English

28 C
Dhaka
বুধবার, অক্টোবর ২২, ২০২৫
- Advertisement -

শিশুর ডেঙ্গুজ্বর এবং আপনার করণীয়

- Advertisements -
ডা. মো. আতিকুর রহমান: ডেঙ্গুজ্বর একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত এডিস মশার কামড়ে ছড়ায়। এটি এক ব্যক্তি থেকে সরাসরি অন্য ব্যক্তিতে সংক্রমিত হয় না। সাধারণত প্রাথমিক সংক্রমণের সময় লক্ষণগুলো হালকা থাকে। তবে ডেঙ্গু ভাইরাসের ভিন্ন প্রজাতির সংক্রমণ পরবর্তীকালে হলে গেলে জটিলতার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। ডেঙ্গুজ্বর ছড়ায় যে এডিস মশার মাধ্যমে, সেই মশা সাধারণ মশার চেয়ে কিছুটা আলাদা। এগুলোরর দেহ ও পায়ে সাদা-কালো ডোরা দাগ থাকে। আকারে ছোট এবং শরীরে বীণার মতো চিহ্ন দেখা যেতে পারে। সাধারণত এডিস মশা দিনের বেলায়, বিশেষ করে সকালে ও সন্ধ্যার আগে কামড়ায়। এ মশা পরিষ্কার ও স্থির পানিতে ডিম পাড়ে। যেমন- ফুলের টবে জমে থাকা পানি, অব্যবহৃত টায়ার কিংবা অন্যান্য পাত্রে জমে থাকা পানি। তাই মশার বংশবিস্তার রোধে এসব স্থান পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরি।

ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণগুলো সাধারণত সংক্রমণের ৪ থেকে ১০ দিনের মধ্যে প্রকাশ পায় এবং তা হালকা থেকে শুরু করে গুরুতর হতে পারে। সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে উচ্চমাত্রার জ্বর (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত), প্রচণ্ড মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, অস্থি-সন্ধি ও মাংসপেশিতে ব্যথা, বমি বমি ভাব বা বমি, গ্রন্থি ফোলা এবং গায়ে ফুসকুড়ি ওঠা। কিছু ক্ষেত্রে ডেঙ্গুজ্বর গুরুতর আকার ধারণ করে, যা ‘গুরুতর ডেঙ্গু’ বা ‘ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর’ নামে পরিচিত। এ অবস্থায় শরীরের রক্তনালির প্লাজমা লিক করে এবং রক্তপাত হতে পারে, এমনকি রোগী মৃত্যুর ঝুঁঁকিতেও পড়ে। গুরুতর ডেঙ্গুর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে তীব্র পেটব্যথা, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, মাড়ি বা নাক দিয়ে রক্ত পড়া, অতিরিক্ত দুর্বলতা বা অস্থিরতা, পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া ও অচেতন হয়ে যাওয়া। তাই ডেঙ্গুজ্বর সন্দেহ হলে অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অন্যান্য পরীক্ষাও প্রয়োজন হতে পারে।

Advertisements

এই রোগের নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক না থাকলেও উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসার মাধ্যমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। প্রথমত, প্রচুর পরিমাণে পানি, ডাবের পানি, ওরস্যালাইন, ফলের রস ইত্যাদি পান করতে হবে, যেন শরীরে পানিশূন্যতা না হয়। দ্বিতীয়ত, জ্বর নিয়ন্ত্রণে প্যারাসিটামল দেওয়া যেতে পারে। তবে অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ এগুলো রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। তৃতীয়ত, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।

যদি রোগীর অবস্থা জটিল হয়ে পড়ে, যেমন- ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। এ ক্ষেত্রে রোগীর রক্তে প্লাটিলেট মাত্রা বিপজ্জনকভাবে কমে গেলে রক্ত বা প্লাজমা দিতে হতে পারে এবং স্যালাইনসহ অন্যান্য সহায়ক চিকিৎসাও প্রয়োজন হয়।

ডেঙ্গুজ্বরের সময় কিছু বিষয় অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন- চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ করা যাবে না। মশার কামড় থেকে সুরক্ষিত না থেকে অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে দেওয়া যাবে না এবং শরীরে পানিশূন্যতা হতে দেওয়া যাবে না। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে মশারির ব্যবহার, ঘরে মশার স্প্রে প্রয়োগ, জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিষ্কার করা, ফুলহাতা জামা-কাপড় পরিধান করা এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে মশার কামড় থেকে রক্ষা করার মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

Advertisements

লেখক : শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ

চেম্বার : আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/cyxy
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন