English

26.4 C
Dhaka
শুক্রবার, অক্টোবর ১০, ২০২৫
- Advertisement -

সংক্রামিত পশুর মাংস: স্বাস্থ্যঝুঁকি ও সতর্কতা

- Advertisements -
ইদানীং গণমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে যে দেশের উত্তরাঞ্চলে নতুন আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে অ্যানথ্রাক্স। মূলত গবাদি পশুর দেহে হওয়া রোগ এটি। কিন্তু বর্তমানে মানবদেহে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে রোগটি। নতুন করে আটজনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পাওয়া গেছে।

ওই এলাকার কিছু ফ্রিজে রাখা মাংসেও মিলেছে রোগটির জীবাণু। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাই রোগটি সম্পর্কে জানা এবং সচেতন হওয়া জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রশ্ন হলো, এই বিপজ্জনক গোশত মানুষের ফ্রিজে কিভাবে গেল, এর উত্তর হলো, মানুষ না জেনে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশুর গোশত কিনেছে। হতে পারে বিক্রেতা ও খামারিও বুঝতে পারেনি যে তার পশুটি এই রোগে আক্রান্ত ছিল।

আবার এমনও হতে পারে যে গবাদি পশু পালনকারীরা জেনে-শুনে তাদের আক্রান্ত পশুকে অল্প দামে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সেই বিপজ্জনক পশুগুলো বাজারজাত হয়ে মানুষের ঘরে ঘরে চলে গেছে, যা খেয়ে মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।

যদি কেউ না জেনে এসব গোশত খায় বা বাজারজাত করে, ইহকালীন ক্ষতি করলেও আশা করা যায় যে গুনাহের শামিল হবে না। কিন্তু জেনেশুনে এ ধরনের ক্ষতিকারক বস্তু নিজেরা খাওয়া বা বিক্রি করে অন্যদের বিপদের মুখে ফেলা কি জায়েজ হবে?

কেননা পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো এবং স্বহস্তে নিজেদের ধ্বংসে নিক্ষেপ কোরো না এবং কল্যাণকর কাজ করে যাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ কল্যাণকারীদের ভালোবাসেন।

’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৫) 

এই আয়াতটি মূলত জিহাদ ত্যাগের ব্যাপারে নাজিল হলেও বিজ্ঞ আলেমদের মতে, এর ব্যাখ্যা সার্বজনীন। তাই কারো জন্য এটা বলার সুযোগ নেই যে আল্লাহর ওপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল করে (কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা ও পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণ ছাড়া) পাহাড় থেকে ঝাঁপ দেব। অথবা তাঁর ওপর ভরসা করে বিষ পান করব। এ ধরনের আত্মঘাতীমূলক কোনো কাজই সমাজ ও ইসলামে অনুমোদিত নয়।

এবং জেনে-শুনে অন্যকে ক্ষতির সম্মুখীন করা উচিত নয়।

রাসুল (সা.) বলেছেন, কেউ যেন কারো ক্ষতি না করে এবং পরস্পর পরস্পরের ক্ষতি করবে না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৩৪১)

অন্য হাদিসে মহানবী (সা.) জেনেশুনে অন্যকে ক্ষতিকারক বস্তু চাপিয়ে দেওয়াকে ঈমানবিরোধী কাজ বলে আখ্যা দিয়েছেন। মহানবী (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য সেটাই পছন্দ করবে, যা তার নিজের জন্য পছন্দ করে। (বুখারি, হাদিস : ১৩)

অধিক মুনাফার আশায় জেনেশুনে ত্রুটিযুক্ত পণ্য অন্যকে গছিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের বরকত উঠে যায়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হাকিম ইবনে হিজাম (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ক্রেতা-বিক্রেতা একে অপর হতে আলাদা না হওয়া পর্যন্ত উভয়ের জন্য (ক্রয়-বিক্রয় বাতিল করার) স্বাধীনতা বজায় থাকে। যদি তারা দুজনেই সততা অবলম্বন করে এবং পণ্যের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করে তবে তাদের এই লেন-দেনে বরকত হয়। যদি তারা মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করে এবং দোষ-ত্রুটিগুলো গোপন করে রাখে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বারকাত তুলে নেওয়া হয়। (তিরমিজি, হাদিস : ১২৪৬)

উকবাহ বিন আমির (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, মুসলমান মুসলমানের ভাই। অতএব কোনো মুসলমানের পক্ষে তাঁর ভাইয়ের কাছে পণ্যের ত্রুটি বর্ণনা না করে তা বিক্রয় করা বৈধ নয়। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২৪৬)

পণ্যের ত্রুটি গোপন করে কারো কাছে বিক্রি করে দেওয়া ধোঁকাবাজির শামিল। আর ত্রুটিটা যদি জীবন বিধ্বংসী, তাহলে তো তার পাপের মাত্রা আরো বহু গুণে বেড়ে যায়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করবে সে আমাদের দলভুক্ত নয়] আর যে ব্যক্তি আমাদের ধোঁকা দেবে সেও আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৮৪)

অতএব আমাদের উচিত, জেনেশুনে এ ধরনের ক্ষতিকারক জিনিস আহার বা বিক্রয় থেকে বিরত থাকা। বাজার থেকে কেনার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/qxz0
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন