IUI কী এবং কীভাবে কাজ করে : IUI (ইন্ট্রাইউটারাইন ইনসেমিনেশন) হলো এমন এক চিকিৎসা পদ্ধতি, যার মাধ্যমে স্বামীর শুক্রাণু বিশেষ পদ্ধতিতে প্রস্তুত করে স্ত্রীর জরায়ুর ভেতরে সরাসরি প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়। এ প্রক্রিয়ায় সেন্ট্রিফিউজ মেশিন ব্যবহার করে স্বামীর বীর্য থেকে সবচেয়ে সক্রিয় ও সুস্থ শুক্রাণু বেছে নেওয়া হয়। এরপর একটি ছোট সূক্ষ্ম সিরিঞ্জ বা ক্যাথেটারের সাহায্যে শুক্রাণুগুলো স্ত্রীর জরায়ুতে সরাসরি প্রবেশ করানো হয়। এতে সহজেই নিষেক (fertilization) ঘটে এবং গর্ভধারণ সম্ভব হয়।
IUI করার উদ্দেশ্য : এ পদ্ধতির মূল লক্ষ্য হলো গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেকগুণ বাড়িয়ে তোলা। এর বিশেষ উপকারী দিকগুলো হলোÑ ওষুধ বা ইনজেকশনের মাধ্যমে একাধিক ডিম্বাণু তৈরি করা হয়, যাতে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ে। মানসম্পন্ন শুক্রাণু বেছে ডিম্বাণুর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
জরায়ুমুখ জটিলতার বাইপাস : জরায়ুর মুখে যদি কোনো বাধা বা সমস্যা থাকে, তবে IUI সেই অংশ বাইপাস করে সরাসরি শুক্রাণু পৌঁছে দেয়। গর্ভধারণে বারবার ব্যর্থ হলে এ পদ্ধতিতে তা সম্ভব।
কখন IUI করা প্রয়োজন : এ পদ্ধতির উপযোগিতা নির্ভর করে রোগীর সমস্যা অনুযায়ী। নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে IUI প্রযোজ্য অবস্থাগুলো দেওয়া হলো।
IUI-এর ধাপ : মাসিক শুরুর পর স্ত্রীকে ওভুলেশন বৃদ্ধির জন্য মুখে খাওয়া ওষুধ বা ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। ৮ম ও ১২তম দিনে TVS (Transvaginal Sonography) করে ডিমের গঠন ও বৃদ্ধি দেখা হয়। যখন ডিমের মাপ ১৮ মিমি হয়, তখন HCG নামক ইনজেকশন দিয়ে ডিম ফোটানো হয়। HCG ইনজেকশনের ৩৬-৪৮ ঘণ্টা পর IUI করা হয়। IUI করার পর ২০ মিনিট বিশ্রামে থেকে রোগী বাসায় চলে যেতে পারেন। ১৪ দিন পর, যদি মাসিক না হয়, তখন B-HCG টেস্ট করে গর্ভধারণ হয়েছে কিনা নিশ্চিত হওয়া হয়। অনেক সময় একবারেই গর্ভধারণ না হলেও, ৩ থেকে ৬টি সাইকেল পর্যন্ত IUI করতে হতে পারে। প্রতি সাইকেলেই সফলতার সম্ভাবনা থাকে।
IUI-এর সফলতার হার : IUI একটি তুলনামূলকভাবে সহজ প্রক্রিয়া হলেও সফলতা কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে, বিশেষ করে শুক্রাণুর গুণগত মান ও স্ত্রীর ওভুলেশন ক্ষমতা। সাধারণভাবে- প্রথম সাইকেল ১০%-১২% সফলতা; দ্বিতীয় সাইকেল ২০%-২৫% এবং তৃতীয় সাইকেল ৩০%-৩৫%। তবে যদি শুক্রাণুর সংখ্যা ১০ মিলিয়ন/মিলি-এর বেশি হয় এবং মোটিলিটি ২০%-এর বেশি হয়, তাহলে সফলতার হার ৫০%-৬০% পর্যন্ত হতে পারে।
Intrauterine Insemination (IUI) হলো এক আধুনিক, সাশ্রয়ী ও অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকর পদ্ধতি, বিশেষ করে তা তাদের জন্য উপযোগী যারা গর্ভধারণে দীর্ঘদিন ধরে ব্যর্থ হচ্ছেন, অথচ IVF-এর মতো জটিল ও ব্যয়বহুল পদ্ধতিতে যেতে চান না। আপনি যদি দীর্ঘদিন গর্ভধারণে ব্যর্থ হয়ে থাকেন, তবে দেরি না করে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লেখক : গাইনি, প্রসূতি ও বন্ধ্যত্ব রোগ বিশেষজ্ঞ
চেম্বার : আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর-১০, ঢাকা