English

25.1 C
Dhaka
বুধবার, জুলাই ৯, ২০২৫
- Advertisement -

ডাউন সিনড্রোম রোগের লক্ষণ ও জটিলতা

- Advertisements -
ডা. ইমনুল ইসলাম ইমন: ডাউন সিনড্রোম একটি জেনেটিক রোগ, যা মানবদেহে ক্রোমোজোমের বিশেষ ত্রুটির জন্য হয়ে থাকে। সাধারণত একটি শিশু ৪৬টি (২৩ জোড়া) ক্রোমোজোম নিয়ে জন্মায়। ২১তম জোড়া ক্রোমোজোমের সঙ্গে অতিরিক্ত ক্রোমোজোম (৩য় কপি) উপস্থিত থাকলে ক্রোমোজোমের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৭টি।

এই জেনেটিক অসমতাই ট্রাইজোমি ২১ বা ডাউন সিনড্রোম। ক্রোমোজোমাল ত্রুটিজনিত রোগের মধ্যে এটি সবচেয়ে বেশি দেখতে পাওয়া যায়। বিশ্বে প্রতি ৭০০ শিশুর মধ্যে জন্ম নেয় একটি ডাউন সিনড্রোম শিশু। স্বতন্ত্র শারীরিক গঠন, শিশু বিকাশে বিলম্ব এবং বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধকতা এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

রোগের কারণ : চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই অবস্থার কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে যাদের জন্য রোগটি ঝুঁকিপূর্ণ তারা হলো বেশি বয়সে মা হয়েছেন (>৩৫ বছর) এমন নারীর সন্তানরা। এছাড়া যেসব বাবা-মায়ের ইতোমধ্যে এমন সন্তান রয়েছে, তাদের পরবর্তী সন্তানের ক্ষেত্রে এ জেনেটিক ঝুঁকি থেকে যায়।

লক্ষণ ও জটিলতা : এদের দেখতে প্রায়ই একই রকমের মনে হয়ে থাকে, আচরণ মিল থাকতে পারে, তবে প্রত্যেকে আলাদা কিছু বৈশিষ্ট থাকে। ডাউন সিনড্রোম শিশুদের কিছু স্বতন্ত্র শারীরিক বৈশিষ্ট্য থাকে। যেমন ছোট মাথা, চ্যাপ্টা মুখ, ছোট নাক, চোখের কোণ উপরের দিকে উঠানো, প্রসারিত জিহ্বা, অস্বাভাবিক ছোট কান, ছোট গলা, হাতের তালুতে একটি মাত্র রেখা এবং অপেক্ষাকৃত ছোট আঙুল, ছোট হাত-পা। এদের শরীরে মাংসপেশি দুর্বল হয় বলে শিশুগুলো খুব নরম তুলতুলে হয়। কম উচ্চতা, কানে কম শোনা, কথা বলতে দেরি, শিশু বিকাশ বাধাগ্রস্থ হওয়া ইত্যাদি জটিলতা থাকে। কিছু ক্ষেত্রে হার্টে জন্মগত ত্রুটি থাকে। নানাবিধ আন্ত্রিক সমস্যা, রক্তরোগ, খিঁচুনি, বিলম্বিত বয়ঃসন্ধি, থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা এবং কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, শরীর স্থূল হতে পারে। পাশাপাশি তাদের আইকিউ (বুদ্ধিমত্তা) সাধারণত গড় মানের নিচে থাকে। ফলে স্বাভাবিক শিক্ষার ধারা ধীরগতির হয়। কিছু শিশুকে স্বাভাবিক বিদ্যালয় শ্রেণিকক্ষে শিক্ষা দেওয়া হলেও কিছু ক্ষেত্রে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান শিক্ষা দিতে হয়। কেউ কেউ মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে উচ্চমাধ্যমিক এবং এর ওপরেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে।

পছন্দ : এসব শিশু মিশুক প্রকৃতির, খুব নাচতে পছন্দ করে, সঙ্গে গাইতে, গান শুনতে এবং ছবি আঁকতে পছন্দ করে। এদের মধ্যে খাবার অনীহা দেখা যায়। কেউ কেউ বেশি খেতে পছন্দ করে। একাডেমিক পড়াশোনার চাইতে ভিন্ন কিছু তাদের পছন্দ।

শনাক্তকরণ : প্রাথমিকভাবে শিশুর মুখের চেহারার পর্যবেক্ষণ করে এই রোগ শনাক্ত করা হয়। তার পর ক্রোমোজোম বিশ্লেষণের জন্য ক্যারিয়োটাইপিং নামক রক্ত পরীক্ষা দ্বারা ডাউন সিনড্রোম ক্রোমোজম ২১ -এর অতিরিক্ত অনুলিপি নিশ্চিত করা হয়। তাছাড়া গর্ভবস্থায় ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুর জন্মের ঝুঁকি শনাক্ত করতে কিছু স্ক্রিনিং পরীক্ষা ব্যবহার করা হয়, যা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে। গর্ভাবস্থায় ডাউন সিনড্রোম আক্রান্ত হল গর্ভপাতের পরামর্শ দেওয়া হয়।

চিকিৎসা : ডাউন সিনড্রোমের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে বিভিন্ন ধরনের সহায়ক চিকিৎসা (থেরাপি) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জন্মের পর থেকেই এই শিশুদের নিবিড় যত্নের প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বাবা-মায়ের কাউন্সিলিং অত্যন্ত জরুরি। ফিজিওথেরাপি, স্পিচ থেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি এবং জটিলতা ভিত্তিক চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে অবস্থাটিকে সামলানো যায়। এক্ষেত্রে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি।

লেখক : অধ্যাপক, শিশু বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

চেম্বার : আলোক মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর-৬, ঢাকা।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/m4xr
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আল কোরআন ও আল হাদিস

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন