English

30.1 C
Dhaka
শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৫
- Advertisement -

বয়স্কদের সুষম খাদ্য

- Advertisements -

অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল: বহুদিন আগে থেকে পুষ্টিবিদরা অনুভব করছিলেন, স্বল্প বয়স্করা যে খাবার খান বয়স্কদেরও সেই খাবারই খেতে হবে যদিও তা হবে কম ক্যালরিযুক্ত। কেননা, বয়স্কদের মধ্যে শক্তিক্ষয়ের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম।

আমেরিকায় বেশ কয়েক বছর আগে এক নির্দেশিত খাদ্য তালিকায় দুটো দলের জন্য ক্যালরিক চাহিদার পরিমাপ উল্লেখ করা হয়েছিল- একটা ৫১ বছরের কম বয়সিদের জন্য, অন্যটা ৫১ থেকে ৯০ বছর পর্যন্ত। সব ব্যক্তিকেই একই খাবার খেতে বলা হয়েছে।

আবার এই নির্দেশ দানের প্রাক্কালে যে পরীক্ষা করা হয়েছে, তা পরিচালিত হয়েছে সুস্থ সবল স্বল্প বয়স্কদের ওপর। সুতরাং এখানে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে।

আমেরিকাতে নিউট্রিশন অ্যান্ড এজিং (পুষ্টি ও বার্ধক্য) নামক রচনায় বিখ্যাত পুষ্টিবিদ আরউইন রোজেনবার্গ উল্লেখ করেছেন- এ শতাব্দীর শুরুতে যেখানে মানুষের গড় বয়স ছিল ৪৭, সেখানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উত্তরোত্তর উন্নতির জন্য আমরা আজকাল ৭৪ বছর বয়সে পৌঁছেছি। ৭৪ বছর বয়সীদের সঙ্গে ৯০ বছর বয়সিদের অনেক পার্থক্য আছে। আবার ৭০ বছরের বিভিন্ন পুরুষের মধ্যেও প্রচুর পার্থক্য দেখা যায়।

তিনি বলেছেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে সব বয়স্ক ব্যক্তিই যে সুস্থ, সবল, স্বনির্ভর থাকবেন তা কিন্তু ঠিক কথা নয়। অনেক লোকও পাওয়া যাবে, যারা দুর্বল- বহুদিন ধরে অসুখে ভুগছেন, পরনির্ভর এবং বিভিন্ন কারণে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি আছেন। আজকের বিজ্ঞানীদের চ্যালেঞ্জ হওয়া উচিত এই- যেন আগামী দিনগুলোতে আরও বেশিসংখ্যক বয়স্ক লোক সুস্থ, সবল কর্মক্ষম থাকতে পারেন।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, বয়স্কদের জন্য ‘বিশেষ পুষ্টি চাহিদা’ নিয়ে যে গবেষণা চলছে তা এখনো তার শৈশবে অবস্থান করছে। তবুও আশা করছি, সত্বর এদের জন্য কোনো ‘নির্দেশিত পুষ্টি চাহিদা’ প্রকাশিত হবে। এ শতাব্দী শেষ হওয়ার আগেই আমরা হয়তো এবং বার্ধক্য জর্জরিতদের খাদ্য চাহিদা সম্বন্ধে সম্যক জানতে পারব, তথাপি এরই মধ্যে আমরা যতটুকু জানি তা হয়তো এই বয়স্ক ব্যক্তিদের অনেকখানি ভালো থাকতে সাহায্য করবে।

রোজেনবার্গ মনে করেন, নিম্নোক্ত বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে চলা উচিত-

একটা মানুষের বয়স যখন বাড়তে থাকে এবং ফলত যখন কাজের পরিমাণ কমে যেতে থাকে তখন শরীরের পেশিভরও কমে যেতে থাকে। ফলে এ ধরনের ব্যক্তির ক্যালরিক চাহিদাও স্বভাবতই কিছুটা কম। কিন্তু কম ক্যালরিযুক্ত খাবারে পুষ্টির প্রতিটি অংশ মেটানো সম্ভব নয়।

অন্যদিকে, যে শরীর বেশি কাজ করবে তার জন্য ক্যালরিক চাহিদাও বেশি হবে এবং ক্যালরিক চাহিদা অপেক্ষাকৃত যতটা বেশি হবে, ততই সুষম খাদ্য সরবরাহ করা সম্ভব হবে। অতএব মনে রাখবেন, বিশেষত বয়স্করা-আপনাদের শরীর সুস্থ, সবল, নীরোগ রাখতে অবশ্যই কাজ করতে হবে, ব্যায়াম করতে হবে।

যদিও বয়স্ককালের পেশিলুপ্তিকে বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট প্রোটিন বা আমিষ প্রয়োজন। তবুও লক্ষ্য রাখতে হবে যেন এই আমিষ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি না খাওয়া হয়। অধিক বয়সে বৃক্ক বা কিডনির কার্যকারিতা কমে যেতে থাকে। ফলে অতিরিক্ত প্রোটিন এই বৃক্কের ওপর অবর্ণনীয় চাপ সৃষ্টি করতে পারে। অতএব মেপে মেপে আপনাদের প্রোটিন খেতে হবে।

ক্লিনিকাল পরীক্ষায় দেখা গেছে, সমপরিমাণ ভিটামিন-‘এ’, যা চর্বিতে দ্রবণীয়, তরুণ ও বয়স্কদের দেওয়া হলেও দুই দলের রক্তে এটির মাত্রা দুই রকমের। অতএব, এ ভিটামিনটি বয়স্কদের শরীরে জমা হতে হতে ক্ষতিকর মাত্রায় উঠে যেতে পারে।

বয়স্কদের মধ্যে বার্ধক্যজনিত পরিবর্তনগুলোর জন্য প্রধান দায়ী হচ্ছে বিপাকীয় জারণপ্রক্রিয়া। ফলে বয়স্কদের এই জারণপ্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে এমন খাবার বেশি গ্রহণ করা উচিত। এমন দুটো খাদ্যাংশ হচ্ছে ভিটামিন-সি ও ভিটামিন-ই। দেখা গেছে, ভিটামিন-‘সি’ বয়স্কদের চোখে যে ছাবি (ক্যাটার‌্যাক্ট) পড়ে তা বন্ধ করতে পারে বা শ্লথ করতে পারে এবং ভিটামিন-ই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে।

আমরা জানি, ক্যালসিয়াম গ্রহণ করলে অস্টিওপোরোসিস-এর সম্ভাবনা কমানো যায়, বিশেষ রজঃনিবৃত্ত মহিলাদের ক্ষেত্রে। আবার আমরা এও জানি, ব্যায়াম বা কাজ হাড়কে শক্ত ও সুগঠিত রাখার শ্রেষ্ঠতম উপায়। অতএব, যে বয়স্ক ব্যক্তিরা কাজ করেন, ব্যায়াম করেন, তাদের জন্য অবশ্যই ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন বেশিই লাগবে।

বয়স্কদের মধ্যে যখন ভিটামিন বি-৬ (পাইরিডক্সিন)-এর ঘাটতি হয়, তখন তরুণদের তুলনায় এদের মস্তিষ্কে পরিবর্তন বেশি দেখা যায়। অতএব, বুড়ো মস্তিষ্ককে কর্মক্ষম রাখার জন্য এই খাদ্যাংশের ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। ৭০ বছরের পর পাকস্থলী হতে প্রায়ই কম পরিমাণ অ্যাসিড নিঃসৃত হয় এবং ফলে লৌহ, ফলিক অ্যাসিড বেশি করে গ্রহণ করতে হবে।

জনসাধারণের জ্ঞাতব্যে সার্জন জেনারেলের উক্তি উদ্ধৃত করলাম- ‘সুচিন্তিত সুপরিকল্পিত খাদ্য গ্রহণ করুন, পর্যাপ্ত পরিশ্রম করুন।’ এই উক্তির বাস্তবায়ন তখনই সম্ভব, যখন অল্প বয়স থেকেই মানুষ এর প্রয়োগ শুরু করবে। যেসব বয়স্ক লোক তাদের খাবার থেকে প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর পর্যাপ্ত পরিমাণ আহরণ করতে পারছেন না, তাদের জন্য এগুলো ভিন্নতর উপায়ে (যেমন ওষুধ) হলেও সরবরাহ করা কাম্য।

এ জন্যও পুষ্টিবিদদের সমর্থন এবং চিকিৎসকদের সহযোগিতা আবশ্যক। বুড়ো হয়ে যাওয়া মানে অথর্ব হয়ে যাওয়া নয়। এ জন্য জীবনের সপ্তম, অষ্টম ও নবম দশকেও শরীরকে সুস্থ সবল রাখার জন্য দেহ ও মনকে নব উদ্যমে গড়ে তুলুন, ভালো থাকতে চেষ্টা করুন।

তাই অবহেলা না করে এ বিষয়ে আমাদের সবাইকে যথেষ্ট সচেতন ও যত্নবান হতে হবে। এ ছাড়া কথায় আছে, প্রতিকার নয় প্রতিরোধ উত্তম।

লেখক:  অর্থোপেডিকস সার্জারি বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/6xdy
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আজকের রাশিফল

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন