English

23 C
Dhaka
শুক্রবার, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৫
- Advertisement -

স্ট্রোকের ঝুঁকি শীতকালে বাড়ে কেন?

- Advertisements -

শীতকাল মানেই লেপ-কম্বলের উষ্ণতা। তবে এ পরিবেশের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে এক নীরব ঘাতক— ব্রেন স্ট্রোক। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতকালে স্ট্রোকের (Brain Stroke) প্রকোপ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। বয়স্ক এবং উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরও প্রবল। প্রশ্ন হল, ঠান্ডা আবহাওয়া কেন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়?

শীতে স্ট্রোক বাড়ার প্রধান কারণসমূহ

বিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিদ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে শীতকালে শরীরের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ার পেছনে বেশ কিছু জোরালো কারণ রয়েছে:

রক্তনালীর সংকোচন (Vasoconstriction): শীতের ঠান্ডার সঙ্গে মানিয়ে নিতে শরীর তার তাপমাত্রা ধরে রাখার চেষ্টা করে। এর ফলে রক্তনালীগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। রক্তনালী সরু হয়ে যাওয়ার কারণে রক্তের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং রক্তচাপ (Blood Pressure) দ্রুত বেড়ে যায়। এ অতিরিক্ত রক্তচাপের চাপে মস্তিষ্কের সরু ধমনী ফেটে যেতে পারে অথবা রক্ত জমাট বাঁধতে পারে।

রক্তের ঘনত্ব বৃদ্ধি: ঠান্ডা আবহাওয়ায় মানুষের রক্ত কিছুটা ঘন বা চটচটে হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় রক্তের ‘সান্দ্রতা’ বৃদ্ধি। রক্ত ঘন হয়ে গেলে ধমনীর ভেতরে ক্লট বা চাকা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, যা মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

শারীরিক পরিশ্রমের অভাব: শীতকালে অলসতা বা ঠান্ডার কারণে মানুষের শারীরিক পরিশ্রম এবং ব্যায়ামের মাত্রা কমে যায়। এর ফলে শরীরের বিপাকীয় হার কমে এবং রক্তে কোলেস্টেরল ও শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা পরোক্ষভাবে স্ট্রোকের জন্য দায়ী।

ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা: শীতকালে তৃষ্ণা কম পাওয়ার কারণে অনেকেই পর্যাপ্ত পানি পান করেন না। শরীরে জলের অভাব ঘটলে রক্ত আরও ঘন হয়ে যায় এবং রক্তচাপের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়।

লবণের ব্যবহার বৃদ্ধি: শীতকালীন বিভিন্ন মুখরোচক খাবারে লবণের ব্যবহার বেশি হয়। অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরে পানি ধরে রাখে এবং রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়।

স্ট্রোকের আগাম লক্ষণ (FAST পদ্ধতি): স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে এর লক্ষণগুলো দ্রুত চেনা জরুরি। চিকিৎসকরা একে FAST পদ্ধতির মাধ্যমে মনে রাখার পরামর্শ দেন:

F (Face): মুখ একদিকে বেঁকে যাওয়া বা হাসতে গেলে অসামঞ্জস্য দেখা দেওয়া।

A (Arms): হাত অবশ হয়ে আসা বা হাত উপরে তুলতে সমস্যা হওয়া।

S (Speech): কথা জড়িয়ে যাওয়া বা স্পষ্ট করে কথা বলতে না পারা।

T (Time): এই লক্ষণগুলো দেখা মাত্র সময় নষ্ট না করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া।

স্ট্রোক থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়

পর্যাপ্ত উষ্ণতা: শরীরকে সবসময় গরম রাখার চেষ্টা করুন, বিশেষ করে মাথা এবং কান ঢেকে রাখুন।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: নিয়মিত রক্তচাপ মাপুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন।

হালকা ব্যায়াম: ঘরের ভেতরেই নিয়মিত হালকা যোগব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি বজায় রাখুন।

সঠিক খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত লবণ ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

মনে রাখুন

শীতকাল মানেই কেবল উৎসব নয়, এটি শরীরের প্রতি বাড়তি যত্ন নেওয়ার সময়। সামান্য অসাবধানতা জীবনঘাতী হতে পারে। বিশেষ করে যারা আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগে ভুগছেন, তাদের জন্য শীতের প্রতিটি দিন সতর্ক থাকা জরুরি।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/vk1d
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন