English

27.5 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, আগস্ট ১৪, ২০২৫
- Advertisement -

শিশুর রক্তস্বল্পতায় বাবা-মায়ের করণীয়

- Advertisements -
ডা. ইমনুল ইসলাম ইমন: শিশুর রক্তস্বল্পতা হলো, শিশুদের দেহে লোহিত রক্তকণিকা বা রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া। এ কারণে দেহের কোষগুলোয় প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পাঠানো সম্ভব হয় না। আমাদের দেশে শিশুদের রক্তস্বল্পতা বহুল পরিচিত সাধারণ একটি পুষ্টিগত সমস্যা। এক বছর বয়স থেকে বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত রক্তের হিমোগ্লোবিন প্রতি ডেসিলিটারে ১১ গ্রামের কম থাকা মানে হলো- শিশুটি রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত হয়েছে। শিশুর বৃদ্ধি বিকাশের অন্যতম বাঁধা হলো- রক্তস্বল্পতা। গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের দেশে ৪২ শতাংশ শিশু আয়রনজনিত রক্তস্বল্পতায় ভুগছে।

রোগে ভোগার কারণ : আয়রনজনিত রক্তস্বল্পতা। অন্যান্য খাদ্য উপাদানে ঘাটতি, ভিটামিন বি-১২ অথবা ফলিক এসিড। রক্তপাত হওয়া। জন্মগত রক্তরোগ থ্যালাসেমিয়া। অস্থিমজ্জা থেকে রক্তকণিকা তৈরি ব্যাহত হওয়া। কিডনিজনিত অসুখ/খাদ্যনালিজনিত অসুস্থতা।

আয়রনজনিত রক্তস্বল্পতার প্রধান কারণ : অপরিণত অথবা স্বল্প ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া নবজাতক (ওজন ২-৫ কেজির নিচে)। গরুর দুধ পান করা। কৃমি সমস্যা। দীর্ঘমেয়াদি বুকের দুধ খাওয়ানো। অপুষ্টিজনিত রোগ। ছয় মাস বয়স থেকে শিশুর পরিপূরক খাবার না খাওয়ানো।

উপসর্গ : এটি প্রাথমিকভাবে লক্ষণহীন থাকতে পারে। কিছু শিশুর মৃদু বিরক্তি বা ক্লান্তিভাব এবং গুরুতর রক্তস্বল্পতায় কিছু মারাত্মক শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সাধারণ লক্ষণ : ত্বকের ফ্যাকাশে ভাব, হাতের তালু, হাতের ভাঁজ, নখে, বা চোখের কনজাংটিভায় বেশি লক্ষ্য করা যায়। অতিরিক্ত ক্লান্তি, দৌড়াদড়ি করলে শ্বাসকষ্ট, মনে রাখার ক্ষমতা হ্রাস, বিরক্তি ভাব, খাওয়ার অনাগ্রহ, অবসন্নতা স্বাভাবিক ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধি না পাওয়া ইত্যাদি দেখা যায়। হিমোগ্লোবিন আরও কমে গেলে হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে যাওয়া ও হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। এছাড়াও বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা হ্রাস দেখা দিতে পারে। অপুষ্টিকর বস্তু খাওয়ার প্রবণতা, যেমন- মাটি, কাগজ, চক ইত্যাদি অথবা প্যাগোফাজিযা (অতিরিক্ত বরফ খাওয়ার প্রবণতা) দেখা যায়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এটি খিঁচুনি, স্ট্রোক, শ্বাস ধরে রাখা এবং বড়দের রেস্টলেস লেগ সিনড্রোমের প্রবণতা বৃদ্ধি করতে পারে।­

পরীক্ষা : রক্তস্বল্পতা নির্ণয়ে রক্তকণিকা পরিমাপ করতে হবে। এতে রক্তের হিমোগ্লোবিন, রক্তকণিকার সংখ্যা এবং আকার জানা যায়। এছাড়াও রক্তে আয়রণ, ফলিক এসিড ও ভিটামিন বি১২-এর মাত্রা পরিমাপ করা যায়।

চিকিৎসা : রক্তস্বল্পতার চিকিৎসা মূলত কারণ নির্ণয় এবং এর তীব্রতার ওপর নির্ভর করে। প্রতিরোধের জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস, রুটিন স্ক্রিনিং এবং আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।

আয়রন চিকিৎসা : সাধারণত ফেরাস সালফেট মুখ অথবা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়।

খাদ্যাভ্যাস : জন্মের পর শিশুকে মায়ের দুধ দিতে হবে। গরুর দুধের অতিরিক্ত গ্রহণ সীমিত করতে হবে। খাদ্যতালিকায় আয়রনসমৃদ্ধ খাবারে মাছ-মাংস, ডিম, কলিজা, পালংশাক ইত্যাদির পরিমাণ বাড়াতে হবে। কিশোরীর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঋতুস্রাব থাকলে আয়রন থেরাপির পাশাপাশি হরমোন থেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। আয়রন শোষণের প্রভাব ফেলে এমন উপাদান, যেমন- ক্যালসিয়াম ও ফাইবার জাতীয় খাবার, চা ইত্যাদি খেতে নিষেধ করতে হবে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে, যা আয়রন শোষণ বৃদ্ধি করে থাকে।

কৃমিনাশক ওষুধ : নিয়মিত ভাবে শিশুসহ পরিবারের সবাইকে খেতে হবে। পরিষ্কার-পরিছন্নতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

লেখক : অধ্যাপক; শিশুরোগ বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

চেম্বার : আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর-৬, ঢাকা

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/apns
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন