English

24 C
Dhaka
মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২, ২০২৫
- Advertisement -

শিশুদের খর্বাকৃতির কারণ ও প্রতিকার

- Advertisements -
ডা. সুরাইয়া বেগম: শিশুদের খর্বাকৃতি বা short stature বলতে বয়স অনুযায়ী উচ্চতা স্বাভাবিকের তুলনায় কম হওয়াকে বোঝায়। কোনো শিশুর উচ্চতা যদি তৃতীয় পারসেন্টাইলের নিচে থাকে, তবে তাকে খর্বাকৃতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। খর্বাকৃতি দুই ধরনের-স্বাভাবিক ভেরিয়েন্ট ও প্যাথলজিক্যাল। স্বাভাবিক ভেরিয়েন্ট খর্বাকৃতির কারণ বংশগত বা গঠনগত হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বংশগত কারণই প্রধান; এ ক্ষেত্রে পরিবারে মা-বাবা বা ভাইবোন খাটো হলে শিশুও খর্বাকৃতির প্রবণতা নিয়ে বেড়ে ওঠে। একে বলা হয় ফ্যামিলিয়াল খর্বাকৃতি। গঠনগত খর্বাকৃতির ক্ষেত্রে শৈশবের বৃদ্ধি স্বাভাবিকের তুলনায় ধীরগতির হয় এবং বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন দেরিতে দেখা দেয়। তবে এই ধরনের শিশু পরে প্রায় স্বাভাবিক উচ্চতায় পৌঁছায়।

অন্যদিকে, প্যাথলজিক্যাল খর্বাকৃতি বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগ, হরমোনজনিত সমস্যা, অপুষ্টি, সিনড্রোম এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে দেখা দিতে পারে। হাঁপানি, জন্মগত হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া, লিভার বা কিডনির রোগ, থ্যালাসেমিয়া, রিকেটস ও সিস্টিক ফাইব্রোসিসে আক্রান্ত শিশুদের বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। দীর্ঘদিন স্টেরয়েড গ্রহণ করলেও বৃদ্ধি কমে যায়।

Advertisements

থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি, গ্রোথ হরমোনের স্বল্পতা কিংবা কুশিং সিনড্রোমের মতো হরমোনজনিত সমস্যাও শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে। দীর্ঘমেয়াদি অপুষ্টি শিশুদের উচ্চতা বৃদ্ধিকে দমিয়ে দেয়; পর্যাপ্ত প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ না পেলে তারা পূর্ণ সক্ষমতা অনুযায়ী বাড়তে পারে না। জন্মকালীন অপুষ্টি বা ওটএজ মায়ের স্বাস্থ্যগত সমস্যা বা ভ্রƒণের জটিলতার কারণে হয়ে থাকে।

এছাড়া ডাউন সিনড্রোম, টার্নার সিনড্রোম ও অ্যাকন্ড্রোপ্লাসিয়ার মতো সিনড্রোমিক অবস্থায়ও বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। পারিবারিক অশান্তি, বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ বা দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ শিশুর শারীরিক বৃদ্ধিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

বংশগত ও গঠনগত খর্বাকৃতির ক্ষেত্রে সাধারণত চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না; যথাযথ কাউন্সেলিংই যথেষ্ট। দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত শিশুর ক্ষেত্রে মূল কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা দিলে বৃদ্ধির হার স্বাভাবিকের দিকে ফিরে আসে। হরমোনজনিত সমস্যায় থাইরয়েড হরমোন বা গ্রোথ হরমোন প্রয়োগ করা হয়। অপুষ্টি প্রতিরোধে শৈশব থেকেই শিশুর পুষ্টির প্রতি নজর দেওয়া জরুরি এবং গর্ভাবস্থায় মায়ের নিয়মিত যত্ন নিলে জন্মকালীন অপুষ্টি কমানো যায়। টার্নার সিনড্রোমে গ্রোথ হরমোন থেরাপির মাধ্যমে উচ্চতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।

মানসিক চাপজনিত সমস্যায় শিশুকে চাপমুক্ত পরিবেশে বড় করা এবং প্রয়োজনে কাউন্সেলিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে গর্ভাবস্থায় মায়ের পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা, শৈশবে সুষম খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম ও খেলাধুলার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। রোগ নির্ণয়, সঠিক চিকিৎসা, নিয়মিত চেকআপ ও বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে খর্বাকৃতি শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। খর্বাকৃতি শিশু প্রায়ই সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয় এবং হীনমন্যতায় ভোগে। তাই অভিভাবক ও সমাজের অন্যদের সচেতনতা অত্যন্ত প্রয়োজন।

Advertisements

লেখক : অধ্যাপক এবং শিশু এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট

চেম্বার : আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার

মিরপুর-৬, ঢাকা। হটলাইন : ১০৬৭২

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/3ufs
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আইন উপদেষ্টার নতুন বার্তা

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন