English

29 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১৬, ২০২৫
- Advertisement -

মেরুদণ্ডের সমস্যার কারণ ও ঝুঁকিতে যারা

- Advertisements -
বিশ্বে প্রতি ৫ জনের চারজনই মেরুদণ্ডের সমস্যায় ভুগছে। আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৬০ ভাগ রোগী কর্মহীন থাকছেন। বিশ্বজুড়ে মেরুদণ্ডের সমস্যা এক নীরব মহামারিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ মেরুদণ্ড-সংক্রান্ত রোগে ভুগছেন।
বিশ্ব স্পাইন দিবস উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ট্রেনিং কমপ্লেক্স মিলনায়তনে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব তথ্য জানান।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢামেকের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ কামরুল আলম, বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
সভাপতিত্ব করেন নিউরোসার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. জাহিদ রায়হান। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- নিউরোসার্জারি বিভাগের সব ফ্যাকাল্টি সদস্য, রেসিডেন্ট, মেডিকেল অফিসার, নার্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢামেক নিউরোসার্জারি বিভাগের নিউরো-স্পাইন ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন। তিনি বলেন, পৃথিবীতে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ মেরুদণ্ডের সমস্যায় ভুগছেন। প্রতি পাঁচজনের চারজন মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময় মেরুদণ্ডের সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত চাকরিজীবীদের বড় একটি অংশও এই রোগে আক্রান্ত। এর ফলে প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮ কোটি ৩০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। বছরে এর চিকিৎসা ব্যয় দাঁড়ায় ৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ সমস্যায় আক্রান্তদের কারণে সৃষ্ট উৎপাদনহীনতায় যে ক্ষতি হয়, তার পরিমাণ দাঁড়ায় ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য উল্লেখ করে ডা. সালাহ উদ্দিন আরও বলেন, ২০২০ সালে শুধু কোমর ব্যথায় ৬১৯ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এবং ২০৫০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ৮৪৩ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে কোমর ও ঘাড় ব্যথার চিকিৎসায় ১৩৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে, যা ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য ব্যয়বহুল রোগের চিকিৎসার চেয়েও বেশি।
মেরুদণ্ডের রোগ বৃদ্ধির কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে স্থূলতা ও ধূমপানের পাশাপাশি পেশা একটি বড় কারণ। কম শারীরিক শ্রমের জীবনধারা, দীর্ঘ সময় ডেস্কে বসে কাজ করা অন্যতম কারণ। একইভাবে কঠোর পরিশ্রমের যেসব কাজ রয়েছে, সেসব পেশায় যুক্ত মানুষও ঝুঁকিতে আছেন। নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে মেরুদণ্ডের আঘাতজনিত রোগ (স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি) সবচেয়ে বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর সারা বিশ্বে ১৫ দশমিক ৪ মিলিয়ন মানুষ স্পাইনাল কর্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। স্বল্প আয়ের দেশে এই রোগীদের বড় অংশই মারা যান। যারা বেঁচে থাকেন, পঙ্গুত্ব হয় তাদের নিত্যসঙ্গী। এসব রোগীদের ৩৪ দশমিক ৬ ভাগ হুইলচেয়ার বা শয্যাশায়ী হয়ে যাচ্ছেন। তাদের আরেকটি বড় অংশ নিজ কর্মস্থলে ফিরতে পারেন না, প্রায় ৬০ ভাগ স্থায়ী বেকারত্বের শিকার হচ্ছেন। এটাকে জাতির জন্য বিরাট বোঝা হিসেবেই দেখতে হবে।
বাংলাদেশের পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে ডা. সালাহ উদ্দিন বলেন, দেশে প্রতিনিয়ত অটোরিকশা থেকে শুরু করে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি নিয়ে ২০১২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ৩ হাজার ২৮০ থেকে ৬ হাজার ৫৬০ জন আক্রান্ত হচ্ছেন। এর বড় অংশই ঢাকা বিভাগে এবং অধিকাংশ ট্রমাটিক বা দুর্ঘটনাজনিত আঘাতের কারণে। যাদের পিঠে অথবা কোমরে আঘাত পেয়ে দুই পা প্যারালাইসিস অবস্থায় চিকিৎসার জন্য আসেন। আর যারা ঘাড়ে আঘাত পান, তাদের হাত-পা ও প্রশ্রাব-পায়খানা নিয়ন্ত্রণ বন্ধ হয়ে যায়।
ঢামেকের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জাহিদ রায়হান বলেন, গত বছর ঢাকা মেডিকেল কলেজে মেরুদণ্ডের সমস্যা নিয়ে ২ হাজার ৩১৯ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে শিশু, কিশোর থেকে পরিণত বয়সের মানুষ রয়েছেন। আমরা ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি।
গত বছর ১ হাজার ২৪২ জনের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত অপারেশন থিয়েটার ও অ্যানেসথেশিওলজিস্ট না থাকায় আরও বেশি রোগীর অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি। প্রয়োজনীয় জনবল ও অবকাঠামো পেলে অস্ত্রোপচারের সংখ্যা দ্বিগুণ করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে এই রোগের প্রতি জনসচেতনতা এখনো কম। অনেকে কোমর ব্যথাকে গুরুত্ব দেন না, ফলে জটিলতা বাড়ে। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা নিলে অনেক রোগই প্রতিরোধযোগ্য।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, দেশে জনসংখ্যার একটি বড় অংশ ঘাড়, পিঠ ও কোমরের ব্যথায় ভুগছেন, যার প্রধান কারণ হলো- এক্সিডেন্টাল ইনজুরি, ভুল ভঙ্গিমায় বসা, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব এবং দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ও কম্পিউটার ব্যবহার।
এর আগে সকালে ঢামেক ক্যাম্পাস থেকে গণসচেতনতামূলক একটি র‌্যালি বের হয়। র‌্যালিটি মেডিকেল কলেজের শহীদ মিনার সংলগ্ন গেট থেকে শুরু হয়ে হাসপাতালের বাগান গেটে গিয়ে শেষ হয়।
এতে অংশ নেন ঢামেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল আলম, হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. আসাদুজ্জামান, নিউরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জাহিদ রায়হানসহ চিকিৎসক, ইন্টার্ন ও শিক্ষার্থীরা।
The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/ujb0
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন