English

17 C
Dhaka
সোমবার, ডিসেম্বর ৮, ২০২৫
- Advertisement -

অপটিক নিউরাইটিস চোখের জটিল রোগের চিকিৎসা

- Advertisements -

অপটিক নিউরাইটিস বা অপটিক নিউরোপ্যাথি হলো চোখের দৃষ্টিস্নায়ু- অপটিক নার্ভের প্রদাহজনিত একটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ। অপটিক নার্ভ চোখের রেটিনা থেকে মস্তিষ্কে দৃষ্টিসংকেত পৌঁছে দেওয়ার একমাত্র স্নায়ুপথ হওয়ায় এ স্নায়ুতে কোনো প্রদাহ বা ক্ষতি হলে দৃষ্টি তৎক্ষণাৎ এবং উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত হয়। দৃষ্টিসংকেতে বিঘ্ন ঘটায় রোগী হঠাৎ দৃষ্টিক্ষীণতা, রঙ চিনতে অসুবিধা বা দৃষ্টির কেন্দ্রে ছায়া পড়ার মতো সমস্যা অনুভব করতে পারেন। গুরুতর ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেলে স্থায়ী দৃষ্টিহানি পর্যন্ত দেখা দিতে পারে।

অপটিক নিউরাইটিসের কারণ বহুবিধ। কিছু ক্ষেত্রে এটি টক্সিক অপটিক নিউরোপ্যাথি হিসেবে দেখা দেয়, যা বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ গ্রহণের ফলে হতে পারে। বিশেষ করে যক্ষ্মা চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইথামবিউটল অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য পরিচিত। তাই কিডনির সমস্যা থাকলে এ ওষুধের ডোজ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে নির্ধারণ করতে হয়। যক্ষ্মার আরেক ওষুধ আইসোনায়াজাইডও (আইএনএইচ) ইথামবিউটলের সঙ্গে একত্রে ব্যবহারে অপটিক নিউরোপ্যাথির ঝুঁকি বাড়াতে পারে। মৃগীর চিকিৎসায় ব্যবহৃত ভিগাবাট্রিন ও ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত মিথোট্রেক্সেটসহ কিছু ওষুধও একই ধরনের ক্ষতি ঘটাতে সক্ষম।

ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ অপটিক নার্ভের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পাশাপাশি বি১২, বি১ (থায়ামিন), বি২ (রাইবোফ্লেবিন), বি৬ (পাইরিডক্সিন), নিয়াসিন, ফলিক অ্যাসিড এবং কপার-জিঙ্কসহ গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দৃষ্টিস্নায়ু দুর্বল করে অপটিক নিউরোপ্যাথির ঝুঁকি বাড়ায়। কিছু ক্ষেত্রে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের সংক্রমণও দৃষ্টিস্নায়ুতে প্রদাহ সৃষ্টি করে। অটোইমিউন রোগ, যেমনÑ সিস্টেমিক লুপাস ইরিথেমাটোসাস (এসএলই) বা পলিআর্টারাইটিস নডোসা- অপটিক নার্ভ আক্রান্ত করতে পারে। তবু ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, টেম্পোরাল আরটারাইটিস ও মাল্টিপল স্কে¬রোসিসের মতো রোগেও দৃষ্টিস্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।

অপটিক নিউরাইটিসের লক্ষণ সাধারণত হঠাৎ করে প্রকাশ পায়। এক বা দুই চোখেই দৃষ্টি দ্রুত কমে যেতে পারে। অনেক সময় এর সঙ্গে চোখে ব্যথা, চোখ নড়াচড়া করলে অস্বস্তি বা রঙ আলাদা করে চিনতে সমস্যা দেখা দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাহ্যিক কোনো উপসর্গ না থাকায় রোগটি হঠাৎ ও অপ্রত্যাশিতভাবে দৃষ্টিহানি ঘটায়, যা রোগীকে চিন্তিত করে তোলে। দ্রুত উন্নতি না হলে বা চিকিৎসা বিলম্বিত হলে দৃষ্টিস্নায়ুর স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন, অপটিক নিউরাইটিসের অনেক ক্ষেত্রই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভালো হয়ে যায়, যদিও কিছু রোগীর সম্পূর্ণ সুস্থ হতে ছমাস থেকে এক বছর সময় লাগতে পারে।

সাধারণত স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ প্রদাহ কমাতে কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয় আর স্নায়ুর স্বাস্থ্য রক্ষায় ভিটামিন বি১২, বি৬ ও বি১সহ প্রয়োজনীয় সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়। জরুরি বা গুরুতর অবস্থায় ইনজেকশনের মাধ্যমে উচ্চমাত্রার স্টেরয়েড প্রয়োগ করতে হতে পারে। যদি দৃষ্টিস্নায়ুর প্রদাহ কোনো সংক্রমণের কারণে ঘটে, যেমনÑ সাইনাস সংক্রমণ, তাহলে সে ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা অপরিহার্য। হঠাৎ এক বা দুচোখে দৃষ্টি কমে গেলে, অন্য কোনো উপসর্গ না থাকলেও দেরি না করে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

লেখক : প্রফেসর এবং চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন

সাবেক বিভাগীয় প্রধান, চক্ষুরোগ বিভাগ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ

চেম্বার : আল-রাজী হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/twvf
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন