীপটি এখন তাদের পরিবারের অবসরের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০২৩ সালে আল-নাসর ক্লাবে যোগ দেয়ার পর থেকে রোনালদোর জীবনযাপন যেমন বিলাসবহুল, তেমনি সৌদি আরবের পর্যটন ও সংস্কৃতির দূত হিসেবেও তিনি প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন।
শুরুতে রোনালদো রিয়াদের বিখ্যাত ফোর সিজন্স হোটেলের কিংডম সুইটে সপরিবারে থাকতেন, যার মাসিক খরচ ছিল প্রায় ২.৫ লাখ পাউন্ড। বর্তমানে তিনি রিয়াদের আল-মুহাম্মাদিয়া বা আল-নাখিল এলাকায় একটি বিশাল প্রাসাদে থাকেন, যার আনুমানিক মূল্য ১২.২ মিলিয়ন পাউন্ড। এই বাড়িতে রয়েছে:
অলিম্পিক সাইজ সুইমিং পুল এবং অত্যাধুনিক জিম।
পাঁচটি বিলাসবহুল বেডরুম এবং পরিবারের জন্য ব্যক্তিগত মুভি থিয়েটার।
বাড়ির ভেতরই শিশুদের জন্য আলাদা খেলার জায়গা এবং বিশেষ স্কুল।
নুজুমা দ্বীপটি সৌদি আরবের ‘ভিশন ২০৩০’ -এর আওতায় লোহিত সাগর প্রকল্পের অংশ। এর বিশেষত্ব হলো- সেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার নেই। দ্বীপটিতে মাত্র ১৯টি রিটজ-কার্লটন ভিলা রয়েছে। ভিলাগুলো দেখতে অনেকটা সমুদ্রের শামুকের মতো, যা প্রকৃতির সাথে মিশে থাকে।
সৌদি আরবে অবিবাহিত দম্পতিদের একসঙ্গে থাকা নিষিদ্ধ হলেও, রোনালদো ও জর্জিনার জন্য এই নিয়ম শিথিল করা হয়েছে। জর্জিনা রদ্রিগেজ জানিয়েছেন, তিনি সৌদিতে নিজেকে ‘রানি’র মতো অনুভব করেন। তিনি এখন স্থানীয় আবায়া (বোরকা জাতীয় পোশাক) এবং ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর প্রমোশন করছেন।
রোনালদো প্রায়ই রিয়াদের বিলাসবহুল রেস্তোরাঁগুলোতে ফ্রেঞ্চ বা জাপানিজ খাবার উপভোগ করেন। এছাড়াও তিনি সৌদি মরুভূমি ও ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ এলাকা যেমন ‘আল-উলা’ ভ্রমণে পছন্দ করেন।
রোনালদো আল-নাসর থেকে বছরে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ইউরো আয় করছেন। ২০২৫ সালের শেষ পর্যন্ত তার চুক্তি রয়েছে এবং তিনি জানিয়েছেন যে তিনি আল-নাসরেই অবসর নিতে পারেন। তিনি বর্তমানে বিশ্বের প্রথম ফুটবলার হিসেবে বিলিয়নেয়ার ক্লাবে প্রবেশ করেছেন।
